Sunday, December 24, 2017

ক্রিসমাস ডে ও নববর্ষ এর আগমনে কাফেরদেরকে মুবারকবাদ দেওয়া যায় কি?


ক্রিসমাস ডে ও নববর্ষ এর আগমনে কাফেরদেরকে মুবারকবাদ দেওয়া যায় কি? যেহেতু ওরা আমাদের সাথে কাজ করে। ওরা যদি আমাদেরকে সম্ভাষণ জানায়, তাহলে ওদেরকে আমরা কিভাবে উত্তর দেব? এই উপলক্ষ্যে ওদের আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানে যোগদান করা বৈধ কি? উক্ত বিষয়ে সমূহে কোন একটা করে ফেললে মানুষ গোনাহগার হবে কি? যদি সদ্ব্যবহার, চক্ষুলজ্জা বা সঙ্কোচ ইত্যাদি খাতিরে করা হয়? আর এ সবে ওদের অনুরূপ করা চলবে কি?

ক্রিসমাস ডে অথবা অন্য কোন ওদের ধর্মীয় পর্ব ও খুশিতে কাফেরদের মুবারকবাদ দেওয়া সর্ববাদী সম্মতিক্রমে অবৈধ। যেমন ইবনুল কাইয়েম রাহিমাহুল্লাহ তার গ্রন্থ ‘আহকা-মু আহলিয জিম্মাহ’ তে নকল করেছেন।  তিনি বলেন,  ‘বিশিষ্ট কুফুরের প্রতীক ও নিদর্শনের ক্ষেত্রে মুবারকবাদ পেশ করা যথা সম্মতি ক্রমে হারাম। যেমন ওদের ঈদ অথবা ব্রত উপলক্ষে মুবারকবাদ দিয়ে বলা, ‘তোমার জন্য ঈদ মুবারক হোক’, অথবা ‘এই খুশিতে শুভাশিস গ্রহণ কর’ ইত্যাদি। এ কাজে যদি ও সম্ভাষণ দাতা কুফুর থেকে বেঁচে যায়, তবুও তা হারামের অন্তর্ভুক্ত। আর এটা ওদের ক্রুশ কে সিজদা করার উপলক্ষ্যে মুবারকবাদ দেওয়ার অনুরূপ। বরং এটা আল্লাহর নিকট গোনাহ গযবের দিক থেকে মদ্য পান, খুন, ব্যাভিচার ইত্যাদির উপর মুবারকবাদ দেওয়ার চেয়ে অধিক বড় ও বেশী। বহু মানুষই যাদের নিকট দ্বীনের কোন কদর নেই, তারা উক্ত পাপে পতিত হয়ে থাকে। কৃতকর্মের কুফলকে জানতে পারে না। উপরন্ত কোন মানুষকে পাপ, বিদআত অথবা কুফুরের উপর মুবারকবাদ জানিয়ে থাকে, যখন সে নিশ্চিত ভাবে আল্লাহর ক্রোধে ও অসন্তোষটির শিকার হয়ে যায়। (ইবনুল কাইয়েমের উক্তি সমাপ্ত)

কাফেরদের ধর্মীয় ঈদ পর্বে তাদেরকে মুবারকবাদ দেওয়া এই লক্ষ্যেই হারাম, যা ইবনুল কাইয়েম উল্লেখ করেছেন। যেহেতু তাতে কুফরি প্রতীকের উপর কাফেরদের প্রতিষ্ঠিত থাকাকে স্বীকার ও সমর্থন করা হয় এবং তাদের জন্য তাতে সম্মতি প্রকাশ করা হয়। যদিও সে এই কুফরি নিজের জন্য পছন্দ করে না, কিন্তু তবুও মুসলিমের জন্য কুফরির প্রতীকে সম্মতি প্রকাশ অথবা তার উপর কাউকে মুবারকবাদ জানানো বৈধ নয়। কারণ আল্লাহ তায়ালা ওতে সম্মত নন। যেমন তিনি বলেন,

“তোমরা কাফের জলে জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তাঁর  দাসদের জন্য কুফরি পছন্দ করেন না। যদি তোমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন।” (সুরা জুমার ৭ আয়াত)

তিনি আর বলেন,

“আজ আমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ অসম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন রূপে মনোনীত করলাম।” (সূরা মাইদাহ ৩ আয়াত)

