Sunday, December 31, 2017

তাহারাত (পবিত্রতা)



গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২/ তাহারাত (পবিত্রতা) ( كتاب الطهارة)
হাদিস নম্বরঃ ৫৬১


৩২. বীর্যের হুকুম

৫৬১। ইয়াইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আলকামা (রহঃ) ও আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। একবার এক ব্যাক্তি আয়িশা (রাঃ) এর মেহমান হল। অতঃপর সকালে সে তার কাপড় ধুতে লাগল। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, তুমি যদি (কাপড়ে) তা (বীর্য) দেখতে পাও তবে তোমার জন্য শুধু সে জায়গাটা ধুয়ে ফেলাই যথেষ্ট হবে। আর যদি তা না দেখ তবে তার আশে পাশে পানি ছিটিয়ে দিবে। আমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাপড় থেকে তা নখ দিয়ে ভাল করে আঁচড়ে ফেলতাম। অতঃপর তিনি তা পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ 

ছালাত জান্নাতের চাবি



গ্রন্থঃ জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত
অধ্যায়ঃ ছালাতের ফযীলত


ছালাত জান্নাতের চাবি

পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে ছালাতের ফযীলত সংক্রান্ত অনেক বর্ণনা রয়েছে। যার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা ছালাতের প্রতি মনোযোগী হতে পারে এবং বিশুদ্ধতা ও একাগ্রতার সাথে একনিষ্ঠচিত্তে ছালাত সম্পাদন করতে পারে। এক কথায় ছালাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অমীয় বাণীই যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমানে সেই অভ্রান্ত বাণী ছেড়ে যঈফ ও জাল হাদীছ, মিথ্যা, উদ্ভট ও কাল্পনিক কাহিনী শুনিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বই-পুস্তক লিখে ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এগুলো মানুষের হৃদয়ে কোন প্রভাব ফেলে না। আমরা এই অধ্যায়ে সেগুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি ছহীহ দলীলগুলোও উল্লেখ করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

ছালাত জান্নাতের চাবি :

কথাটি সমাজে বহুল প্রচলিত। অনেকে বুখারীতে আছে বলেও চালিয়ে দেয়। অথচ এর সনদ ত্রুটিপূর্ণ।

(১) عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلاَةُ وَمِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الطُّهُوْرُ.

(১) জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল ছালাত। আর ছালাতের চাবি হল পবিত্রতা।[1]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটির প্রথম অংশ যঈফ।[2] আর দ্বিতীয় অংশ পৃথক সনদে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।[3]

প্রথম অংশ যঈফ হওয়ার কারণ হল- উক্ত সনদে দু’জন দুর্বল রাবী আছে। (ক) সুলায়মান বিন করম ও (খ) আবু ইয়াহইয়া আল-ক্বাত্তাত।[4]

জ্ঞাতব্য : জান্নাতের চাবি সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহঃ) একটি অনুচ্ছেদের বিষয়বস্ত্ত আলোচনা করতে গিয়ে ওহাব ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ) থেকে যে বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। তাঁকে একদিন জিজ্ঞেস করা হল-

أَلَيْسَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لَيْسَ مِفْتَاحٌ إِلاَّ لَهُ أَسْنَانٌ فَإِنْ جِئْتَ بِمِفْتَاحٍ لَهُ أَسْنَانٌ فُتِحَ لَكَ وَإِلاَّ لَمْ يُفْتَحْ لَكَ.

‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ কি জান্নাতের চাবি নয়? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে প্রত্যেক চাবির দাঁত রয়েছে। তুমি যদি এমন চাবি নিয়ে আস যার দাঁত রয়েছে, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত খোলা হবে। অন্যথা খোলা হবে না’।[5] এছাড়াও আরো অন্যান্য হাদীছ দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয়।[6] বুঝা যাচ্ছে যে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’ জান্নাতের চাবি আর শরী‘আতের অন্যান্য আমল-আহকাম অর্থাৎ ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ঐ চাবির দাঁত।

[1]. মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩; তিরমিযী হা/৪; মিশকাত হা/২৯৪, পৃঃ ৩৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭৪, ২/৪৩; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৮৮। [2]. যঈফুল জামে‘ হা/৫২৬৫; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৬০৯; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২১২। [3]. আবুদাঊদ হা/৬১, ১/৯ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩; মিশকাত হা/৩১২, পৃঃ ৪০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯১, ১/৫১। [4]. سنده ضعيف فيه سليمن بن قرم عن أبى يحيى القتات وهما ضعيفان لسوء حفظهما -আলবানী, মিশকাত হা/২৯৪-এর টীকা দ্রঃ ১/৯৭ পৃঃ; শু‘আইব আরনাঊত্ব, তাহক্বীক্ব মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩-এর আলোচনা দ্রঃ। [5]. ছহীহ বুখারী ১/১৬৫ পৃঃ; হা/১২৩৭-এর পূর্বের আলোচনা দ্রঃ, (ইফাবা হা/১১৬৫-এর পূর্বের আলোচনা, ২/৩৫৫ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১। [6]. ছহীহ বুখারী হা/৫৮২৭, ২/৮৬৭ পৃঃ, ‘পোষাক’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৩; ছহীহ মুসলিম হা/২৮৩, ১/৬৬ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪২; মিশকাত হা/২৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯; ছহীহ মুসলিম হা/১৫৬, ১/৪৫ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২; মিশকাত হা/৩৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫

থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং ইংরেজী নববর্ষ উপলক্ষ্যে


থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং ইংরেজী নববর্ষ উপলক্ষ্যে মুসলমান নামধারী নারী ও পুরুষেরা গান বাজনা, অশ্লীলতা, মদ পান ও যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। থার্টি ফার্স্ট আগমনের পূর্বে মুসলমান ভাই ও বোনদেরকে এই সমস্ত খারাপ কাজ থেকে সতর্ক করার জন্য আমাদের পূর্বের একটা লেখা পুনরায় প্রকাশ করা হলো। আল্লাহ তাআ'লা আমাদের এবং আমাদের পরিবারকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে মুক্ত রাখুন, আমিন।
__________________________________
#গান বাজনার সাথে জড়িত অনেককেই বানর ও শূকরে পরিণত করে দেওয়া হবেঃ
এক বোন অভিযোগ করেছেন...
বিয়ের প্রোগ্রামসহ অনেক কিছুতেই আজকাল ব্যপকভাবে গান বাজনার প্রচলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এইসব প্রোগ্রামে এতোটাই ঘৃণ্য কার্যকপাল হচ্ছে যে, আজকাল মুসলিম মেয়েরাও এইসব অনুষ্ঠানে নাচানাচি করছে...
গান বাজনা, নাচ এইসবের সাথে যারা জড়িত তাদের ভয় করা উচিত আল্লাহ তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দিতে পারেন (নাউযুবিল্লাহ)!
এসম্পর্কে আমাদের আগের পোস্ট আবার দেওয়া হলোঃ
পাপ কাজকে বান্দাদের জন্য আকর্ষণীয় ও লোভনীয় করে দেওয়া হয়েছে, কারণ এই পাপ কাজের আড়ালেই রয়েছে “জাহান্নাম”।
পাপ কাজ করে যদি সাময়িক আনন্দ না থাকতো তাহলে হয়তো দুনিয়ার কেউই পাপ কাজে লিপ্ত হতো না। কিন্তু এই সাময়িক আনন্দের পেছনে রয়েছে অনেক দুঃখ...আর জাহান্নামতো হচ্ছে উত্তপ্ত অগ্নি...
তবে অনেক পাপ আছে যেইগুলোর শাস্তি দুনিয়াতেই দেওয়া হয়...
এইরকম একটা উদাহরণ হচ্ছে জেনা-ব্যভিচারের শাস্তি এইডস...এইডস যে কি ভয়ংকর একটা আযাব তা জানার জন্য আপনার কোনো এইডস রোগী দেখে আসতে পারেন। তার রোগের কষ্ট না, শুধু তার মানসিক কষ্টটাই যে কি মারাত্মক...লা হা’উলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ...
এইরকম গান-বাজনা, নৃত্য এইগুলোর কি কোনো শাস্তি দুনিয়াতে দেওয়া হবে??
উত্তর হচ্ছে, হ্যা হবে...এইরকম অনেকের নিকৃষ্ট শাস্তি দুনিয়াতেই হবে। আর পরকালের শাস্তিতো আরো মারত্মক। এইজন্য আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
“ইন্না বাতসা রাব্বিকা লাশাদিদ”।
নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।
সুরা আল-বুরুজ।
কি শাস্তি হবে বলার আগেই বলে নেই প্রচলিত গান-বাজনা/হলুদ/পার্টি ইত্যাদি প্রোগ্রামগুলোতে যা থাকে...
১. উদ্দাম-উশৃংখলার গান-বাজনা, যা মানুষকে উন্মত্ত করে দেয়। এগুলো মানুষকে এতোটাই উন্মত্ত করে দেয় যে, নারীরা লাজ-শরম ভুলে নিজেদেরকে পুরুষদের কাছে বিলিয়ে দিতে দ্বিধা করেনা।
২. নর্তকী...পুরুষদের জন্য প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ফাহেশা নারী। টাকার গোলাম কিছু প্রফেশনাল নারী, যারা আসলে একজন পতিতার চেয়ে বেশি কিছুনা, এদেরকে নিয়ে আসা হয় লম্পট-বেদ্বীন পুরুষদেরকে আকর্ষণ করার জন্য। আর পরিবেশ এমন হয়, অনেকে সাধারণ মেয়েরাও এই সমস্ত নর্তকীদের সাথে পুরুষদের মনোরঞ্জনে নেমে পড়ে।
৩. গায়িকা...কেয়ামতের একটা লক্ষণ, গায়িকার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। কারণ নারীদের কন্ঠ লক্ষ লক্ষ যুবকের চরিত্রের শুদ্ধতা নষ্ট করে দিতে পারে।
৪. বিভিন্ন মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্য...
এই পার্টিগুলো অনেক তরুণের নেশা ধরার স্থান। ফ্রীতে দামী নেশাদ্রব্য খেয়ে বাকি জীবন নেশার পেছনেই ধ্বংস করে।
আপনারা জানেন কিনা জানিনা, কেয়ামতের ছোট যে লক্ষণগুলো হাদীসে বলা হয়েছে তার বেশিরভাগই ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে।
এইরকম দুইটা আশ্চর্য নিদর্শন আমি আপনাদেরকে আবার স্মরণ করিয়ে দেই।
১. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা একে-অপরকে হত্যা করবে। এমনকি মানুষ তার প্রতিবেশি, তার ভাইয়ের ছেলে এবং আত্মীয়দেরকে হত্যা করবে।”
ইবনে মাজাহঃ ২/৩২৯৮।
২-১ দিন আগে পত্রিকাতে দেখলাম নিকটাত্মীয় কেনো, এক নরপশু তার নিজের বাবাকে হত্যা করেছে। এর আগেও বহু খবর এসেছে ছেলে-মেয়ে বাবা বা মাকে হত্যা করেছে। আর এক মেয়েতো তার নিজের বাবা-মা উভয়কে হত্যা করে সবার কাছেই পরিচিত হয়ে গেছে। ব্যপারটা ২-১টা না, এমন অনেকই ঘটছে বর্তমান অধঃপতিত মুসলিম সমাজে।
২. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক হাদীসে বলেছেন, “তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদের পদে পদে অনুসরণ করবে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে জেনা করে তাহলে তোমরাও তা করবে (নাউযুবিল্লাহ)।”
বাযযারঃ ১২১০৫।
***এই হাদীসের বাস্তবায়ন ইতিমধ্যেই হয়েছে। মায়ের সাথে না হলেও নিজের পরিবারের সাথে জেনা/ধর্ষণে লিপ্ত হয়েছে এমন কিছু নরপশুর কথা আমাদের জানা আছে। এছাড়া বিভিন্ন ফতোয়া ও ইসলামী জিজ্ঞাসার সাইটে এই সম্পর্কে বাস্তব ঘটনা নিয়ে ফতোয়াও জানতে চাওয়া হচ্ছে আজকালকার যুগে...ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
কেয়ামত কবে হবে কেউ জানেনা, কিন্তু এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় খুব বেশি দেরী নেই...
যাইহোক এইবার আসি মূল আলোচনায়...গান বাজনার পার্টির শাস্তি...
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“কেয়ামতের আলামত হচ্ছে (দ্বীনি) জ্ঞান উঠে যাওয়া, অজ্ঞতার সয়লাব হওয়া, মদ পান করা, ব্যভিচার ব্যপকতা লাভ করা।”
মুসলিম, কিতাবুল ইলম।
শেষ জামানার লক্ষণ হচ্ছেঃ
“গান-বাদ্য, গায়িকা ও মদপানকে হালাল মনে করা হবে।”
ত্বাবারানি।
এই সবগুলোই এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এইগুলোর শাস্তিঃ
“...ভূমিধ্বসে ধ্বংস করে দেওয়া হবে...মানুষের আকৃতি পরিবর্তন করা হবে...”
ত্বাবারানি।
কি আকৃতি পরিবর্তন করা হবে?
মানুষকে শূকর ও বানরে পরিণত করে দেওয়া হবে পূর্বে যেমন ইয়াহুদীদেরকে করা হয়েছিলোঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। তাদের মাথার উপরে গান-বাজনা ও নারী-নৃত্য চলতে থাকবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন। আর তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দেবেন।”
ইবনে মাজাহঃ ২/৩২৪৭।
!!!বর্তমানে আমরা ঠিক এটাই দেখতে পাচ্ছিঃ এনার্জি ড্রিংকস, স্পিরিচিউয়াল ড্রিংকস, ইয়াবা, আফিম ইত্যাদি নামে নেশা করা হচ্ছে...মাথার উপরে মাইকে গান বাজনা হচ্ছে...স্টেজে নারীরা অশ্লীল বেহায়া নৃত্য করছে। বেনামাযি, কাফের, মুশরেকদের সাথে অনেকে নামাযি, আধা হিজাবী, দুর্বল ঈমানদার ভাই-বোনও এতে জড়িয়ে পড়ছে।
এদের শাস্তি স্বরূপ একদল লোকদেরকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের দেশে ইতিমধ্যে যে বিল্ডিং ধ্বসে মারাত্মক দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে...নিঃসন্দ
েহে এইগুলো আল্লাহর আজাব-গজবের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। এমন হওয়াও অসম্ভব না যে – গান, গায়িকা

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কিসের তৈরী


হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কিসের তৈরী
♤♤♤♤♤♤♤♤♤♤♤♤♤♤♤♤♤♤
প্রথমেই আমার  অনুরোধ পুরাই লেখা টি পড়ার জন্য  ।

এবং পুরাই লেখা না পড়ে কেউ আজেবাজে কমেন্ট করবেন না ।
এই আয়াতের প্রতি যদি বিশ্বাস  করতে না পারেন তাহলে   । মুসলিম থেকে  আপনার  নাম খাটা যাবে ।

♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡
هُوَ الَّذِىۡ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ طِيۡنٍ ثُمَّ قَضٰىۤ اَجَلاً‌ؕ وَّاَجَلٌ مُّسَمًّى عِنۡدَهٗ‌ ثُمَّ اَنۡتُمۡ تَمۡتَرُوۡنَ‏﴾

 তিনিই তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। তারপর তোমাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন জীবনের একটি সময়সীমা এবং আর একটি সময়সীমাও আছে, যা তাঁর কাছে স্থিরীকৃত, কিন্তু তোমরা কেবল সন্দেহেই লিপ্ত রয়েছে।

সূরা আনআম   আয়াত  ( ২ )
◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇
قُلۡ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثۡلُكُمۡ يُوۡحٰٓى اِلَىَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ‌ۚ فَمَنۡ كَانَ يَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلاً صَالِحًا وَّلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا

 হে মুহাম্মাদ! বলো, আমি তো একজন মানুষ তোমাদেরই মতো, আমার প্রতি অহী করা হয় এ মর্মে যে, এক আল্লাহ‌ তোমাদের ইলাহ, কাজেই যে তার রবের সাক্ষাতের প্রত্যাশী তার সৎকাজ করা উচিত এবং বন্দেগীর ক্ষেত্রে নিজের রবের সাথে কাউকে শরীক করা উচিত নয়।

সূরা কাহাফ আয়াত  ( ১১০)
◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇
اِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلٰٓٮِٕكَةِ اِنِّىۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ طِيۡنٍ‏﴾

 যখন তোমার রব ফেরশ্‌তাদেরকে বললো,আমি মাটি দিয়ে একটি মানুষ তৈরি করবো।

সূরা সোয়াদ আয়াত  ( ৭১)
◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇

وَمَاۤ اَرۡسَلۡنَا قَبۡلَكَ اِلَّا رِجَالاً نُّوۡحِىۡۤ اِلَيۡهِمۡ‌ فَسۡـَٔلُوۡۤا اَهۡلَ الذِّكۡرِ اِنۡ كُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ﴾

 আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বেও আমি মানুষদেরকেই রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের কাছে আমি অহী পাঠাতাম।  তোমরা যদি না জেনে থাকো তাহলে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞেস করো।

সূরা আমবিয়া আয়াত  ( ৭)
◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇
وَاِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلٰۤٮِٕكَةِ اِنِّىۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ صَلۡصٰلٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ‏﴾

 তারপর তখনকার কথা স্মরণ করো যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি শুকনো ঠন্‌ঠনে পচা মাটি থেকে একটি মানুষ সৃষ্টি করছি

সূরা হিজর আয়াত  ( ২৮)
◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇

وَمِنۡ اٰيٰتِهٖۤ اَنۡ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنۡتُمۡ بَشَرٌ تَنۡتَشِرُوۡنَ‏﴾

 তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে তারপর সহসা তোমরা হলে মানুষ, (পৃথিবীর বুকে) ছড়িয়ে পড়ছো।

সূরা রুম আয়াত  ( ২০ )
◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇
خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصٰلٍ كَالۡفَخَّارِۙ‏﴾
মাটির শুকনো ঢিলের মত পচা কাদা থেকে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।

﴿ وَخَلَقَ الۡجَآنَّ مِنۡ مَّارِجٍ مِّنۡ نَّارٍ‌ۚ﴾

আর জিনদের সৃষ্টি করেছেন আগুনের শিখা থেকে।

সূরা রহমান আয়াত  (১৪/১৫)
♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡♡

هُوَ الَّذِىۡ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَةٍ ثُمَّ مِنۡ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخۡرِجُكُمۡ طِفۡلاً ثُمَّ لِتَبۡلُغُوۡۤا اَشُدَّكُمۡ ثُمَّ لِتَكُوۡنُوۡا شُيُوۡخًاؕ وَمِنۡكُمۡ مَّنۡ يُّتَوَفّٰى مِنۡ قَبۡلُ وَلِتَبۡلُغُوۡۤا اَجَلاً مُّسَمًّى وَلَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ‏﴾

 তিনিই তো সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর শুক্র থেকে। তারপর রক্তের পিণ্ড থেকে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে শিশুর আকৃতিতে বের করে আনেন। এরপর তিনি তোমাদেরকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করেন যাতে তোমরা নিজেদের পূর্ণ শক্তিতে উপনীত হতে পারো। তারপর আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করেন যাতে তোমরা বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হও। তোমাদের কাউকে আগেই ফিরিয়ে নেয়া হয়। এসব কাজ করা হয় এজন্য যাতে তোমরা তোমাদের নির্ধারিত সময়ের সীমায় পৌঁছতে পারো  এবং যাতে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারো।

সূরা মুমিন আয়াত  ( ৬৭)
◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ اَنۡ يُّؤۡمِنُوۡۤا اِذۡ جَآءَهُمُ الۡهُدٰٓى اِلَّاۤ اَنۡ قَالُوۡۤا اَبَعَثَ اللّٰهُ بَشَرًا رَّسُوۡلاً﴾

 লোকদের কাছে যখনই কোন পথনির্দেশ আসে তখন তাদের একটা কথাই তাদের ঈমান আনার পথ রুদ্ধ করে দেয়। কথাটা এই যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন?”

সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত  ( ৯৪)
◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇
وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ سُلٰلَةٍ مِّنۡ طِيۡنٍ‌ۚ‏﴾

আমি মানুষকে তৈরী করেছি মাটির উপাদান থেকে,

সূরা মুমিনুম আয়াত  (১২)
◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇◇
সকল মানব আদম সন্তন আর আদম সন্তান মাটির তৈরী,রাসূল সাঃ আদম সন্তান ছিল?

♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧

#হাদিসটি পড়ুন বুঝতে পারবেন

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ مَرْوَانَ الرَّقِّيُّ، حَدَّثَنَا الْمُعَافَى، ح وَحَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ الْهَمْدَانِيُّ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، - وَهَذَا حَدِيثُهُ - عَنْ هِشَامِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ وَفَخْرَهَا بِالآبَاءِ مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ وَفَاجِرٌ شَقِيٌّ أَنْتُمْ بَنُو آدَمَ وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ لَيَدَعَنَّ رِجَالٌ فَخْرَهُمْ بِأَقْوَامٍ إِنَّمَا هُمْ فَحْمٌ مِنْ فَحْمِ جَهَنَّمَ أَوْ لَيَكُونُنَّ أَهْوَنَ عَلَى اللَّهِ مِنَ الْجِعْلاَنِ الَّتِي تَدْفَعُ بِأَنْفِهَا النَّتْنَ ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)

তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তোমাদের জাহিলী যুগের  মিথ্যা  অহংকার ও  পূর্বপুরুষদেরকে  নিয়ে গর্ব করার প্রথাকে বিলুপ্ত করেছেন। মু’মিন হলো আল্লাহভীরু আর পাপী হলো দুর্ভাগা। তোমরা সকলে আদম সন্তান আর আদম (আঃ) মাটির তৈরী। লোকদের উচিৎ বিশেষ গোত্রের ভুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র  করে অহংকার না করা। এখন তো তারা জাহান্নামের কয়লায় পরিণত হয়েছে। অন্যথায় তোমরা মহান আল্লাহর নিকট ময়লার সেই কীটের চেয়েও জঘন্য গণ্য হবে যে তার নাক দিয়ে ময়লা ঠেলে নিয়ে যায়।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫১১৬
হাদিসের মান: হাসান হাদিস।

Friday, December 29, 2017

আকীকার ক্ষেত্রে নাবী (সাঃ)-এর সুন্নাত



গ্রন্থঃ মুখতাসার যাদুল মা‘আদ
অধ্যায়ঃ অনুচ্ছেদ সমুহের সূচী ও বিবরন


আকীকার ক্ষেত্রে নাবী (সাঃ)-এর সুন্নাত

মুআত্তা ইমাম মালেক গ্রন্থে এসেছে, ইমাম মালেক (রহঃ) কে আকীকাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন- আমি আকীকাহ শব্দটি পছন্দ করিনা। কারণ আকীকাহ শব্দটি আরবী عق শব্দ হতে গৃহীত। আক্কা অর্থ নাফরমানী করা অবাধ্য হওয়া। পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়াকে আরবীতে عقوق الوالدين  উকুকুল ওয়ালিদাইন বলা হয়। তাই ইমাম মালেক (রহঃ) সন্তান জন্ম উপলক্ষে ইবাদত হিসেবে যেই পশু যবেহ করা হয় তাকে আকীকাহ নামে নামকরণ করাকে অপছন্দ করেছেন। রসূল (সাঃ) বলেন-

عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ

‘‘ছেলে সন্তান হলে দু‘টি সমবয়সের ছাগল এবং মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগল দিয়ে আকীকাহ দিতে হবে।[1] তিনি আরও বলেন-

كُلُّ غُلاَمٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى

‘‘আকীকাহ না করা হলে সন্তান রিহান (رهان) বন্ধক থাকে’’।[2] সুতরাং সপ্তম দিনে সমত্মানের আকীকাহ করা উচিৎ। সেই সাথে মাথা কামাবে এবং নাম রাখবে।[3] ভাষাবিদগণ বলেন- রিহান অর্থ হচ্ছে আটকিয়ে রাখা। অর্থাৎ আকীকাহ না করলে সন্তান শয়তানের প্ররোচনার শিকার হওয়া থেকে মুক্ত হয়না বা পিতা-মাতা সমত্মানের সদাচরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। কেউ কেউ বলেছেন- সে পিতা-মাতার জন্য শাফাআত করা থেকে বঞ্চিত হবে। তবে প্রকাশ্য কথা হচ্ছে সন্তান থেকে যে কল্যাণের আশা করা হয় সে নিজেই সেই কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। আখিরাতে সে শাস্তি পাবে- এটি উদ্দেশ্য নয়। কখনও সন্তান পিতা-মাতার ত্রুটির কারণে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন স্ত্রী সহবাস করার সময় বিসমিল্লাহ্ না বলা (স্ত্রী সহবাসের সময় দু’আ পাঠ না করা)।



ইমাম আবু দাউদ তাঁর মারাসিল গ্রন্থে জাফর বিন মুহাম্মাদ থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ) এর আকীকাহ করার সময় বলেছেন- দুধ মাতা-এর ঘরে এর একটি ঠ্যাং (রান) পাঠিয়ে দাও, তোমরা এ থেকে খাও এবং অন্যদেরকে খেতে দাও। তবে তোমরা এর কোন হাড় ভেঙ্গোনা।

মাইমুনী (রহঃ) বলেন- আমরা পরস্পর আলোচনা করলাম যে, জন্মের কত দিন পর বাচ্চার নাম রাখতে হবে? তখন আবু আব্দুল্লাহ্ আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করে বলেন- তৃতীয় দিনে নাম রাখতে হবে। আর সামুরা (রাঃ) বললেন- সপ্তম দিনে রাখতে হবে।[4]

[1]. আবু দাউদ, আলএ. হা/২৮৩৪, তিরমিযী মাপ্র. হা/১৫১৩, ও মুসনাদে আহমাদ। [2]. আবু দাউদ, আলএ. হা/২৮৩৮, আহমাদ, তিরমিযী ও অন্যান্য সুনান গ্রন্থ। [3]. আহমাদ, তিরমিযী ও নাসাঈ। [4]. এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ বিন হান্বালের কথাটি সবচেয়ে সুন্দর ও বিশুদ্ধ। তিনি বলেন, কথাটি শাফায়াতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ যেই শিশুর আকীকা দেওয়া হয়নি, সে যদি মৃত্যু বরণ করে, কিয়ামতের দিন শিশুর শাফায়‘াত থেকে তার পিতা-মাতা বঞ্চিত হবে। আর হাদীসে একথা প্রমাণিত আছে যে, মুসলমানদের যে সমস্ত শিশু বাচ্চা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করবে, তারা তাদের মুসলিম পিতা-মাতার জন্য আল্লাহর দরবারে শুপারিশ করবে।

Thursday, December 28, 2017

লাল দস্তরখান খাবার খাওয়ার কি কোন ফযীলত সাহিহ হাদিসে বর্নিত আছে ? দস্তরখান ছাড়া চেয়ার টেবিলে বসে খাবার খাওয়া কি সঠিক ?




লাল দস্তরখান খাবার খাওয়ার কি কোন ফযীলত সাহিহ হাদিসে বর্নিত আছে ? দস্তরখান ছাড়া চেয়ার টেবিলে বসে খাবার খাওয়া কি সঠিক ?
-----------------------------------------------------
আমাদের দেশের ধার্মিক মানুষদের মধ্যে প্রসিদ্ধ একটি ‘সুন্নাত’ হলো লাল দস্তারখানে খানা খাওয়া। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো লাল দস্তরখান ব্যবহার করেছেন, অথবা এইরূপ দস্তরখান ব্যবহার করতে উৎসাহ দিয়েছেন বলে কোনো সহীহ বা যয়ীফ হাদীস দেখা যায় না। এ বিষয়ে অনেক বানোয়াট কথা প্রচলিত।
এইরূপ একটি বানোয়াট কথা নিম্নরূপঃ
“হযরত রাসূলে মকবুল (ﷺ) ….লাল দস্তরখান ব্যবহার করা হতো। …..যে ব্যক্তি লাল দস্তরখানে আহার করে তার প্রতি লোকমার প্রতিদানে একশ করে ছাওয়াব পাবে এবং বেহেস্তের ১০০টি দরজা তার জন্য নির্ধারিত হবে। সে ব্যক্তি বেহেশতের মধ্যে সব সময়ই ঈসা(আ) ও অন্য নবীদের হাজার হাজার সালাম ও আশীর্বাদ লাভ করবে….। এরপর হযরত কসম খেয়ে বর্ণনা করলেন, কসম সেই খোদার যার হাতে নিহিত রয়েছে আমার প্রাণ; যে ব্যক্তি লাল দস্তরখানে রুটি খাবে সে এক ওমরা হজ্জের সাওয়াব পাবে এবং এক হাজার ক্ষুধার্তকে পেট ভরে আহার করানোর সাওয়াব পাবে। সে ব্যক্তি এত বেশি সাওয়াব লাভ করবে যেন আমার উম্মাতের মধ্যে হাজার বন্দীকে মুক্ত করালেন…….।” এভাবে আরো অনেক আজগুবি, উদ্ভট ও বানোয়াট কাহিনী ও সাওয়াবের ফর্দ দেওয়া হয়েছে। (শায়খ মাঈন উদ্দীন চিশতী, আনিসুল আরওয়াহ পৃ. ৩০-৩১)।

দস্তরখান সম্পর্কে আরো অনেক ভুল বা ভিত্তিহীন ধারণা আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দস্তরখান ব্যবহার করতেন। তবে তা ব্যবহার করার নির্দেশ বা উৎসাহ তাঁর থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয় নি। দস্তরখান ছাড়া খাদ্যগ্রহণের বিষয়ে তিনি কোনো আপত্তিও করেন নি। কিন্তু আমরা সাধারণত দস্তরখানের বিষয়ে যতটুকু গুরুত্ব প্রদান করি, কুরআন ও হাদীসে নির্দেশিত অনেক ফরয, বা নিষিদ্ধ অনেক হারামের বিষয়ে সেইরূপ গুরুত্ব প্রদান করি না। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দস্তরখান ব্যবহার করতেন বলে আমরা বুঝি যে, তিনি আমাদের মত দস্তরখানের উপর থালা, বাটি ইত্যাদি রেখে খাবার খেতেন। ধারণাটি সঠিক নয়। তাঁর সময়ে চামড়ার দস্তরখান বা ‘সুফরা’ ব্যবহার করা হতো এবং তার উপরেই সরাসরি-কোনোরূপ থালা, বাটি, গামলা ইত্যাদি ছাড়াই-খেজুর, পনির, ঘি ইত্যাদি খাদ্য রাখা হতো। দস্তরখানের উপরেই প্রয়োজনে এগুলি মিশ্রিত করা হতো এবং সেখান হতে খাদ্য গ্রহণ করা হতো।
(বুখারী, আস-সহীহ ৫/২০৫৯)।
----বই- হাদিসের নামে জালিয়াতী

Wednesday, December 27, 2017

সাহু সিজদার বিবরণ?