সুতরাং কুফুরির উপর ওদেরকে শুভাশিস ও সাদর সম্ভাষণ জ্ঞাপন হারাম --- চাহে তারা ঐ ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী বা সঙ্গী হোক, চাহে না হোক।

যখন ওরা ওদের ঈদ উপলক্ষ্যে আমাদেরকে মুবারকবাদ জানায়, তখনও  আমরা তাদেরকে প্রত্যুত্তরে অভিবাদন জানাতে পারি না। যেহেতু তা আমাদের ঈদ নয়। আল্লাহ তায়ালা এমন ঈদ পছন্দ করেন না। কারণ, তা ওদের ধর্মে অভিনব রচিত কর্ম। অথবা বিধিসম্মত কিন্তু তা দ্বীন ইসলাম দ্বারা রহিত হওয়ে গেছে, যা দ্বীন সহ মুহাম্মদ (সঃ) কে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র সৃষ্টির প্রতি প্রেরণ করেছেন। যে দ্বীন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

“যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম চাইলে তা কখনো তাঁর নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্ত দের দলভুক্ত হবে।” (আ-লে ইমরানঃ ৮৫)

এই উপলক্ষে মুসলিমদের জন্য তাদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করাও হারাম। যেহেতু দাওয়াত গ্রহণ মুবারকবাদ জ্ঞাপন অপেক্ষা নিকৃষ্টতর। কারণ এতে ওদের ঈদে অংশগ্রহণ করা হয়ে যায়।

তদনুরূপ মুসলমানদের জন্য এই উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে, পরস্পরকে উপঢৌকন প্রদান করে, মিষ্টান্ন বিতরণ করে, বিভিন্ন প্রকার খাদ্য বণ্ঠন করে অথবা কর্মক্ষেত্রে ছুটি ঘোষণা করে কাফেরদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা বৈধ নয়। কারণ নবী (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত।” (আবু দাউদ)

সায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ তাঁর গ্রন্থ ‘ইকতিযা-উস সিরাত্বিল মুস্তাকিম, মুখা- লাফাতু আসহা -বিল জাহিম’ এ বলেন, ‘তাদের কিছু ঈদ পর্বে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বনে, তারা যে বাতিল অবিচলিত, তাতে তাদের অন্তর খুশিতে ভরে উঠার কারণ হবে এবং সম্ভবতঃ এই অনুরুপ্য তাদের সুযোগের সৎব্যবহার করতে ও দুর্বলদেরকে অধীনস্থ করতে সহায়তা করবে।’

যে ব্যক্তি উপর্যুক্ত কিছু করে ফেলেছে সে গোনাহগার হবে। চাহে সে তা শিষ্টাচারিতা, বন্ধুত্ব, চক্ষুলজ্জা বা অন্য কিছুর খাতিরে করুক না কেন। যেহেতু এমন করা আল্লাহর দ্বীনে তোষামোদ করা, কাফেরদের আত্মা মনকে সবল করে তোলা এবং তাদের ধর্ম নিয়ে গর্ব করার উপকরণের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে উসাইমিন)

গ্রন্থঃ আল-ফিকহুল আকবর
অধ্যায়ঃ মুরজিয়া মতবাদ, নেক আমল, মুজিযা-কারামত, আখিরাত, ঈমান-ইসলাম ও অন্যান্য প্রসঙ্গ


৩. ২. সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক-কুফর

আমরা শিরক বিষয়ক মূলনীতিগুলো পূর্বে উল্লেখ করেছি। তবে যেহেতু শিরক-কুফর নেক আমল নষ্ট হওয়ার মূল কারণ এবং কুরআনের ভাষায় অধিকাংশ মানুষ ঈমান থাকা সত্ত্বেও শিরকে লিপ্ত হয়, সেহেতু আমরা এখানে সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক-কুফর উল্লেখ করছি, যেন সচেতন পাঠক এগুলো থেকে আত্মরক্ষা করতে পারেন।

তাওহীদ বা রিসালাতের কোনো বিষয় অবিশ্বাস করা। যেমন আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস না করা। মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে তাঁর বান্দা, দাস ও মানুষ রূপে বিশ্বাস না করা। অথবা তাঁকে আল্লাহর অবতার, আল্লাহ তাঁর সাথে মিশে গিয়েছেন, ‘যে আল্লাহ সে-ই রাসূল’ ইত্যাদি মনে করা। অথবা তাঁকে আল্লাহর নবী ও রাসূল রূপে না মানা। তাঁকে কোনো বিশেষ যুগ, জাতি বা দেশের নবী মনে করা। তাঁর কোনো কথা বা শিক্ষাকে ভুল বা অচল মনে করা। আল্লাহর নৈকট্য, সন্তুষ্টি ও মুক্তি পাওয়ার জন্য তাঁর শিক্ষার অতিরিক্ত কোনো শিক্ষা, মত বা পথ আছে, থাকতে পারে বা প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করা।
আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এ বিশ্বের প্রতিপালন বা পরিচালনায় শরীক আছেন বলে বিশ্বাস করা। অন্য কোনো সৃষ্টি, প্রাণী, ফিরিশতা, জীবিত বা মৃত মানুষ, নবী বা ওলী সৃষ্টি, পরিচালনা, অদৃশ্য জ্ঞান, অদৃশ্য সাহায্য, রিযিক দান, জীবন দান, সুস্থতা বা রোগব্যাধি দান, বৃষ্টি দান, বরকত দান, অনাবৃষ্টি প্রদান, অমঙ্গল প্রদান ইত্যাদি কোনো প্রকার কল্যাণ বা অকল্যাণের কোনো ক্ষমতা রাখেন বা আল্লাহ কাউকে অনুরূপ ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন  বলে বিশ্বাস করা।
আল্লাহ ছাড়া কোনো নবী, ওলী, জিন বা ফিরিশতা সকল প্রকার অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, গায়েব বা দূরের ডাক শুনতে পারেন, সাড়া দিতে পারেন, সদাসর্বদা সর্বত্র বিরাজমান বা হাজির নাযির বলে বিশ্বাস করা।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ), ঈসা (আ) বা অন্য কাউকে আল্লাহর যাত (সত্তা) বা সিফাত (বিশেষণ)-এর অংশ, আল্লাহর সত্তা, বিশেষণ বা নূর থেকে (Same Substance/ Light from Light) সৃষ্ট বা জন্ম-দেওয়া  বলে বিশ্বাস করা।
কোনো বস্ত্ত, প্রাণী, কর্ম, বার, তিথি, মাস ইত্যাদিকে অশুভ বা অযাত্রা বলে মনে করা। সকল প্রকার অশুভ বা অযাত্রা বিশ্বাসই শিরক।
আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করা। আল্লাহ ছাড়া কোনো দৃশ্য বা অদৃশ্য, জীবিত বা মৃত প্রাণী বা বস্ত্তকে; যেমন মানুষ, জিন, ফিরিশতা, মাযার, কবর, পাথর, গাছ, মূর্তি, ছবি ইত্যাদিকে সাজদা করা, তাদের কাছে অলৌকিক সাহায্য, ত্রাণ, দীর্ঘায়ূ, রোগমুক্তি, বিপদমুক্তি, সন্তান ইত্যাদি প্রার্থনা করা, তাদের নামে মানত, কুরবানি বা উৎসর্গ করা শিরক। মূর্তিতে ভক্তিভরে ফুলদান, মূর্তির সামনে নীরবে বা ভক্তিভরে দাঁড়ানো এজাতীয় শিরকী বা শিরকতুল্য কর্ম।
আল্লাহর জন্য কোনো ইবাদত করে সে ইবাদত দ্বারা আল্লাহর সাথে অন্য কারো সম্মান প্রদর্শন বা সন্তুষ্টি কামনাও শিরক। যেমন আল্লাহর জন্য সাজদা করা তবে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বস্ত্তকে সামনে রেখে সাজদা করা, যেন আল্লাহর সাজদার সাথে সাথে তাকেও সম্মান করা হয়ে যায়। অথবা আল্লাহর জন্য মানত করে কোনো জীবিত বা মৃত ওলী, ফিরিশতা, জিন, কবর, মাযার, পাথর, গাছ ইত্যাদিকে মানতের সাথে সংযুক্ত করা।
আল্লাহ, তাঁর রাসূল বা তাঁর দ্বীনের মৌলিক কোনো বিষয় অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, অবজ্ঞা করা বা অপছন্দ করা কুফর। এ জাতীয় প্রচলিত কুফরীর মধ্যে অন্যতম আল্লাহর বিভিন্ন বিধান, যেমন - নামায, পর্দা, বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি, ইসলামী আইন ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ বা এগুলিকে বর্তমানে অচল বা মধ্যযুগীয় মনে করা।
ইসলামকে শুধু ব্যক্তি জীবনে পালন করতে হবে এবং সমাজ, বিচার, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলাম চলবে না বলে মনে করা, ইসলামের কোনো বিধান বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কোনো সুন্নাতের প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণা প্রকাশ করা, ওয়াজ মাহফিল, যিক্র, তিলাওয়াত, নামায, মাদ্রাসা, মসজিদ, বোরকা, পর্দা ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণা অনুভব করা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বা পূর্ববর্তী অন্য কোনো নবী-রাসূলের প্রতি সামান্যতম অবজ্ঞা প্রকাশ করা।