সাহু সিজদার বিবরণ?

নাবী (সাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন-

إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْنَ فَإِذَا نَسِيتُ فَذَكِّرُونِى

‘‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও আমিও তেমনি ভুল করি। আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ো’’।[1] সলাতে নাবী (সাঃ) কর্তৃক একাধিক বার ভুল করা উম্মাতের জন্য নেয়ামত স্বরূপ এবং দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ার প্রমাণ। যাতে তাঁর পরে উম্মাত ভুল করলে সংশোধনের ক্ষেত্রে সঠিক পন্থা অনুসরণ করতে পারে।

সুতরাং তিনি একবার চার রাকআত বিশিষ্ট সলাত পড়তে গিয়ে দুই রাকআত পড়ে (মাঝখানে না বসে ভুল বশতঃ) দাঁড়িয়ে গেছেন। সলাত শেষে করে সালামের পূর্বে তিনি দু’টি সাহু সিজদাহ করেছেন। সুতরাং এ থেকে একটি মাসআলা পাওয়া গেল যে, কোন ব্যক্তি সলাতের রুকন ব্যতীত অন্য কোন অংশ ভুল বশতঃ ছেড়ে দিলে তার জন্য সালামের পূর্বে দু’টি সাহু সিজদাহ করতে হবে। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, রুকন ছাড়া অন্য কোন অংশ (ওয়াজিব বিষয়) ছেড়ে দিয়ে পরবর্তী রুকন পালন করা শুরু করে দিলে স্মরণ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া ওয়াজিব পালনের দিকে পুনরায় ফিরে আসবে না। (বরং পরবর্তী রুকন পালন করা অব্যাহত রাখবে এবং সালামের পূর্বে দু’টি সাহু সিজদাহ করবে)

তিনি একবার যোহর কিংবা আসরের সলাত দুই রাকআত পড়েই সালাম ফিরিয়ে দিয়েছেন। কথাও বলেছেন। অতঃপর তিনি বাকী সলাত পূর্ণ করে সালাম ফিরিয়েছেন। অতঃপর সাহু সিজদাহ করার পর পুনরায় সালাম ফিরিয়েছেন।



একবার তিনি কোন সলাতের এক রাকআত বাকী থাকতেই সালাম ফিরিয়ে চলে গেলেন। তালহা বিন উবাইদুল্লাহ্ (রাঃ) তাঁকে বললেন- আপনি সলাতের এক রাকআত ভুলে গেছেন। তিনি ফিরে এসে মসজিদে প্রবেশ করে বিলাল (রাঃ) কে ইকামাত দিতে বললেন । বেলাল (রাঃ) ইকামাত দিলেন আর তিনি লোকদেরকে নিয়ে বাকী রাকআত সলাত আদায় করলেন।[2]

   একবার তিনি যোহরের সলাত পাঁচ রাকআত পড়ে সালাম ফিরালেন। সাহাবীগণ তাঁকে বললেন- সলাত কি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে? তিনি বললেন- কি হয়েছে? তারা বললেন- আপনি পাঁচ রাকআত সলাত পড়েছেন। তখন তিনি সালাম ফিরানোর পরে দু’টি সাহু সিজদা প্রদান করলেন। (অন্য বর্ণনায় আছে তিনি সাহু সিজদাহ করে পুনরায় সালাম ফিরিয়েছেন)

তিনি একবার আসরের সলাত তিন রাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে বাড়িতে চলে গেলেন। লোকেরা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বের হয়ে এসে তাদেরকে নিয়ে বাকী এক রাকআত সলাত পড়লেন। অতঃপর তিনি সালাম ফেরালেন। অতঃপর দু’টি সাহু সিজদাহ প্রদান করলেন। পরিশেষে তিনি সালাম ফেরালেন।

উপরোক্ত পাঁচটি স্থানে রসূল (সাঃ) থেকে সলাতে ভুল হওয়া এবং সাহু সিজদাহ দেয়ার কথা সংরক্ষিত হয়েছে।

[1]. বুখারী, অধ্যাঃ কিতাবুস্ সালাত,তাও. হা/৪০১, মিশকাত,হাএ. হা/১০১৬ [2]. মুসনাদে ইমাম আহমাদ, ৬/৪০১, আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সালাত। ইমাম আলবানী রহঃ) এই হাদীছকে সহীহ বলেছেন, সহীহু আবী দাউদ, হা/ ৮৯৯।

Sunday, December 24, 2017

ক্রিসমাস ডে ও নববর্ষ এর আগমনে কাফেরদেরকে মুবারকবাদ দেওয়া যায় কি?


ক্রিসমাস ডে ও নববর্ষ এর আগমনে কাফেরদেরকে মুবারকবাদ দেওয়া যায় কি? যেহেতু ওরা আমাদের সাথে কাজ করে। ওরা যদি আমাদেরকে সম্ভাষণ জানায়, তাহলে ওদেরকে আমরা কিভাবে উত্তর দেব? এই উপলক্ষ্যে ওদের আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানে যোগদান করা বৈধ কি? উক্ত বিষয়ে সমূহে কোন একটা করে ফেললে মানুষ গোনাহগার হবে কি? যদি সদ্ব্যবহার, চক্ষুলজ্জা বা সঙ্কোচ ইত্যাদি খাতিরে করা হয়? আর এ সবে ওদের অনুরূপ করা চলবে কি?

ক্রিসমাস ডে অথবা অন্য কোন ওদের ধর্মীয় পর্ব ও খুশিতে কাফেরদের মুবারকবাদ দেওয়া সর্ববাদী সম্মতিক্রমে অবৈধ। যেমন ইবনুল কাইয়েম রাহিমাহুল্লাহ তার গ্রন্থ ‘আহকা-মু আহলিয জিম্মাহ’ তে নকল করেছেন।  তিনি বলেন,  ‘বিশিষ্ট কুফুরের প্রতীক ও নিদর্শনের ক্ষেত্রে মুবারকবাদ পেশ করা যথা সম্মতি ক্রমে হারাম। যেমন ওদের ঈদ অথবা ব্রত উপলক্ষে মুবারকবাদ দিয়ে বলা, ‘তোমার জন্য ঈদ মুবারক হোক’, অথবা ‘এই খুশিতে শুভাশিস গ্রহণ কর’ ইত্যাদি। এ কাজে যদি ও সম্ভাষণ দাতা কুফুর থেকে বেঁচে যায়, তবুও তা হারামের অন্তর্ভুক্ত। আর এটা ওদের ক্রুশ কে সিজদা করার উপলক্ষ্যে মুবারকবাদ দেওয়ার অনুরূপ। বরং এটা আল্লাহর নিকট গোনাহ গযবের দিক থেকে মদ্য পান, খুন, ব্যাভিচার ইত্যাদির উপর মুবারকবাদ দেওয়ার চেয়ে অধিক বড় ও বেশী। বহু মানুষই যাদের নিকট দ্বীনের কোন কদর নেই, তারা উক্ত পাপে পতিত হয়ে থাকে। কৃতকর্মের কুফলকে জানতে পারে না। উপরন্ত কোন মানুষকে পাপ, বিদআত অথবা কুফুরের উপর মুবারকবাদ জানিয়ে থাকে, যখন সে নিশ্চিত ভাবে আল্লাহর ক্রোধে ও অসন্তোষটির শিকার হয়ে যায়। (ইবনুল কাইয়েমের উক্তি সমাপ্ত)

কাফেরদের ধর্মীয় ঈদ পর্বে তাদেরকে মুবারকবাদ দেওয়া এই লক্ষ্যেই হারাম, যা ইবনুল কাইয়েম উল্লেখ করেছেন। যেহেতু তাতে কুফরি প্রতীকের উপর কাফেরদের প্রতিষ্ঠিত থাকাকে স্বীকার ও সমর্থন করা হয় এবং তাদের জন্য তাতে সম্মতি প্রকাশ করা হয়। যদিও সে এই কুফরি নিজের জন্য পছন্দ করে না, কিন্তু তবুও মুসলিমের জন্য কুফরির প্রতীকে সম্মতি প্রকাশ অথবা তার উপর কাউকে মুবারকবাদ জানানো বৈধ নয়। কারণ আল্লাহ তায়ালা ওতে সম্মত নন। যেমন তিনি বলেন,

“তোমরা কাফের জলে জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তাঁর  দাসদের জন্য কুফরি পছন্দ করেন না। যদি তোমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন।” (সুরা জুমার ৭ আয়াত)

তিনি আর বলেন,

“আজ আমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ অসম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন রূপে মনোনীত করলাম।” (সূরা মাইদাহ ৩ আয়াত)

সুতরাং কুফুরির উপর ওদেরকে শুভাশিস ও সাদর সম্ভাষণ জ্ঞাপন হারাম --- চাহে তারা ঐ ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী বা সঙ্গী হোক, চাহে না হোক।

যখন ওরা ওদের ঈদ উপলক্ষ্যে আমাদেরকে মুবারকবাদ জানায়, তখনও  আমরা তাদেরকে প্রত্যুত্তরে অভিবাদন জানাতে পারি না। যেহেতু তা আমাদের ঈদ নয়। আল্লাহ তায়ালা এমন ঈদ পছন্দ করেন না। কারণ, তা ওদের ধর্মে অভিনব রচিত কর্ম। অথবা বিধিসম্মত কিন্তু তা দ্বীন ইসলাম দ্বারা রহিত হওয়ে গেছে, যা দ্বীন সহ মুহাম্মদ (সঃ) কে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র সৃষ্টির প্রতি প্রেরণ করেছেন। যে দ্বীন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

“যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম চাইলে তা কখনো তাঁর নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্ত দের দলভুক্ত হবে।” (আ-লে ইমরানঃ ৮৫)

এই উপলক্ষে মুসলিমদের জন্য তাদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করাও হারাম। যেহেতু দাওয়াত গ্রহণ মুবারকবাদ জ্ঞাপন অপেক্ষা নিকৃষ্টতর। কারণ এতে ওদের ঈদে অংশগ্রহণ করা হয়ে যায়।

তদনুরূপ মুসলমানদের জন্য এই উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে, পরস্পরকে উপঢৌকন প্রদান করে, মিষ্টান্ন বিতরণ করে, বিভিন্ন প্রকার খাদ্য বণ্ঠন করে অথবা কর্মক্ষেত্রে ছুটি ঘোষণা করে কাফেরদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা বৈধ নয়। কারণ নবী (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত।” (আবু দাউদ)

সায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ তাঁর গ্রন্থ ‘ইকতিযা-উস সিরাত্বিল মুস্তাকিম, মুখা- লাফাতু আসহা -বিল জাহিম’ এ বলেন, ‘তাদের কিছু ঈদ পর্বে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বনে, তারা যে বাতিল অবিচলিত, তাতে তাদের অন্তর খুশিতে ভরে উঠার কারণ হবে এবং সম্ভবতঃ এই অনুরুপ্য তাদের সুযোগের সৎব্যবহার করতে ও দুর্বলদেরকে অধীনস্থ করতে সহায়তা করবে।’

যে ব্যক্তি উপর্যুক্ত কিছু করে ফেলেছে সে গোনাহগার হবে। চাহে সে তা শিষ্টাচারিতা, বন্ধুত্ব, চক্ষুলজ্জা বা অন্য কিছুর খাতিরে করুক না কেন। যেহেতু এমন করা আল্লাহর দ্বীনে তোষামোদ করা, কাফেরদের আত্মা মনকে সবল করে তোলা এবং তাদের ধর্ম নিয়ে গর্ব করার উপকরণের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে উসাইমিন)

গ্রন্থঃ আল-ফিকহুল আকবর
অধ্যায়ঃ মুরজিয়া মতবাদ, নেক আমল, মুজিযা-কারামত, আখিরাত, ঈমান-ইসলাম ও অন্যান্য প্রসঙ্গ


৩. ২. সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক-কুফর

আমরা শিরক বিষয়ক মূলনীতিগুলো পূর্বে উল্লেখ করেছি। তবে যেহেতু শিরক-কুফর নেক আমল নষ্ট হওয়ার মূল কারণ এবং কুরআনের ভাষায় অধিকাংশ মানুষ ঈমান থাকা সত্ত্বেও শিরকে লিপ্ত হয়, সেহেতু আমরা এখানে সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক-কুফর উল্লেখ করছি, যেন সচেতন পাঠক এগুলো থেকে আত্মরক্ষা করতে পারেন।