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সর্বশেষ নবী হওয়ার বিষয়ে সামান্যতম সন্দেহ পোষণ করা, তাঁর পরে কারো কাছে কোনো প্রকার ওহী এসেছে বা আসা সম্ভব বলে বিশ্বাস করা।
সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারকি, রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো নিয়ম, পদ্ধতি, রীতি, নীতি, আদর্শ, আইন ইত্যাদি ছাড়া অন্য কোনো নিয়ম, নীতি, মতবাদ বা আদর্শ বেশী কার্যকর, উপকারী বা উপযোগী বলে মনে করা। যুগের প্রয়োজনে তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করা। এগুলো সবই কুফর।
যে কোনো প্রকার কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী। উপরে বর্ণিত কোনো কুফুর বা শিরকে লিপ্ত মানুষকে মুসলিম মনে করা বা তাঁদের আকীদার প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী। যেমন যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সর্বশেষ নবী বলে মানেন না বা তাঁর পরে কোনো নবী থাকতে পারে বা ওহী আসতে পারে বলে বিশ্বাস করেন তাদেরকে কাফির মনে না করা কুফরী। অনুরূপভাবে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মকে সঠিক বা পারলৌকিক মুক্তির মাধ্যম বলে মনে করা, সব ধর্মই ঠিক মনে করা কুফর। অন্যান্য ধর্মের শিরক বা কুফরমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, সেগুলোর প্রতি মনের মধ্যে ঘৃণাবোধ না থাকা, অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে আন্তরিক বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা, তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের অনুকরণ করা, ক্রিসমাস (বড়দিন), পূজা ইত্যাদিতে আনন্দ- উদ্যাপন করা ইত্যাদি বর্তমান যুগে অতি প্রচলিত কুফরী কর্ম ও বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামই সর্বপ্রথম সকল ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রত্যেকেই তাদের ধর্ম পালন করবেন। তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা নিষিদ্ধ। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মুক্তি একমাত্র ইসলামের মধ্যে বলে বিশ্বাস ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘সব ধর্মই ঠিক’ বলার অর্থ সকল ধর্মকে মিথ্যা বলা এবং সকল ধর্মকে অবিশ্বাস করা; কারণ প্রত্যেক ধর্মেই অন্য ধর্মকে ‘বেঠিক’ বলা হয়েছে।
আরেকটি প্রচলিত কুফরী গণক, জ্যোতিষী, হস্তরেখাবিদ, রাশিবিদ, জটা ফকির বা অন্য কোনোভাবে ভাগ্যগণনা, ভবিষ্যৎ গণনা বা গোপন জ্ঞান দাবি করা অথবা এসকল মানুষের কথায় বিশ্বাস করা। এ ধরনের কোনো কোনো কর্ম ইসলামের নামেও করা হয়। যে নামে বা যে পদ্ধতিতেই করা হোক গোপন তথ্য, গায়েব, অদৃশ্য, ভবিষ্যৎ বা ভাগ্য গণনা বা বলা জাতীয় সকল কর্মই কুফরী কর্ম। অনুরূপভাবে কোনো দ্রব্য, পাথর, ধাতু, অষ্টধাতু, গ্রহ বা এ জাতীয় কোনো কিছু মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে অথবা দৈহিক বা মানসিক ভালমন্দ করতে পারে বলে বিশ্বাস করা শিরক।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো কোনো কর্ম, পোষাক, আইন, বিধান, রীতি, সুন্নাত, কর্মপদ্ধতি বা ইবাদত পদ্ধতিকে অবজ্ঞা বা উপহাস করা।
কোনো মানুষকে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর শরীয়তের উর্ধ্বে মনে করা বা কোনো কোনো মানুষের জন্য শরীয়তের বিধান পালন করা জরুরী নয় বলে বিশ্বাস করা কুফরী। যেমন, মারিফাত বা মহববত অর্জন হলে, বিশেষ মাকামে পৌঁছালে আর শরীয়ত পালন করা লাগবে না বলে মনে করা। অনুরূপভাবে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, হালাল উপার্জন, পর্দা ইত্যাদি শরীয়তের যে সকল বিধান প্রকাশ্যে পালন করা ফরয তা কারো জন্য গোপনে পালন করা চলে বলে বিশ্বাস করাও কুফরী।
যাদু, টোনা, বান ইত্যাদি ব্যবহার করা বা শিক্ষা করা।
ইসলাম ধর্ম জানতে-বুঝতে আগ্রহ না থাকা। ইসলামকে জানা ও শিক্ষা করাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না করা বা এ বিষয়ে  মনোযোগ না দেয়া।