তাওহীদ বা রিসালাতের কোনো বিষয় অবিশ্বাস করা। যেমন আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস না করা। মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে তাঁর বান্দা, দাস ও মানুষ রূপে বিশ্বাস না করা। অথবা তাঁকে আল্লাহর অবতার, আল্লাহ তাঁর সাথে মিশে গিয়েছেন, ‘যে আল্লাহ সে-ই রাসূল’ ইত্যাদি মনে করা। অথবা তাঁকে আল্লাহর নবী ও রাসূল রূপে না মানা। তাঁকে কোনো বিশেষ যুগ, জাতি বা দেশের নবী মনে করা। তাঁর কোনো কথা বা শিক্ষাকে ভুল বা অচল মনে করা। আল্লাহর নৈকট্য, সন্তুষ্টি ও মুক্তি পাওয়ার জন্য তাঁর শিক্ষার অতিরিক্ত কোনো শিক্ষা, মত বা পথ আছে, থাকতে পারে বা প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করা।
আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এ বিশ্বের প্রতিপালন বা পরিচালনায় শরীক আছেন বলে বিশ্বাস করা। অন্য কোনো সৃষ্টি, প্রাণী, ফিরিশতা, জীবিত বা মৃত মানুষ, নবী বা ওলী সৃষ্টি, পরিচালনা, অদৃশ্য জ্ঞান, অদৃশ্য সাহায্য, রিযিক দান, জীবন দান, সুস্থতা বা রোগব্যাধি দান, বৃষ্টি দান, বরকত দান, অনাবৃষ্টি প্রদান, অমঙ্গল প্রদান ইত্যাদি কোনো প্রকার কল্যাণ বা অকল্যাণের কোনো ক্ষমতা রাখেন বা আল্লাহ কাউকে অনুরূপ ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন  বলে বিশ্বাস করা।
আল্লাহ ছাড়া কোনো নবী, ওলী, জিন বা ফিরিশতা সকল প্রকার অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, গায়েব বা দূরের ডাক শুনতে পারেন, সাড়া দিতে পারেন, সদাসর্বদা সর্বত্র বিরাজমান বা হাজির নাযির বলে বিশ্বাস করা।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ), ঈসা (আ) বা অন্য কাউকে আল্লাহর যাত (সত্তা) বা সিফাত (বিশেষণ)-এর অংশ, আল্লাহর সত্তা, বিশেষণ বা নূর থেকে (Same Substance/ Light from Light) সৃষ্ট বা জন্ম-দেওয়া  বলে বিশ্বাস করা।
কোনো বস্ত্ত, প্রাণী, কর্ম, বার, তিথি, মাস ইত্যাদিকে অশুভ বা অযাত্রা বলে মনে করা। সকল প্রকার অশুভ বা অযাত্রা বিশ্বাসই শিরক।
আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করা। আল্লাহ ছাড়া কোনো দৃশ্য বা অদৃশ্য, জীবিত বা মৃত প্রাণী বা বস্ত্তকে; যেমন মানুষ, জিন, ফিরিশতা, মাযার, কবর, পাথর, গাছ, মূর্তি, ছবি ইত্যাদিকে সাজদা করা, তাদের কাছে অলৌকিক সাহায্য, ত্রাণ, দীর্ঘায়ূ, রোগমুক্তি, বিপদমুক্তি, সন্তান ইত্যাদি প্রার্থনা করা, তাদের নামে মানত, কুরবানি বা উৎসর্গ করা শিরক। মূর্তিতে ভক্তিভরে ফুলদান, মূর্তির সামনে নীরবে বা ভক্তিভরে দাঁড়ানো এজাতীয় শিরকী বা শিরকতুল্য কর্ম।
আল্লাহর জন্য কোনো ইবাদত করে সে ইবাদত দ্বারা আল্লাহর সাথে অন্য কারো সম্মান প্রদর্শন বা সন্তুষ্টি কামনাও শিরক। যেমন আল্লাহর জন্য সাজদা করা তবে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বস্ত্তকে সামনে রেখে সাজদা করা, যেন আল্লাহর সাজদার সাথে সাথে তাকেও সম্মান করা হয়ে যায়। অথবা আল্লাহর জন্য মানত করে কোনো জীবিত বা মৃত ওলী, ফিরিশতা, জিন, কবর, মাযার, পাথর, গাছ ইত্যাদিকে মানতের সাথে সংযুক্ত করা।
আল্লাহ, তাঁর রাসূল বা তাঁর দ্বীনের মৌলিক কোনো বিষয় অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, অবজ্ঞা করা বা অপছন্দ করা কুফর। এ জাতীয় প্রচলিত কুফরীর মধ্যে অন্যতম আল্লাহর বিভিন্ন বিধান, যেমন - নামায, পর্দা, বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি, ইসলামী আইন ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ বা এগুলিকে বর্তমানে অচল বা মধ্যযুগীয় মনে করা।
ইসলামকে শুধু ব্যক্তি জীবনে পালন করতে হবে এবং সমাজ, বিচার, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলাম চলবে না বলে মনে করা, ইসলামের কোনো বিধান বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কোনো সুন্নাতের প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণা প্রকাশ করা, ওয়াজ মাহফিল, যিক্র, তিলাওয়াত, নামায, মাদ্রাসা, মসজিদ, বোরকা, পর্দা ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণা অনুভব করা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বা পূর্ববর্তী অন্য কোনো নবী-রাসূলের প্রতি সামান্যতম অবজ্ঞা প্রকাশ করা।
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সর্বশেষ নবী হওয়ার বিষয়ে সামান্যতম সন্দেহ পোষণ করা, তাঁর পরে কারো কাছে কোনো প্রকার ওহী এসেছে বা আসা সম্ভব বলে বিশ্বাস করা।
সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারকি, রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো নিয়ম, পদ্ধতি, রীতি, নীতি, আদর্শ, আইন ইত্যাদি ছাড়া অন্য কোনো নিয়ম, নীতি, মতবাদ বা আদর্শ বেশী কার্যকর, উপকারী বা উপযোগী বলে মনে করা। যুগের প্রয়োজনে তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করা। এগুলো সবই কুফর।
যে কোনো প্রকার কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী। উপরে বর্ণিত কোনো কুফুর বা শিরকে লিপ্ত মানুষকে মুসলিম মনে করা বা তাঁদের আকীদার প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী। যেমন যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সর্বশেষ নবী বলে মানেন না বা তাঁর পরে কোনো নবী থাকতে পারে বা ওহী আসতে পারে বলে বিশ্বাস করেন তাদেরকে কাফির মনে না করা কুফরী। অনুরূপভাবে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মকে সঠিক বা পারলৌকিক মুক্তির মাধ্যম বলে মনে করা, সব ধর্মই ঠিক মনে করা কুফর। অন্যান্য ধর্মের শিরক বা কুফরমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, সেগুলোর প্রতি মনের মধ্যে ঘৃণাবোধ না থাকা, অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে আন্তরিক বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা, তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের অনুকরণ করা, ক্রিসমাস (বড়দিন), পূজা ইত্যাদিতে আনন্দ- উদ্যাপন করা ইত্যাদি বর্তমান যুগে অতি প্রচলিত কুফরী কর্ম ও বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামই সর্বপ্রথম সকল ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রত্যেকেই তাদের ধর্ম পালন করবেন। তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা নিষিদ্ধ। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মুক্তি একমাত্র ইসলামের মধ্যে বলে বিশ্বাস ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘সব ধর্মই ঠিক’ বলার অর্থ সকল ধর্মকে মিথ্যা বলা এবং সকল ধর্মকে অবিশ্বাস করা; কারণ প্রত্যেক ধর্মেই অন্য ধর্মকে ‘বেঠিক’ বলা হয়েছে।
আরেকটি প্রচলিত কুফরী গণক, জ্যোতিষী, হস্তরেখাবিদ, রাশিবিদ, জটা ফকির বা অন্য কোনোভাবে ভাগ্যগণনা, ভবিষ্যৎ গণনা বা গোপন জ্ঞান দাবি করা অথবা এসকল মানুষের কথায় বিশ্বাস করা। এ ধরনের কোনো কোনো কর্ম ইসলামের নামেও করা হয়। যে নামে বা যে পদ্ধতিতেই করা হোক গোপন তথ্য, গায়েব, অদৃশ্য, ভবিষ্যৎ বা ভাগ্য গণনা বা বলা জাতীয় সকল কর্মই কুফরী কর্ম। অনুরূপভাবে কোনো দ্রব্য, পাথর, ধাতু, অষ্টধাতু, গ্রহ বা এ জাতীয় কোনো কিছু মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে অথবা দৈহিক বা মানসিক ভালমন্দ করতে পারে বলে বিশ্বাস করা শিরক।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো কোনো কর্ম, পোষাক, আইন, বিধান, রীতি, সুন্নাত, কর্মপদ্ধতি বা ইবাদত পদ্ধতিকে অবজ্ঞা বা উপহাস করা।
কোনো মানুষকে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর শরীয়তের উর্ধ্বে মনে করা বা কোনো কোনো মানুষের জন্য শরীয়তের বিধান পালন করা জরুরী নয় বলে বিশ্বাস করা কুফরী। যেমন, মারিফাত বা মহববত অর্জন হলে, বিশেষ মাকামে পৌঁছালে আর শরীয়ত পালন করা লাগবে না বলে মনে করা। অনুরূপভাবে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, হালাল উপার্জন, পর্দা ইত্যাদি শরীয়তের যে সকল বিধান প্রকাশ্যে পালন করা ফরয তা কারো জন্য গোপনে পালন করা চলে বলে বিশ্বাস করাও কুফরী।
যাদু, টোনা, বান ইত্যাদি ব্যবহার করা বা শিক্ষা করা।
ইসলাম ধর্ম জানতে-বুঝতে আগ্রহ না থাকা। ইসলামকে জানা ও শিক্ষা করাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না করা বা এ বিষয়ে  মনোযোগ না দেয়া।

আল্লাহ ও বান্দার মাঝখানে কোনো মধ্যস্থ আছে বা মধ্যস্থতা ছাড়া আল্লাহর নিকট ক্ষমালাভ, করুণালাভ বা মুক্তিলাভ সম্ভব নয় বলে বিশ্বাস করা শিরক।

গ্রন্থঃ রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল
অধ্যায়ঃ দ্বাদশ অধ্যায়- ঈদ ও তার বিভিন্ন আহকাম


ঈদ ও তার বিভিন্ন আহকাম

ঈদ হল সেই দিন পালনের নাম, যা মানুষের চিরাচরিত অভ্যাস। ঈদ মানে ফিরে আসা। যেহেতু খুশীর বার্তা নিয়ে ঈদ বাৎসরিক বারবার ফিরে আসে এবং মানুষ তা বারবার পালন করে, তাই তাকে ঈদ বলা হয়। প্রত্যেক জাতির আচরণে ঈদ পালন করার প্রথা বড় প্রাচীন। প্রত্যেক বড় বড় ঘটনা-প্রবাহকে উপলক্ষ্য করে তারই মাধ্যমে সেই স্মৃতি জাগরণ করে ঈদ (পর্ব) পালন করে থাকে এবং তাতে তারা নানা ধরনের খুশী ও আনন্দ প্রকাশ করে থাকে।

অমুসলিম জাতির পর্ব সাধারণতঃ কোন না কোন বৈষয়িক ব্যাপারের সাথে জড়িত। যেমন নওরোজ, ক্রিসমাস ডে, মাতৃদিবস, ভালোবাসা দিবস, জন্মদিন, বিবাহ-বার্ষিকী প্রভৃতি পর্ব। যেহেতু সেগুলো তাদের মনগড়া ঈদ, সেহেতু তাতে তাদের স্রেফ বস্ত্তবাদী উৎসব ও আড়ম্বরই পরিলক্ষিত হয়।

পক্ষান্তরে মুসলিম উম্মাহর ঈদ হয় কোন দ্বীনী উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে। মহান আল্লাহর কোন ইবাদত পরিপূর্ণ করে এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর বিধিবদ্ধ শরীয়ত অনুযায়ী তাঁকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে তা পালন করা হয়। কেননা, মুমিনদের এ দুনিয়ায় খুশী হল একমাত্র মাওলাকে রাজী করেই। যখন মুমিন নিজ মাওলার কোন আনুগত্য পরিপূর্ণ করে এবং তার উপর তাঁর দেওয়া সওয়াব ও পুরস্কার লাভ করে তখনই খুশীর ঢল নেমে আসে তার হৃদয়-মনে। যেহেতু সে বিশ্বাস ও ভরসা রাখে সেই আনুগত্যের উপর তাঁর মাওলার অনুগ্রহ ও ক্ষমার প্রতিশ্রুতির উপর। মহান আল্লাহ বলেন,

{قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ}

অর্থাৎ, তুমি বল, আল্লাহর এই অনুগ্রহ ও করুণা নিয়েই তাদেরকে খুশী হওয়া উচিত। আর তারা যা পূঞ্জীভূত করে তা (দুনিয়া) অপেক্ষা এটি শ্রেয়। (কুরআনুল কারীম ১০/৫৮)

  আলী (রাঃ) বলেন, ‘যেদিন আমি আল্লাহর কোন প্রকার নাফরমানি করি না, সেদিনই আমার ঈদ।’

অন্যান্য জাতির ঈদ অনেক। কারণ, সেসব ঈদ তাদের নিজস্ব মনগড়া। কিন্তু মুসলিমদের (বাৎসরিক) মাত্র দুটি ঈদ; এর কোন তৃতীয় নেই - ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। আর এ দুটি ঈদ মহান আল্লাহরই বিধান। তিনিই বান্দার জন্য পালনীয় করেছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মদ্বীনায় আগমন করলে দেখলেন, মদ্বীনাবাসীরা দুটি ঈদ পালন করছে। তা দেখে তিনি বললেন, (জাহেলিয়াতে) তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা খেলাধূলা করতে। এক্ষণে ঐ দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন।’[1]

অবশ্য এ ছাড়া একটি সাপ্তাহিক ঈদ আছে। আর তা হল জুমআহর দিন। সপ্তাহান্তে একবার ফিরে আসে এই ঈদ। অবশ্য এখানে আমাদের আলোচনা হবে ঈদুল ফিত্বর নিয়ে।([2])

[1] (সহীহ আবূ দাঊদ ১০০৪, নাসাঈ ১৫৫৫নং) ([2]( ঈদুল আযহা নিয়ে আলোচনা ‘যুল-হজ্জের তের দিন’-এ দরষ্টব্য। গ্রন্থঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
অধ্যায়ঃ বিদআত


‘ঈদে মীলাদুন নাবী’ (নবী দিবস) পালন করা বৈধ নয় কেন?

মহান আল্লাহ আমাদের দ্বীন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন তাঁর নবীর জীবদ্দশাতেই। মহান আল্লাহ বলেন, “আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ (নেয়ামত) সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্মরূপে মনোনীত করলাম।(সূরা মায়েদাহ ৩ আয়াত)
আর মহানবী (সঃ) বলেন, “ যে ব্যক্তি আমাদের এ (দ্বীন) ব্যপারে নতুন কিছু আবিষ্কার করে, সে ব্যাক্তির সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।” ৯১ (বুখারী ও মুসলিম)  “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে, যার উপর আমাদের কোন নির্দেশ নেই, সে ব্যক্তির সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।” ৯২ (মুসলিম)

ইসলামে পালনীয় ঈদ হল মাত্র দুটি; ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। তৃতীয় কোন ঈদ ইসলামে নেই। মহানবী (সঃ) নবুয়তের ২৩ বছর কাল নিজের জীবনে কোন বছর নিজের জন্মদিন পালন করে যাননি। কোন সাহাবীকে তা পালন করার নির্দেশও দেননি। তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের জন্ম মৃত্যু উপলক্ষে কোন আনন্দ অথবা শোকপালন করে যাননি।
তাঁর পরবর্তীকালে তাঁর চারজন খলীফা তাদের খেলাফতকালে রাষ্ট্রীয়ভাবে অথবা একেকভাবে নাবীদিবস পালন করে যাননি। অন্য কোন সাহাবী বা আত্মীয়ও তাঁর প্রতি এত ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে শোক পালন করেননি। তাঁদের পরেও কোন তাবেঈ অথবা তাঁদের কোন একনিষ্ঠ অনুসারী অথবা কোন ইমাম তাঁর জন্ম কিংবা মৃত্যুদিন পালন করার ইঙ্গিত দিয়ে যাননি। সুতরাং তা যে নব আবিষ্কৃত বিদআত, তা বলাই বাহুল্য।
খ্রিস্টানরা আন্দাজে ২৫ শে ডিসেম্বর যীশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব (মীলাদ, বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে) এবং তাঁদের পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্মদিন (বার্থডে) বড় আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। মুসলিমরা তাঁদের মত আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার উদ্দেশ্য এই বিদআত ওদের নিকট হতেই গ্রহণ করে নিয়েছে। তাই এরাও ওদের মত নবীদিবস (ঈদে-মীলাদুন-নাবী) এবং পরিবারের সভ্যদের (বিশেষ করে শিশুদের) ‘হ্যাপি বার্থ ডে’র অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে। অথচ তাঁদের রাসুল (সঃ) তাঁদেরকে সাবধান করে বলেন, “ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই একজন।” ৯৩ (আবুদাঊদ)

প্রচার কর,যদি একটি আয়াত ও হয়


প্রচার কর,যদি একটি আয়াত ও হয়

وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ». رواه البخاري

আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আম্‌র ইবনে আ'স (রাঃ)

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইসরাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিলো।”

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮

وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ  بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ  رواه البخاري

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ)

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১)
হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮

Saturday, December 23, 2017

ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা



গ্রন্থঃ জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত
অধ্যায়ঃ পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম)

(১৯) ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা :

ওযূতে ঘাড় মাসাহ করার পক্ষে ছহীহ কোন প্রমাণ নেই। এর পক্ষে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল ও মিথ্যা। অথচ কিছু আলেম এর পক্ষে মুসলিম জনতাকে উৎসাহিত করেছেন। আশরাফ আলী থানবী ঘাড় মাসাহ করার দাবী করেছেন এবং এ সময় পৃথক দু‘আ পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন।[1] ড. শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস ফয়সাল (মদ্বীনা মুনাওয়ারাহ) প্রণীত ও মারকাযুদ-দাওয়াহ আল-ইসলামিইয়াহ, ঢাকার শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ অনুদিত ‘নবীজীর নামায’ বইয়ে ওযূর সুন্নাত আলোচনা করতে গিয়ে গর্দান মাসাহ করার কথা বলেছেন। এর পক্ষে জাল হাদীছও পেশ করেছেন।[2] এভাবেই ভিত্তিহীন আমলটি সমাজে বিস্তার লাভ করেছে। জাল দলীলগুলো নিম্নরূপ :

(أ) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ... فِىْ صِفَةِ وَضُوْءِ النَّبِىِّ  قَالَ ثُمَّ مَسَحَ عَلَى رَأْسِهِ ثَلاثًا وَمَسَحَ ظَاهِرَ أُذُنَيْهِ وَمَسَحَ رُقْبَتَهُ وَبَاطِنَ لِحْيَتِهِ بِفَضْلِ مَاءِ الرَّأْسِ...

(ক) ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর ওযূর পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করেন। ..অতঃপর তিনি তিনবার তার মাথা মাসাহ করেন এবং দুই কানের পিঠ মাসাহ করেন ও ঘাড় মাসাহ করেন, দাড়ির পার্শ্ব মাসাহ করেন মাথার অতিরিক্ত পানি দিয়ে।[3]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[4] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, هَذَا مَوْضُوْعٌ لَيْسَ مِنْ كَلاَمِ النَّبِىِّ  ‘এটা জাল। নবী (ছাঃ)-এর বক্তব্য নয়।[5]

(ب) عَنْ عَمْرِو بْنِ كَعْبٍ قال رَأَيْتُ النَّبِيَّ  تَوَضَّأَ فَمَسَحَ بَاطِنَ لِحْيَتِهِ وَقَفَاهُ.

(খ) আমর ইবনু কা‘ব বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ওযূ করার সময় আমি দাড়ির পার্শ্ব এবং ঘাড় মাসাহ করতে দেখেছি।[6]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইবনুল ক্বাত্ত্বান বলেন, এর সনদ অপরিচিত। মুছাররফসহ তার পিতা ও দাদা সবাই অপরিচিত।[7]

(ج) عَنْ طَلْحَةَ بْنِ مُصَرِّفٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ  يَمْسَحُ رَأْسَهُ مَرَّةً وَاحِدَةً حَتَّى بَلَغَ الْقَذَالَ وَهُوَ أَوَّلُ الْقَفَا.

(গ) ত্বালহা ইবনু মুছাররফ তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছি তিনি একবার তাঁর মাথা মাসাহ করতেন এমনকি তিনি মাথার পশ্চাদ্ভাগ পর্যন্ত পৌঁছাতেন। আর তা হল ঘাড়ের অগ্রভাগ।[8]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি মুনকার বা অস্বীকৃত। মুসাদ্দাদ বলেন, তিনি মাথার সামনের দিক থেকে পিছনের দিক পর্যন্ত মাসাহ করেন এমনকি তার দুই হাত কানের নিচ দিয়ে বের করে নেন’ এই কথা ইয়াহইয়ার কাছে বর্ণনা করলে তিনি একে অস্বীকৃতি জানান। ইমাম আবুদাঊদ বলেন, আমি ইমাম আহমাদকে বলতে শুনেছি, ইবনু উ‘আইনাহ বলতেন, মুহাদ্দিছগণ ধারণা করতেন এটা ছহীহ হাদীছের বিরোধী। তিনি এটাও বলতেন, ত্বালহা তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে এ কথা কোথায় পেল?[9]

(د) مَسْحُ الرُّقْبَةِ أَمَانٌ مِنَ الْغِلِّ.

(ঘ) ‘ঘাড় মাসাহ করলে বেড়ী থেকে নিরাপদ থাকবে’।

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[10] ইমাম সুয়ূত্বী জাল হাদীছের গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।[11]

(5) مَنْ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عُنُقَهُ لَمْ يَغِلُّ بِالأَغْلاَلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

(ঙ) ‘যে ব্যক্তি ওযূ করবে এবং ঘাড় মাসাহ করবে, তাকে ক্বিয়ামতের দিন বেড়ী দ্বারা বাঁধা হবে না’।[12]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা।[13] আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী উক্ত বর্ণনাকে জাল বলেছেন।[14] উক্ত বর্ণনায় মুহাম্মাদ ইবনু আমল আল-আনছারী ও মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনে মুহাররম নামের দু’জন রাবী ত্রুটিপূর্ণ। মুহাদ্দিছগণ তাদেরকে দুর্বল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।[15] উল্লেখ্য যে, ঘাড় মাসাহ করা সম্পর্কে এ ধরনের মিথ্যা বর্ণনা আরো আছে। এর দ্বারা প্রতারিত হওয়া যাবে না। বরং ঘাড় মাসাহ করার অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে।

[1]. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২ ও ৪৪। [2]. ঐ, (ঢাকা : মুমতায লাইব্রেরী, ১১, বাংলাবাজার, দ্বিতীয় সংস্করণ, জানুয়ারী ২০১০), পৃঃ ১১৪-১১৫। [3]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৭৫৮৪, ২২/৫০। [4]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯ ও ৭৪৪। [5]. আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ১/৪৬৫ পৃঃ। [6]. ত্বাবারাণী কাবীর ১৯/১৮১। [7]. লিসানুল মীযান ৬/৪২ পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ৮৩। [8]. আবুদাঊদ হা/১৩২, ১/১৭-১৮ পৃঃ। [9]. وَمَسَحَ رَأْسَهُ مِنْ مُقَدَّمِهِ إِلَى مُؤَخَّرِهِ حَتَّى أَخْرَجَ يَدَيْهِ مِنْ تَحْتِ أُذُنَيْهِ. قَالَ مُسَدَّدٌ فَحَدَّثْتُ بِهِ يَحْيَى فَأَنْكَرَهُ. قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَسَمِعْتُ أَحْمَدَ يَقُولُ ابْنُ عُيَيْنَةَ زَعَمُوا كَانَ يُنْكِرُهُ وَيَقُولُ أَيْشِ هَذَا طَلْحَةُ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ؟ -যঈফ আবুদাঊদ হা/১৩২-এর আলোচনা দ্রঃ। [10]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯, ১/১৬৮ পৃঃ। [11]. হাফেয জালালুদ্দীন আস-সুয়ূত্বী, আল-লাআলিল মাছনূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ২০৩, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৮ পৃঃ। [12]. আবু নু‘আইম, তারীখুল আছবাহান ২/১১৫ পৃঃ। [13]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৭৪৪, ২/১৬৭ পৃঃ। [14]. আল-মাছনূ‘ ফী মা‘রেফাতিল হাদীছিল মাওযূ‘, পৃঃ ৭৩, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৯ পৃঃ। [15]. সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৯ পৃঃ। http://www.hadithbd.com/shareqa.php?qa=1817


তাওহীদ কয় প্রকার ও কি কি?


তাওহীদ কয় প্রকার ও কি কি?

গ্রন্থঃ প্রশ্নোত্তরে সহজ তাওহীদ শিক্ষা
অধ্যায়ঃ তাওহীদ সম্পর্কে প্রশ্ন এবং উত্তর


২৪: তাওহীদ কয় প্রকার ও কি কি?

তাওহীদ বা আল্লাহ্‌র একত্ববাদ তিন প্রকারঃ

১. ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র একত্ববাদঃ এর অর্থ হচ্ছে, আমাদেরকে এমর্মে অকাট্য বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই এককভাবে ইবাদত পাওয়ার যোগ্য, এতে তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥] 

“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সহিত এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে” (বাইয়্যেনাহ ৫)।

২. রুবুবিয়াত তথা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র একত্ববাদঃ অর্থাৎ আমাদেরকে এই অকাট্য বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিযিক্বদাতা এবং পরিচালক; এক্ষেত্রে তার কোনো অংশীদার নেই এবং নেই কোনো সহযোগীও। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿هَلۡ مِنۡ خَٰلِقٍ غَيۡرُ ٱللَّهِ يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ﴾ [فاطر: ٣]

“আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক্ব দান করে? তিনি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কিভাবে (তাঁর তাওহীদ থেকে) ফিরে যাচ্ছ?” (ফাতির ৩)। তিনি আরো বলেন,

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨ ﴾ [الذاريات: ٥٨]

“নিশ্চয় মহান আল্লাহই একমাত্র রিযিক্বদাতা, মহাশক্তিমান এবং পরাক্রান্ত” (যারিয়াত ৫৮)। তিনি আরো বলেন,

﴿ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ﴾ [السجدة: ٥]

“তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সবকিছু পরিচালনা করেন” (সাজদাহ ৫)।

৩. আল্লাহ্‌র সুন্দরতম নামসমূহ এবং গুণাবলীর ক্ষেত্রে একত্ববাদঃ অর্থাৎ এই বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ্‌র সুন্দরতম নামসমূহ এবং পরিপূর্ণ গুণাবলী রয়েছে, যেগুলি কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾ [الاعراف: ١٨٠]   

“আর আল্লাহ্‌র রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। অতএব, সেগুলির মাধ্যমেই তাঁকে ডাকো” (আ'রাফ ১৮০)। এই নামসমূহ এবং গুণাবলীতে কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না এবং এগুলির কল্পিত কোনো আকৃতি যেমন স্থির করা যাবে না, তেমনি কোনো সৃষ্টির সাথে সেগুলির কোনোরূপ সাদৃশ্য বিধানও করা চলবে না। আমাদেরকে আরো বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ্‌র মত আর কেউ নেই। আল্লাহ বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورا: ١١]

“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা” (শূরা ১১)।

সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রকৃতি




সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রকৃতি

(ক) মুসলিম হৌক অমুসলিম হৌক প্রতিষ্ঠিত কোন সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইসলামের নীতি নয়। তবে ইসলাম বিরোধী হুকুম মানতে কোন মুসলিম নাগরিক বাধ্য নয়।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِى مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির প্রতি কোন আনুগত্য নেই।
[ শারহুস সুন্নাহ, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৯৬, ৩৬৬৪ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়। ]
অতএব সর্বাবস্থায় তাওহীদের কালেমাকে সমুন্নত রাখা ও ইসলামী স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা মুসলমানের উপর ফরয দায়িত্ব। এমতক্ষেত্রে সরকারের নিকটে কুরআন ও হাদীছের বক্তব্য তুলে ধরাই হ’ল বড় জিহাদ।
যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,
أَفْضَلُ الْجِهَادِ كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ ‘শ্রেষ্ঠ জিহাদ হ’ল অত্যাচারী শাসকের নিকটে হক কথা বলা।
[ আবুদাঊদ হা/৪৩৪৪, তিরমিযী; মিশকাত হা/৩৭০৫। ]
সরকারের নিকট বক্তব্য তুলে ধরার সর্বোত্তম পন্থা হ’ল, সরকার প্রধান বা তাঁর প্রতিনিধির সাথে নিরিবিলি সাক্ষাতে কথা বলা ও উপদেশ দেওয়া। এজন্য সরকারকে উদার ও সহনশীল হ’তে হবে। অহংকারী ও হঠকারী হওয়া চলবে না। হরতাল-ধর্মঘট, মারদাঙ্গা মিছিল ইত্যাদি গণতন্ত্রে সমর্থনযোগ্য হ’লেও ইসলাম এগুলি সমর্থন করে না। অতএব এগুলি কখনোই কোন উত্তম প্রক্রিয়া নয়। এতে সরকার ও জনগণ মুখোমুখি হয়। যাতে হিতে বিপরীত হবে এবং অহেতুক নির্যাতন ও রক্তপাত হবে। যা এখন গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারী ও বিরোধী দল অর্থই হ’ল পরস্পর সহিংস দু’টো দল। যা সমাজকে বিভক্ত করে ও রাষ্ট্রকে পঙ্গু ও গতিহীন করে দেয়।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَنْ أَرَادَ أَنْ يَنْصَحَ لِسُلْطَانٍ بِأَمْرٍ فَلاَ يُبْدِ لَهُ عَلاَنِيَةً وَلَكِنْ لِيَأْخُذْ بِيَدِهِ فَيَخْلُوَ بِهِ فَإِنْ قَبِلَ مِنْهُ فَذَاكَ وَإِلاَّ كَانَ قَدْ أَدَّى الَّذِى عَلَيْهِ لَهُ ‘যে ব্যক্তি শাসককে উপদেশ দিতে চায়, সে যেন তা প্রকাশ্যে না দেয়। বরং তার কাছে নির্জন স্থানে দেয়। এক্ষণে তিনি সেটি গ্রহণ করলে তো ভালই। না করলে ঐ ব্যক্তি তার দায়িত্ব পালন সম্পন্ন করল’।
[ আহমাদ হা/১৫৩৬৯; হাকেম; আলবানী, যিলালুল জান্নাহ হা/১০৯৮, সনদ ছহীহ। ]
সরকারের কাছে বক্তব্য পেশ করার এই ভদ্র পন্থাই হ’ল ইসলামী পন্থা। এতে উভয়পক্ষ পরস্পরের প্রতি সহনশীল ও সহানুভূতিশীল থাকে। দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। এর বাইরে প্রচলিত হরতাল-ধর্মঘটের পন্থা একটা জংলী পন্থা বৈ কিছুই নয়।
অমুসলিম রাষ্ট্রে মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণের সকল প্রকার ইসলামী প্রচেষ্টাই হ’ল ‘জিহাদ’। যখন তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয় এবং তাওহীদের ঝান্ডাকে সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে হয়। কিন্তু যদি বিনা প্রচেষ্টায় অনৈসলামী আইন মেনে নেওয়া হয় এবং তার উপর কোন মুসলমান সন্তুষ্ট থাকে, তাহ’লে সে অবশ্যই কবীরা গোনাহগার হবে। সাধ্যমত চেষ্টা সত্ত্বেও বাধ্য হ’লে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাইতে হবে এবং শাসকের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করতে হবে।
(খ) শাসক মুসলিম ফাসেক হলে সে অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ أَنْكَرَ فَقَدْ بَرِئَ وَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ سَلِمَ وَلَكِنْ مَنْ رَضِىَ وَتَابَعَ، قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ أَفَلاَ نُقَاتِلُهُمْ؟ قَالَ لاَ مَا صَلَّوْا، لاَ مَا صَلَّوْا- ‘তোমাদের উপর অনেক শাসক নিযুক্ত হবে। যাদের কোন কাজ তোমরা পসন্দ করবে এবং কোন কাজ অপসন্দ করবে। এক্ষণে যে ব্যক্তি উক্ত অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি তা অপসন্দ করবে, সে (মুনাফেকী থেকে) নিরাপদ থাকবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট থাকবে ও তার অনুসরণ করবে। এ সময় ছাহাবীগণ বললেন, আমরা কি ঐ শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? রাসূল (ছাঃ) বললেন, না। যতক্ষণ তারা ছালাত আদায় করে। না, যতক্ষণ তারা ছালাত আদায় করে’।
[ মুসলিম হা/১৮৫৪, শারহুস সুন্নাহ হা/২৪৫৯, মিশকাত হা/৩৬৭১। ]
অন্য হাদীছে এসেছে
وَأَنْ لاَ نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ قَالَ إِلاَّ أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ فِيهِ بُرْهَانٌ ‘আল্লাহর পক্ষ হ’তে প্রমাণ ভিত্তিক সুস্পষ্ট কুফরী না দেখা পর্যন্ত মুসলিম শাসকদের আনুগত্যমুক্ত হওয়া যাবে না’।
[ বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৬৬৬। ]