আল্লাহ ও বান্দার মাঝখানে কোনো মধ্যস্থ আছে বা মধ্যস্থতা ছাড়া আল্লাহর নিকট ক্ষমালাভ, করুণালাভ বা মুক্তিলাভ সম্ভব নয় বলে বিশ্বাস করা শিরক।

গ্রন্থঃ রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল
অধ্যায়ঃ দ্বাদশ অধ্যায়- ঈদ ও তার বিভিন্ন আহকাম


ঈদ ও তার বিভিন্ন আহকাম

ঈদ হল সেই দিন পালনের নাম, যা মানুষের চিরাচরিত অভ্যাস। ঈদ মানে ফিরে আসা। যেহেতু খুশীর বার্তা নিয়ে ঈদ বাৎসরিক বারবার ফিরে আসে এবং মানুষ তা বারবার পালন করে, তাই তাকে ঈদ বলা হয়। প্রত্যেক জাতির আচরণে ঈদ পালন করার প্রথা বড় প্রাচীন। প্রত্যেক বড় বড় ঘটনা-প্রবাহকে উপলক্ষ্য করে তারই মাধ্যমে সেই স্মৃতি জাগরণ করে ঈদ (পর্ব) পালন করে থাকে এবং তাতে তারা নানা ধরনের খুশী ও আনন্দ প্রকাশ করে থাকে।

অমুসলিম জাতির পর্ব সাধারণতঃ কোন না কোন বৈষয়িক ব্যাপারের সাথে জড়িত। যেমন নওরোজ, ক্রিসমাস ডে, মাতৃদিবস, ভালোবাসা দিবস, জন্মদিন, বিবাহ-বার্ষিকী প্রভৃতি পর্ব। যেহেতু সেগুলো তাদের মনগড়া ঈদ, সেহেতু তাতে তাদের স্রেফ বস্ত্তবাদী উৎসব ও আড়ম্বরই পরিলক্ষিত হয়।

পক্ষান্তরে মুসলিম উম্মাহর ঈদ হয় কোন দ্বীনী উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে। মহান আল্লাহর কোন ইবাদত পরিপূর্ণ করে এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর বিধিবদ্ধ শরীয়ত অনুযায়ী তাঁকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে তা পালন করা হয়। কেননা, মুমিনদের এ দুনিয়ায় খুশী হল একমাত্র মাওলাকে রাজী করেই। যখন মুমিন নিজ মাওলার কোন আনুগত্য পরিপূর্ণ করে এবং তার উপর তাঁর দেওয়া সওয়াব ও পুরস্কার লাভ করে তখনই খুশীর ঢল নেমে আসে তার হৃদয়-মনে। যেহেতু সে বিশ্বাস ও ভরসা রাখে সেই আনুগত্যের উপর তাঁর মাওলার অনুগ্রহ ও ক্ষমার প্রতিশ্রুতির উপর। মহান আল্লাহ বলেন,

{قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ}

অর্থাৎ, তুমি বল, আল্লাহর এই অনুগ্রহ ও করুণা নিয়েই তাদেরকে খুশী হওয়া উচিত। আর তারা যা পূঞ্জীভূত করে তা (দুনিয়া) অপেক্ষা এটি শ্রেয়। (কুরআনুল কারীম ১০/৫৮)