[1]. শারহুস সুন্নাহ, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৯৬, ৩৬৬৪ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়।
[2]. আবুদাঊদ হা/৪৩৪৪, তিরমিযী; মিশকাত হা/৩৭০৫।
[3]. আহমাদ হা/১৫৩৬৯; হাকেম; আলবানী, যিলালুল জান্নাহ হা/১০৯৮, সনদ ছহীহ।
[4]. মুসলিম হা/১৮৫৪, শারহুস সুন্নাহ হা/২৪৫৯, মিশকাত হা/৩৬৭১।
[5]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৬৬৬

সন্তান জন্নের পর পিগা মাতার করনিয় কী?


আল হামদু লিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ:

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সন্তান-সন্ততি আল্লাহর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ। এটি যে কত বড় দান, তা কেবল সেই দম্পতিই জানে, যাদের আল্লাহ এই নেয়ামত থেকে মাহরূম রেখেছেন। আল্লাহ বলেন: “তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে করে দেন বন্ধ্যা, তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।“ [ সূরা শূরা/৪৯-৫০]

যার কোলে ও যার ঘরে এই নেয়ামতের আগমন ঘটবে, সেই সৌভাগ্যবান। আর তার জন্য ইসলাম দিয়েছে কিছু উপদেশ কিছু আদেশ যা প্রমাণ করে যে ইসলাম একটি সর্বজনীন সামাজিক ধর্ম এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। আমরা এখানে তারই কিছুটা বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

১- যে এই আশিসে ধন্য হবে, তাঁকে অভিনন্দন প্রদান করা: আল্লাহ বলেন:

وَ بَشَّرُوهُ بغلامٍ عليمٍ

“ অতঃপর তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্র-সন্তানের সুসংবাদ দিলো।“  [ যারিয়াত/২৮]

তাছাড়া ইসলামে প্রত্যেক আনন্দদায়ক বিষয়ে অভিনন্দন জানানো প্রমাণিত। যেমনটি কাআব ও তাঁর দুই সাথীর তওবা কবুলের ঘটনায় উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের তওবা কবূল করলে এবং এ বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ হলে সাহাবাগণ তাদের অভিনন্দন জানান। [ বুখারী ও মুসলিম] অভিনন্দন জানানোর সময় এই দুয়া বলা ভাল:

‘‘বারাকাল্লাহু লাকা ফিল্ মাওহূবি লাকা, ওয়া শাকারতাল ওয়াহিবা, ওয়া বালাগা আশুদ্দাহু, ওয়া রুযিকতা বিররাহু”। অর্থ: ‘‘আল্লাহ তোমার জন্য এই সন্তানে বরকত দান করুন, সন্তান দানকারী মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন, সন্তানটি পূর্ণ বয়সে পদার্পণ করুক এবং তার  সদাচারণ লাভে তুমি ধন্য হও”। [হিসনুল মুসলিম বাংলা/১৬২]

# দেশ ও সমাজে যদি নবজাতককে হাদিয়া দেওয়ার প্রথা থাকে তাহলে ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয় বরং সমাজের রীতি অনুযায়ী শিশুকে হাদিয়া দেওয়া অবৈধ নয়। [ ইবনে উসাইমীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ২/৩২৮]

২- কন্যা সন্তানের জন্মে অসন্তুষ্ট না হওয়া: কারণ তাও আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত। তাছাড়া কন্যা সন্তানের জন্মে অসন্তুষ্ট হওয়া যেমন ভাগ্যের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া তেমন জাহেলী যুগের লোকদের প্রথা সমর্থন করা। কারণ তারা মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকে মন্দ মনে করতো। আল্লাহ বলেন:  “তাদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায়।“ [ নাহল/৫৮]

৩- বাচ্চার কানে আযান দেওয়া: আবু রাফে তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন:

” رأيتُ  رسول الله صلى الله عليه و سلم أذّنَ في أُذُنِ الحسنِ ابن عليٍّ حين ولدتهُ فاطمة بالصلاة ” رواه أبو داود والترمذي و قال: هذا حديث صحيح.

“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আলীর পুত্র হাসানের কানে নামাযের আযানের মত আযান দিতে দেখেছি, যখন ফাতেমা (রাযি:) তাকে জন্ম দেয়।” হাদীসটিকে আবু দাউদ এবং তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী সহীহ বলেছেন। [তিরমিযী, অধ্যায়, আযাহী, অনুচ্ছেদ নং ১৫, হাদীস নং ১৫৫৩]

অন্য কিছু হাদীসে বাম কানে ইকামতের বর্ণনা এসেছে কিন্তু সেই হাদীসগুলি নিতান্তই দুর্বল। [দেখুন, তুহ্ফাতুল আহওয়াযী, ৫/৯০]  তাই সুন্নত হচ্ছে, নবজাতকের কানে আযান দেয়া। ডান কানে আযান আর বাম কানে একামন এমনটি নয়।

প্রকাশ থাকে যে অনেক আলেমের মতে নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার হাদীসগুলির মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। তাই তারা এই আযান দেয়াকেও অবৈধ বলেছেন। আর অনেকে হাদীসগুলি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা হওয়ায় ও পৌনঃপুনিক ভাবে উম্মতের মাঝে আমলটি সচল থাকায় জায়েজ বলেছেন। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন। [বিস্তারিত দেখুন, আউলাদ আউর ওয়ালেদাইন কি কিতাব/৭৭-৭৮]

# বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই আযান দিতে হবে। যেন তার কানে আল্লাহর মহত্ব বিষয়ক প্রথম আওয়াজ প্রবেশ করে এবং শয়তান দূরে চলে যায় ।

৪- তাহনীক করা:   খেজুর চিবিয়ে পানির মত করে শিশুর মুখে দেয়া যেন এর কিছুটা তার পেটে প্রবেশ করে। এটাকেই তাহনীক বলা হয়। তবে খেজুর না পাওয়া গেলে অন্য যে কোন মিষ্টি দ্রব্য যেমন মধু বা অন্য কিছু দ্বারাও এভাবে তাহনীক করা যায়। [নায়লুল আউতার, ৫-৬/১৭৯, ফাত্হুল বারী, ৯/৭২৮]

# তাহনীক সৎ ব্যক্তি কর্তৃক হওয়া উত্তম। [ নায়লুল আউতার, ৫-৬/১৭৯]

তাহনীক করা সুন্নত। আবু মুসা (রাযি:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘‘আমার ছেলে সন্তান হলে আমি তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসি, তিনি তার নাম রাখেন ইব্রাহীম এবং খেজুর দ্বারা তাহনীক করেন এবং তার জন্য বরকতের দুয়া দেন, তার পর বাচ্চাকে আমাকে ফিরিয়ে দেন।“  [বুখারী, অধ্যায়, আক্বীক্বা, অনুচ্ছেদ নং ১, হাদীস নং৫৪৬৭, মুসলিম নং ২১৪৫]

তাহনীক সুন্নত এর কারণ যাই হোক বর্তমান মেডিকেল তথ্যানুযায়ী এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সাধারণত: নবজাতকের বিশেষ করে তার ওজন যদি ২.৫ কে.জির কম হয় তাহলে এমন শিশুর মধ্যে গ্লুকোজ স্বল্পতা লক্ষ্য করা যায়। এই তাহনীক করার মাধ্যমে শিশুর এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। [ ইসলামী প্রশ্ন-উত্তর, ফাতাওয়া নং ১০২৯০৬]

৫- বাচ্চাকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো: মাতৃদুগ্ধ পান করা বাচ্চার অধিকার। তাছাড়া এই দুধ পান করার লাভ এবং এর গুরুত্ব বর্তমান মেডিকেল ও সমাজে দারুণ ভাবে স্বীকৃত। আল্লাহ বলেন: “আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়ানোর পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।“ [বাক্বারা/২৩৩]

৬- প্রথম দিনে বাচ্চার নামকরণ: বাচ্চার নাম যেমন জন্মের সপ্তম দিন অর্থাৎ আক্বীক্বার দিন নির্ধারণ করা সুন্নত তেমন প্রথম দিনেও নাম রাখা বৈধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

” وُلد لي الليلةَ غلامٌ فسمّيته باسمِ أبي إبراهيم “

“রাতে আমার পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, আমি আমার পিতার নামে তার নাম ইব্রাহীম রেখেছি”। [ বুখারী , অধ্যায় জানাযাহ, হাদীস নং ১৩০৩, মুসলিম, অধ্যায়, ফাযাইল হাদীস নং ২৩১৫]

৭-সপ্তম দিনে আক্বীকা ও নামকরণ: সেই জন্তুকে আক্বীকা বলা হয়, যা বাচ্চার জন্মে সপ্তম দিনে তার পক্ষ হতে জবাই করা হয়”। [ ফাতহুল বারী,৯/৭২৬]

বাচ্চার আক্বীকা এমন ‌এক প্রকার কুরবানী, যা সন্তান অর্জন কালে আল্লাহর এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা হয়। [ ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ,২/৩২৬]

ক-আক্বীকার বিধান: আক্বীকা করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। তাই যে ব্যক্তি আক্বীকা করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন অবশ্যই আক্বীকা করে। আর যার সামর্থ্য নেই তার উপর আক্বীকা জরুরী নয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ” مع الغلامِ عقيقةٌ فأهريقوا عنه دماً و أميطوا عنه الأذى “

অর্থ: ‘‘বাচ্চার আক্বীকা আছে। তাই তোমরা তার পক্ষ হতে কুরবানী করো এবং তার মাথার চুল পরিষ্কার কর। [ বুখারী, আক্বীকা, নং৫৪৭১]

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: ‘‘প্রত্যেক বাচ্চা তার আক্বীকার বিনিময়ে বন্ধক থাকে, সপ্তম দিনে তার পক্ষ হতে জবাই করা হবে এবং তার মাথা মুণ্ডন করা হবে এবং নাম রাখা হবে”। [সহীহ ইবনে মাজাহ,অধ্যায়, যাবাইহ, নং৩১৬৫, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ]

খ-আক্বীকার সময়সীমা: বাচ্চার জন্মে সপ্তম দিনে আক্বীকার সুন্নত সময়। যেমন উপরের হাদীসে বর্ণিত হলো। কেউ সপ্তম দিনে আক্বীকা না করতে পারলে ১৪তম দিনে করবে, এ তারিখেও সম্ভব না হলে ২১তম দিনেও করতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

  ” تُذبح لسبع أو لأربع عشرةَ أو لإحدى و عشرين ”  [ صحيح الجامع الصغير [

“সপ্তম দিনে জবাই করা হবে, কিংবা ১৪তম দিনে কিংবা ২১তম দিনে”। [ সহীহুল্ জামি আস্ সাগীর নং ৪০১১]

# এর পরে জীবনের যে কোন সময়ে আক্বীকা করা বৈধ কি না? উলামাগণ মতভেদ করেছেন। অনেকের মতে, সপ্তম দিন পেরিয়ে গেলে করা সুন্নত নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আক্বীকার সময়কে সপ্তম দিনের সাথে শর্তযুক্ত করেছেন। অনেকের মতে তার পরে যে কোন সময় করা যায়। কারণ হাদীসে উল্লেখ হয়েছে, বাচ্চা আক্বীকার বিনিময়ে বন্ধক থাকে। তাই বাচ্চাকে বন্ধক থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন।

গ-পুত্র ও কন্যা সন্তান, কার পক্ষ হতে কয়টি পশু আক্বীকা দিতে হবে?

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:  ” عن الغلامِ شاتان مكافئتان و عن الجارية شاة” صحيح أبوداود

“পুত্র সন্তানের পক্ষ হতে দুটি বরাবর ধরনের ছাগল এবং কন্যা সন্তানের পক্ষ হতে একটি ছাগল আক্বীকা দিতে হবে”।  [সহীহ আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৫৮]

৮-বাচ্চার চুল মুণ্ডন এবং চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য দান করা:

বাচ্চার বয়সের সপ্তম দিনে যেমন আক্বীকা করা সুন্নত, তেমন সেই দিন বাচ্চার মা চুলগুলো মুণ্ডন করা ও চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য সদকা করাও সুন্নত। আলী (রায়িঃ) বলেন:

” عقّ رسول الله – صلى الله عليه و سلم – عن الحسَن بشاةٍ و قال يا فاطمة احلقي رأسه و تصدقي بزنةِ شعره فضّةً ” رواه الترمذي في كتاب الأضاحي، باب العقيقة بشاة.

“আল্লাহর  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসানের পক্ষ হতে ছাগল আক্বীকা করেন এবং ফাতেমা (রাযি:) কে বলেন: তার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য সদকা করে দাও”।[ তিরমিযী, অধ্যায়, আযাহী, হাদীস নং ১৫১৯]

৯- খতনা করা: খতনা করা প্রকৃতিগত বিষয়, যা ইসলাম সমর্থন করেছে এবং তা গুরুত্বের সাথে পালন করেছে। তাই ফুকাহাদের মধ্যে ইমাম শাফেয়ী, মালিক ও আহমদ (রহঃ) এই আমলকে ওয়াজিব বলেছেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

 ” الفطرة خمسٌ الخِتان، والاستحدادُ، و قص الشاربِ و تقليمُ الأظفارِ و نتف الآباطِ. ” رواه البخاري في كتاب اللباس و مسلم في كتاب الطهارة.

“পাঁচটি বিষয় স্বভাবগত, খতনা করা, নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করা, মোচ কর্তন করা, নখ কর্তন করা এবং বগলের লোম ছিঁড়ে ফেলা”। [ বুখারী , অধ্যায়, লেবাস নং ৫৮৯১, মুসলিম, অধ্যায়, ত্বাহারাহ ]

# নবী  ইবরাহীম (আঃ) আশি বছর বয়সে নিজের খতনা করেছিলেন। [বুখারী, মুসলিম] এ দ্বারা ষিয়টির গুরুত্ব অনুমান করা যেতে পারে।

# খতনা করার নির্দিষ্ট কোন সময় সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, তাই সুবিধা মত যে কোন সময় করা যায়। তবে উলামা কেরামের মতে সাবালক হওয়ার পূর্বে তা করা ভাল।

নবজাতক সম্বন্ধে ইসলামের বিধানের এই কয়েকটি বিষয় সংক্ষিপ্তাকারে  আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরা হল। আল্লাহ যেন আমাদের সঠিক আমল করার তাওফীক দেন আমীন!

و صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه أجمعين

 লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী

আল খাফজী দাওয়াহ সেন্টার, সৌদী আরব।

সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী

জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদী আরব।

Tuesday, December 19, 2017

পুরুষের মাথার চুল কাটার পদ্ধতি



পুরুষের মাথার চুল কাটার পদ্ধতি

প্রশ্ন: ‘কুযা’ বলতে কী বুঝায়? কিছু কিছু যুবক যা করে থাকেন, তাদের মাথার সাইডের চুলগুলো কামাই করে মাঝখানের চুলগুলো রেখে দেন– এর বিধান কী?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিমকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:

চুলের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ হচ্ছে– সবগুলো চুল রেখে দেওয়া কিংবা সবগুলো চুল ফেলে দেওয়া। এমন ছিল না যে, তিনি কিছু অংশের চুল কামাই করতেন; আর কিছু অংশের চুল রেখে দিতেন।

বর্তমান যামানায় কিছু কিছু মুসলমান যা করে– মাথার কিছু অংশের চুল কামাই করে, কিছু অংশ রেখে দেয় এটি ‘কুযা’এর অন্তর্ভুক্ত, যা করতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। এই ‘কুযা’ কয়েক প্রকার হতে পারে:

১। মাথার কিছু কিছু জায়গার চুল কামাই করে অপর কিছু কিছু জায়গা রেখে দেওয়া।

২। মাথার সাইডের চুলগুলো কামাই করে মাঝখানের চুলগুলো রেখে দেওয়া।

৩। মাথার মাঝখানের চুলগুলো কামাই করে সাইডের চুলগুলো রেখে দেওয়া।

৪। মাথার সামনের চুলগুলো কামাই করে পিছনের চুলগুলো রেখে দেওয়া।

৫। মাথার পিছনের চুলগুলো কামাই করে সামনের চুলগুলো রেখে দেওয়া।

৬। মাথার এক পার্শ্বের কিছু চুল কামাই করে বাকীগুলো রেখে দেওয়া।

সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে ইবনে উমর (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হাদিসে এ সবগুলো স্টাইল হারাম হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। সে হাদিসে এসেছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘কুযা’ করা থেকে তথা শিশুর মাথার একাংশের চুল কামাই করে অপর অংশের চুল রেখে দিতে নিষেধ করেছেন। ইবনে উমর (রাঃ) থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন যে, এক শিশুর মাথার কিছু চুল কামাই করা হয়েছে, আর কিছু চুল রেখে দেওয়া হয়েছে তখন তিনি তাদেরকে এরূপ করতে বারণ করেন। তিনি বলেন: “তোমরা সম্পূর্ণ মাথা কামাই করবে, কিংবা সম্পূর্ণ মাথার চুল রেখে দিবে।” উমর (রাঃ) থেকে মারফু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, “শিঙ্গা লাগানো ব্যতীত মাথার শুধু পিছনের দিকের চুল কামাই করা অগ্নি উপাসকদের বৈশিষ্ট্য”। সুনানে আবু দাউদে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি এক বালকের দুইটি বেণী দেখে কিংবা দুইটি জুটি দেখে বললেন: এই দুইটি কামাই করে ফেল কিংবা ছাটাই করে ফেল। কেননা এটা ইহুদীদের স্টাইল।”। মারওয়াযি বলেন: আমি আবু আব্দুল্লাহ্‌কে (আহমাদ ইবনে হাম্বলকে) মাথার পিছনের চুল কামাই করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন: এটি অগ্নিপুজারীদের কাজ। যে ব্যক্তি যাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই দলভুক্ত।

ফাতাওয়াল মারআ আল-মুসলিমা (২/৫১০)

Sunday, December 17, 2017

আপনার স্ত্রীকে ভালবাসুন




আপনার স্ত্রীকে ভালবাসুন

সমস্ত বিবাহিত ভাইদের জন্য

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে আপনার চায়ে ছোট একটি চুমুক দেয়। কারণ, সে নিশ্চিত হতে চায় চা টি আপনার পছন্দ মত হয়েছে কিনা।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে আপনাকে নামাজ পড়তে জোর করে। কারণ সে আপনারই সাথে জান্নাতে যেতে চায়।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে আপনাকে সন্তানদের সাথে খেলা করতে বলে। কারণ সন্তানদের অভিভাবক সে একা নয়।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে আপানাকে নিয়ে ঈর্ষান্বিত হয়। কারণ, সে অন্য সমস্ত মানুষকে রেখে শুধুমাত্র আপনাকেই বেঁছে নিয়েছে।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন তার কিছু দোষ ত্রুটি আপনাকে বিরক্ত করে। কারণ, আপনারও এমন অনেক দোষ ত্রুটি রয়েছে।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন তার রান্না খারাপ হয়। কারণ, সে ভাল রান্নার চেষ্টা করেছে।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সকাল বেলায় তাকে উষ্কখুষ্ক দেখায়। কারণ, সে আবার আপানরই জন্য সাজগোজ করবে।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে আপনাকে সন্তানের লেখাপড়ায় সাহায্য করতে বলে। কারণ সে চায় আপনাকে সংসারের অংশ হিসেবে পেতে।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে জানতে চায় তাকে মোটা লাগছে কিনা। কারণ, আপনার মতামত তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ; এজন্য তাকে বলুন সে সুন্দর।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন তাকে সুন্দর দেখায়। কারণ সে আপনারই, তাই প্রশংসা করুন।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে তৈরি হতে দীর্ঘ সময় পার করে দেয়। কারণ সে চায় তাকে আপনার চোখে সবচেয়ে সুন্দর লাগুক।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে এমন কোন উপহার দেয় যা আপনার পছন্দ হয়নি। কারণ সে আপনাকে খুশি করতে চায়, তাই তাকে বলুন, ঠিক এমন উপহারই আপনার প্রয়োজন ছিল।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন তার মধ্যে কোন বদঅভ্যাস গড়ে ওঠে। কারণ আপনারও এমন অনেক বদঅভ্যাস রয়েছে; প্রজ্ঞা আর কোমলতার সাথে তার সেই বদঅভ্যাস পরিবর্তন করানোর সময় এখনো আপনার আছে।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে অকারণেই কাঁদে। তাকে বলুন সব ঠিক হয়ে যাবে।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে PMS বা মাসিক অবসাদ এ ভোগে। তার জন্য চকলেট আনুন, তার পায়ের পাতায় ও কোমরে মালিশ করে দিন, এবং তার সাথে নিছকই গল্প করুন (বিশ্বাস করুন এতে কাজ হয়!)

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যদি সে অসন্তোষজনক কিছু করে ফেলে। এরকম হতেই পারে এবং এর রেষ একসময় কেটেও যাবে।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে আপনার কাপড়ে ভুলবশতঃ দাগ লাগিয়ে ফেলে। একটি নতুন জামা আপানি এমনিতেও কিনতেন।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে আপনাকে বলে আপনার কিভাবে ড্রাইভ করা উচিৎ। সে শুধু চায় আপনি নিরাপদে থাকুন।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…যখন সে তর্ক করে। সে তাই চায় যা আপানাদের দুইজনের জন্যই ভাল হয়।

স্ত্রী কে ভালবাসুন…সে শুধু আপনারই। এটি ছাড়া তাকে ভালবাসার অন্য কোন বিশেষ কারণেরও প্রয়োজন নেই!!!

এই সবই নারীসুলভ স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। আর স্ত্রী আপনার জীবনেরই একটি অংশ যাকে রানীর মত মর্যাদা দেওয়া উচিৎ।

মহানবী (সাঃ) নারীদের বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেনঃ

• তোমরা স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও (বুখারী ৩৩৩১, মুসলিম ৪৭)

• তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে তার স্ত্রীদের কাছে উত্তম (তিরমিজি ১১৬২)

বিদায় হজ্জ এ নবী (সাঃ) আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করে উপদেশ ও নসিহত দান করে বলেনঃ

তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর।…তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে, অনুরূপ তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে। তোমাদের অধিকার হল, তারা যেন তোমাদের বিছানায় ওই সব লোককে আসতে না দেয় যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর এবং তারা যেন ওই সব লোককে তোমাদের বাড়ীতে প্রবেশ করার অনুমতি না দেয় যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তাদেরকে ভালরূপে খেতে-পরতে দেবে। [তিরমিজি ১১৬৩, ইবনু মাজাহ ১৮৫১; তাহকীক রিয়াযুস স্বালেহীন পৃষ্ঠা ১৬০]

Thursday, December 14, 2017



জুমআয় উপস্থিত ব্যক্তির কর্তব্য

নামাযীর জন্য যথাসম্ভব ইমামের নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করা কর্তব্য। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমরা আল্লাহর যিকরে উপস্থিত হও এবং ইমামের নিকটবর্তী হও। আর লোকে দূর হতে থাকলে বেহেশত প্রবেশেও দেরী হবে তার; যদিও সে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে।” (আবূদাঊদ, সুনান ১১০৮নং)

জুমআর দিন নামাযী মসজিদে এসে যেখানে জায়গা পাবে সেখানে বসে যাবে। দেরী করে এসে (সামনের কাতারে ফাঁক থাকলেও) কাতার চিরে সামনে যাওয়া এবং তাতে অন্যান্য নামাযীদেরকে কষ্ট দেওয়া বৈধ নয়।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক জুমআর দিনে এক ব্যক্তি লোকেদের কাতার চিরে (মসজিদের ভিতর) এল। সে সময় নবী (সাঃ) খুতবা দিচ্ছিলেন। তাকে দেখে নবী (সাঃ) বললেন, “বসে যাও, তুমি বেশ কষ্ট দিয়েছ এবং দেরী করেও এসেছ।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ তারগিব ৭১৩ নং)

খুতবা চলাকালে মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তির জন্য নামায নিষিদ্ধ। কিন্তু এই সময়ে কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে তার জন্য হাল্কা করে ২ রাকআত নামায পড়া বিধেয়। যেমন কাউকে নামায না পড়ে বসতে দেখলে খতীবের উচিত তাকে ঐ নামায পড়তে আদেশ করা। খুতবা শোনা ওয়াজেব হলেও এ নামাযের গুরুত্ব দিয়েছেন খোদ মহানবী (সাঃ)। একদা খুতবা চলাকালে এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়লে তিনি তাকে বললেন, “তুমি নামায পড়েছ কি?” লোকটা বলল, না। তিনি বললেন, “ওঠ এবংহাল্কা করে ২ রাকআত পড়ে নাও।” (বুখারী ৯৩০, মুসলিম,  আবূদাঊদ, সুনান ১১১৫-১১১৬, তিরমিযী, সুনান ৫১০নং) অতঃপর তিনি সকলের জন্য চিরস্থায়ী একটি বিধান দেওয়ার উদ্দেশ্যে লোকেদেরকে সম্বোধন করে বললেন, “তোমাদের কেউযখন ইমামের খুতবা দেওয়া কালীন সময়ে উপস্থিত হয়, সে যেন (সংক্ষেপে) ২ রাকআত নামায পড়ে নেয়।” (বুখারী, ১১৭০, মুসলিম, সহীহ ৮৭৫, আবূদাঊদ, সুনান ১১১৭নং)

একদা হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) মসজিদ প্রবেশ করলেন। তখন মারওয়ান খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি নামায পড়তে শুরু করলে প্রহ্‌রীরা তাঁকে বসতে আদেশ করল। কিন্তু তিনি তাদের কথা না শুনেই নামায শেষ করলেন। নামায শেষে লোকেরা তাকে বলল, আল্লাহ আপনাকে রহ্‌ম করুন। এক্ষনি ওরা যে আপনার অপমান করত। উত্তরে তিনি বললেন, আমি সে নামায ছাড়ব কেন, যে নামায পড়তে নবী (সাঃ)-কে আদেশ করতে দেখেছি। (তিরমিযী, সুনান ৫১১নং)

বলা বাহুল্য, খুতবা শুরু হলে লাল বাতি জ্বেলে দেওয়া, অথবা কাউকে ঐ ২ রাকআত নামায পড়তে দেখে চোখ লাল করা, অথবা তার জামা ধরে টান দেওয়া, অথবা খোদ খতীব সাহেবের মানা করা সুন্নাহ্‌-বিরোধী তথা বিদআত কাজ।

জুমআর আযানের সময় মসজিদে এলে দাঁড়িয়ে থেকে আযানের উত্তর না দিয়ে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়ে খুতবা শোনার জন্য বসে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৩৫, ৩৪৯)

প্রকাশ থাকে যে, আযানের উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ৩৪০পৃ:) আর খুতবা শোনা ওয়াজেব। সুতরাং আযানের সময় পার করে খুতবা শুরু হলে নামায পড়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ওয়াজেব না হলেও ঐ সময় মহানবী (সাঃ)-এর মহা আদেশ পালন করা জরুরী।

ইমামের দিকে চেহারা করে বসা মুস্তাহাব। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) যখন মিম্বরে চড়তেন, তখন আমরা আমাদের চেহারা তাঁর দিকে ফিরিয়ে বসতাম।’ (তিরমিযী, সুনান ৫০৯নং)

পরিধানে লুঙ্গি বা লুঙ্গি জাতীয় এক কাপড় পরে খুতবা চলাকালে বসার সময় উভয় হাঁটুকে খাড়া করে রানের সাথে লাগিয়ে উভয় পা-কে দুইহাত দ্বারা জড়িয়ে ধরে অথবা কাপড় দ্বারা বেঁধে বসা বৈধ নয়। (আবূদাঊদ, সুনান ১১১০, তিরমিযী, সুনান ৫১৪নং)  কারণ, এতে শরমগাহ্‌ প্রকাশ পাওয়ার, চট করে ঘুম চলে আসার এবং তাতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাই।