  আলী (রাঃ) বলেন, ‘যেদিন আমি আল্লাহর কোন প্রকার নাফরমানি করি না, সেদিনই আমার ঈদ।’

অন্যান্য জাতির ঈদ অনেক। কারণ, সেসব ঈদ তাদের নিজস্ব মনগড়া। কিন্তু মুসলিমদের (বাৎসরিক) মাত্র দুটি ঈদ; এর কোন তৃতীয় নেই - ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। আর এ দুটি ঈদ মহান আল্লাহরই বিধান। তিনিই বান্দার জন্য পালনীয় করেছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মদ্বীনায় আগমন করলে দেখলেন, মদ্বীনাবাসীরা দুটি ঈদ পালন করছে। তা দেখে তিনি বললেন, (জাহেলিয়াতে) তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা খেলাধূলা করতে। এক্ষণে ঐ দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন।’[1]

অবশ্য এ ছাড়া একটি সাপ্তাহিক ঈদ আছে। আর তা হল জুমআহর দিন। সপ্তাহান্তে একবার ফিরে আসে এই ঈদ। অবশ্য এখানে আমাদের আলোচনা হবে ঈদুল ফিত্বর নিয়ে।([2])

[1] (সহীহ আবূ দাঊদ ১০০৪, নাসাঈ ১৫৫৫নং) ([2]( ঈদুল আযহা নিয়ে আলোচনা ‘যুল-হজ্জের তের দিন’-এ দরষ্টব্য। গ্রন্থঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
অধ্যায়ঃ বিদআত


‘ঈদে মীলাদুন নাবী’ (নবী দিবস) পালন করা বৈধ নয় কেন?

মহান আল্লাহ আমাদের দ্বীন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন তাঁর নবীর জীবদ্দশাতেই। মহান আল্লাহ বলেন, “আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ (নেয়ামত) সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্মরূপে মনোনীত করলাম।(সূরা মায়েদাহ ৩ আয়াত)
আর মহানবী (সঃ) বলেন, “ যে ব্যক্তি আমাদের এ (দ্বীন) ব্যপারে নতুন কিছু আবিষ্কার করে, সে ব্যাক্তির সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।” ৯১ (বুখারী ও মুসলিম)  “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে, যার উপর আমাদের কোন নির্দেশ নেই, সে ব্যক্তির সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।” ৯২ (মুসলিম)

ইসলামে পালনীয় ঈদ হল মাত্র দুটি; ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। তৃতীয় কোন ঈদ ইসলামে নেই। মহানবী (সঃ) নবুয়তের ২৩ বছর কাল নিজের জীবনে কোন বছর নিজের জন্মদিন পালন করে যাননি। কোন সাহাবীকে তা পালন করার নির্দেশও দেননি। তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের জন্ম মৃত্যু উপলক্ষে কোন আনন্দ অথবা শোকপালন করে যাননি।
তাঁর পরবর্তীকালে তাঁর চারজন খলীফা তাদের খেলাফতকালে রাষ্ট্রীয়ভাবে অথবা একেকভাবে নাবীদিবস পালন করে যাননি। অন্য কোন সাহাবী বা আত্মীয়ও তাঁর প্রতি এত ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে শোক পালন করেননি। তাঁদের পরেও কোন তাবেঈ অথবা তাঁদের কোন একনিষ্ঠ অনুসারী অথবা কোন ইমাম তাঁর জন্ম কিংবা মৃত্যুদিন পালন করার ইঙ্গিত দিয়ে যাননি। সুতরাং তা যে নব আবিষ্কৃত বিদআত, তা বলাই বাহুল্য।
খ্রিস্টানরা আন্দাজে ২৫ শে ডিসেম্বর যীশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব (মীলাদ, বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে) এবং তাঁদের পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্মদিন (বার্থডে) বড় আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। মুসলিমরা তাঁদের মত আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার উদ্দেশ্য এই বিদআত ওদের নিকট হতেই গ্রহণ করে নিয়েছে। তাই এরাও ওদের মত নবীদিবস (ঈদে-মীলাদুন-নাবী) এবং পরিবারের সভ্যদের (বিশেষ করে শিশুদের) ‘হ্যাপি বার্থ ডে’র অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে। অথচ তাঁদের রাসুল (সঃ) তাঁদেরকে সাবধান করে বলেন, “ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই একজন।” ৯৩ (আবুদাঊদ)

No comments:

Post a Comment