খুতবা শোনা ওয়াজেব। আর এ সময় সকল প্রকার কথাবার্তা, সালাম ও সালামের উত্তর, হাঁচির হামদের জবাব, এমনকি আপত্তিকর কাজে বাধা দেওয়াও নিষিদ্ধ।

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “জুমআর দিন ইমামের খুতবা দানকালে কথা বললে তুমি অনর্থ কর্ম করলে এবং (জুমুআহ) বাতিল করলে।” (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, সহিহ তারগিব ৭১৬ নং)

উক্ত হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “জুমআর দিন ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় যদি তুমি তোমার (কথা বলছে এমন) সঙ্গীকে ‘চুপ কর’ বল তাহলে তুমিও অসার কর্ম করবে।” (বুখারী ৯৩৪, মুসলিম, সহীহ ৮৫১নং, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্‌), ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ)

‘অসার বা অনর্থক কর্ম করবে’ এর একাধিক ব্যাখ্যা করা হয়েছে; যেমন, তুমি জুমআর সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। অথবা তোমারও কথা বলা হবে। অথবা তুমিও ভুল করবে। অথবা তোমার জুমুআহ বাতিল হয়ে যাবে। অথবা তোমার জুমুআহ যোহরে পরিণত হয়ে যাবে -ইত্যাদি। তবে বিশেষজ্ঞ উলামাদের নিকট শেষোক্ত ব্যাখ্যাই নির্ভরযোগ্য। কারণ, এরুপ ব্যাখ্যা নিম্নোক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

আব্দুল্লাহ বিন আম্‌র বিন আস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করল, তার স্ত্রীর সুগন্ধি (আতর) থাকলে তা  ব্যবহার করল, উত্তম লেবাস পরিধান করল, অতঃপর (মসজিদে এসে) লোকেদের কাতার চিরে (আগে অতিক্রম) করল না এবং ইমামের উপদেশ দানকালে কোন বাজে কর্ম করল না, সে ব্যক্তির জন্য তা উভয় জুমআর মধ্যবর্তী কৃত পাপের কাফফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কর্ম করল এবং লোকেদের কাতার চিরে সামনে অতিক্রম করল সে ব্যক্তির জুমুআহ যোহরে পরিণত হয়ে যাবে।” (আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, সহিহ তারগিব ৭২০নং)

মহানবী (সাঃ) বলেন, “জুমআর দিন ৩ শ্রেণীর মানুষ (মসজিদে) উপস্থিত হয়। প্রথম শ্রেণীর মানুষ উপস্থিত হয়ে বাজে কথা বলে; তার সেটাই হল প্রাপ্য। দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ উপস্থিত হয়ে দুআ করে; আর সে এমন লোক, যে আল্লাহর কাছে দুআ করে, আল্লাহ তার দুআ কবুল করেন অথবা না করেন। আর তৃতীয় শ্রেণীর মানুষ উপস্থিত হয়ে চুপ ও নির্বাক থাকে, কোন মুসলিমের কাঁধ ডিঙিয়ে (কাতার চিরে) আগে যায় না এবং কাউকে কোন প্রকার কষ্ট দেয় না। এই শ্রেণীর মানুষের জন্য তার ঐ কাজের ফলে তার ঐ জুমুআহ থেকে আগামী জুমুআহ পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত ৩ দিনে (অর্থাৎ, ১০ দিনে) কৃত গুনাহর কাফফারা হবে। কেননা আল্লাহ আয্‌যা অজাল্ল্‌ বলেন, (من جاء بالحسنة فله عشر أمثالها) (অর্থাৎ, যে ব্যক্তি একটি সওয়াবের কাজ করবে, সে তার ১০ গুণ সওয়াব লাভ করবে।)” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ১১১৩নং)

আলকামাহ্‌ বিন আব্দুল্লাহর সাথে তাঁর এক সাথী খুতবা চলাকালে কথা বলছিল। তিনি তাকে চুপ করতে বললেন। নামাযের পর ইবনে উমার (রাঃ)-এর কাছে এ কথা উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, ‘তোমার তো জুমুআহই হয়নি। আর তোমার সাথী হল একটা গাধা।’ (ইবনে আবী শাইবা ৫৩০৩নং)

প্রকাশ থাকে যে, ইমাম মিম্বরের উপর বসে থাকা অবস্থায়, অর্থাৎ খুতবা বন্ধ থাকা অবস্থায় কথা বলা অবৈধ নয়। (ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু১৭৩পৃ:) যেমন ইমামের খুতবা শুরু না করা পর্যন্ত (প্রয়োজনীয়) কথাবার্তা (এমনকি আযানের সময়ও) বলা বৈধ। ষা’লাবাহ্‌ বিন আবী মালেক কুরাযী বলেন, হযরত উমার ও উসমানের যুগে ইমাম বের হলে আমরা নামায ত্যাগ করতাম এবং ইমাম খুতবা শুরু করলে আমরা কথা বলা ত্যাগ করতাম। (ইবনে আবী শাইবা, তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ৩৪০পৃ:)

খুতবা চলা অবস্থায় কেউ মসজিদ এলে মসজিদে প্রবেশ করার আগে রাস্তায় খুতবা শুনতে পেলে রাস্তাতেও কারো সঙ্গে কথা বলাও বৈধ নয়।

বৈধ নয় খুতবা চলা অবস্থায় হাতে কোন কিছু নিয়ে ফালতু খেলা করা। যেমন মিসওয়াক করা, তাসবীহ-মালা (?) নিয়ে খেলা করা, মসজিদের মেঝে, কাঁকর বা কুটো স্পর্শ করে খেলা করা ইত্যাদি। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করে জুমআর উদ্দেশ্যে (মসজিদে) উপস্থিত হয়। অতঃপর মনোযোগ সহকারে (খুতবাহ্‌) শ্রবণ করে ও নীরব থাকে সেই ব্যক্তির ঐ জুমুআহ  থেকে দ্বিতীয় জুমুআহর মধ্যবর্তীকালে সংঘটিত এবং অতিরিক্ত তিন দিনের পাপ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (খুতবা চলাকালে) কাঁকর স্পর্শ করে সে অসার (ভুল) কাজ করে।” (মুসলিম, সহীহ ৮৫৭ নং, আবূদাঊদ, সুনান ১০৫০, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান)

খুতবা চলাকালে তন্দ্রা (ঢুল) এলে জায়গা পরিবর্তন করে বসা বিধেয়। এতে তন্দ্রা দূরীভূত হয়ে যায়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউমসজিদে বসে ঢুললে সে যেন তার বসার জায়গা পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় বসে।” (আবূদাঊদ, সুনান ১১১৯ নং, তিরমিযী, সুনান, জামে ৮০৯নং)

কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে সেখানে বসা, কেউ কোন কারণে জায়গা ছেড়ে উঠে গেলে এবং সে ফিরে আসবে ধারণা হওয়া সত্ত্বেও তার সেই জায়গায় বসা বৈধ নয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যখন তোমাদের কেউ নিজ জায়গা ছেড়ে উঠে যায় এবং পরক্ষণে সে ফিরে আসে, তাহলে সেই ঐ জায়গার অধিক হ্‌কদার।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, সহীহ)

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) কেউ তার জায়গা ছেড়ে উঠে গেলে সে জায়গায় বসতেন না। (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, সহীহ)

কিন্তু খুতবা শুনতে শুনতে ঘুম এলে (কথা না বলে) ইঙ্গিতে পাশের সাথীর সাথে জায়গা বদল করা উত্তম। যেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেন, “যখন তোমাদের কেউ জুমআর দিন ঢুলতে শুরু করে, তখন তার উচিত তার সঙ্গীর জায়গায় গিয়ে বসা এবং তার সঙ্গীর উচিত তার ঐ জায়গায় বসা।” (বায়হাকী, জামে ৮১২নং)

জ্ঞাতব্য যে, ইমামের কলেমা অথবা দরুদ পড়ার সাথে সাথে মুসল্লীদের সমস্বরে সশব্দে তা পড়া বিদআত। (মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্‌ ২৬৫পৃ:)

প্রকাশ থাকে যে, বিশেষ করে জুমুআহ বা ঈদের নামাযে অত্যন্ত ভিঁড়ের ফলে যদি সিজদাহ করার জায়গা না পাওয়া যায়, তাহলেও জামাআতে নামায পড়তে হবে। আর এই অবস্থায় সামনের নামাযীর পিঠে সিজদা করতে হবে। ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ) আমাদের কাছে সিজদার সূরা পড়তেন। অতঃপর সিজদায় জায়গায় তিনি সিজদাহ করতেন এবং আমরাও সিজদাহ করতাম। এমনকি ভিঁড়ের ফলে আমাদের কেউ সিজদাহ করার মত জায়গা না পেলে অপরের (পিঠের) উপরে সিজদাহ করতাম।’ (বুখারী ১০৭৬নং)

হযরত উমার বলেন, পিঠের উপর উপর সিজদাহ করতে হবে। এই মত গ্রহণ করেছেন কুফাবাসীগণ, ইমাম আহমাদ এবং ইসহাক। পক্ষান্তরে আত্বা ও যুহ্‌রী বলেন, সামনের লোকের উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করে সে উঠে গেলে তারপর সিজদাহ করবে। আর এমত গ্রহণ করেছেন ইমাম মালেক ও অধিকাংশ উলামাগণ। (কিন্তু এর ফলে ইমামের বিরোধিতা হবে।) ইমাম বুখারীর লিখার ভঙ্গিতে বুঝা যায় যে, তিনি মনে করেন, এই অবস্থায় নামাযী নিজ সামথ্য অনুযায়ী সিজদাহ করবে। এমনকি নিজ ভায়ের পিঠে সিজদাহ করতে হলে তাও করবে। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৬৫২)

অবশ্য (মাসজিদুলহারামাইনে) সামনে মহিলা পড়লে সিজদাহ না করে একটু ঝুঁকে বা ইশারায় নামায আদায় করবে।

Wednesday, December 13, 2017

গ্রন্থঃ প্রচলিত সালাতের ১০০ টি ভুল

গ্রন্থঃ প্রচলিত সালাতের ১০০ টি ভুল
অধ্যায়ঃ ১০০টি ভুল এবং তার বিবরন সমূহ


২৪। প্রচলিত ভুলঃ অধিকাংশ মুসল্লী শুধুমাত্র তাকবীর তাহরীমা অর্থাৎ সলাত শুরুর তাকবীর বলার সময় ‘রফউল ইয়াদাঈন’ বা হাত উত্তোলন করে থাকে; কিন্তু পরবর্তীতে রুকুর আগে ও পরে তা করে না (আবার অনেকে তাকবীরে তাহরীমার সময়ও করে না)- এটা সুন্নাত বিরোধী।

* রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আবদুল্লাহ ইবনে‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি তিনি যখন সলাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং তিনি যখন রূকু’র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন (হাত উঠাতেন)। আবার যখন রূকু হতে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন। ইমাম বুখারী এটা বর্ণনা করেছেন। তাঁর অপর বর্ণনায় এটাও আছে যে, যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় রাক‘আত হতে তৃতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়াতেন তখনও দুই হাত (কাঁধ বরাবর) উঠাতেন। (সহীহ বুখারী-১/১০২ পৃঃ, সহীহ মুসলিম-১৬৮ পৃঃ, আবু দাউদ-১/১০৪, ১০৫ পৃঃ, তিরমিযী-১/৫৯ পৃঃ, নাসাঈ-১৪১-১৫১, ১৬২ পৃঃ, ইবনু খুজাইমাহ-৯৫,৯৬, মিশকাত-৭৫ পৃঃ, ইবনে মাজাহ-১৬৩ পৃঃ,, যা‘আদুল মা‘আদ-১/১৩৭, ১৩৮, ১৫০ পৃঃ, হিদায়া দিরায়াহা-১১৩-১১৫ পৃঃ, মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য-২/৭৩৮-৭৩৯, ৭৪৯, ৭৪১, ৭৪৫ পৃঃ, ইসলামিয়াত বি,এ হাদীস পর্ব-১২৬-১২৯ পৃঃ)

            উল্লেখ্য যে, দু’হাত তুলা প্রসঙ্গে কিছু লোক সহীহ হাদীসের উপর আমল না করার জন্য ভান করে মিথ্যা ও বানোয়াট কথার আশ্রয় নিয়ে বলে যে, ইসলামের প্রথম যুগে পুতুল পুজারী নও মুসলিমরা সলাতের সময়ও বগলে পুতুল নিয়ে আসতো। তাই নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তাদেরকে রুকুতে যাবার ও রুকু হতে মাথা তোলার সময় দু’হাত তুলতে বলেছিলেন। এসব কথা কোন হাদীসে তো দূরের কথা এমনকি ইতিহাসেও প্রমাণহীন। বরং তা ভিত্তিহীন মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়। যারা এসব কথা বলে তাদের ভয় করা উচিৎ যে, এই মিথ্যা অপবাদটি স্বয়ং রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর উপর ও তাঁর সাহাবীদের উপর পড়ে (নাউযুবিল্লাহ) কারণ তাঁরা মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত রুকুর পূর্বেও পরে হস্তদ্বয় উত্তোলন করেছেন। (বায়হাকী, তালখীসুল হাবীব ৮১ পৃঃ আদদেরায়াহ-৮৫ পৃঃ) সাবধান! এ অপবাদই জাহান্নামী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই মর্মে আবু দাউদে বর্ণিত যা সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেনঃ তিনি (স.) কেবলমাত্র তাকবীরে তাহরীমার সময় ১ বার দু’হাত তুলতেন। (আবু দাউদ, মিশকাত, ৭৭ পৃঃ) কিন্তু এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম আবু দাউদ (রহঃ.) নিজেই বলেন, হাদীসটি সহীহ নয় (মিশকাত ৭৭ পৃঃ) মোল্লা আলী ক্বারী আল হানাফী (রহঃ) বলেনঃ সলাতের রুকুতে যাবার সময় এবং রুকু হতে উঠার সময় দু’হাত না তুলা সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই বাতিল হাদীস। তন্মধ্যে একটিও সহীহ নয়- যেমন ইবনে মাসুদের (রা.) হাদীস। (মাউযুআতে কাবীর ১১০ পৃঃ আইনী তুহফা-১/১৩১ পৃঃ) লক্ষনীয় যে, হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট মুহাদ্দীস আল্লামাহ আইনী আল-হানাফী (রহঃ) রুকুতে যাওয়ার আগে দু’হাত তুলার ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে লিখেছেনঃ ইমাম আবু হানীফা হতে বর্ণিত যে, তা অর্থাৎ রফউল ইয়াদাইন ত্যাগ করলে গুনাহ হবে। (ওমদাতুল ক্বারী-দারুল ফিকর ছাফা, ৫/২৭ পৃঃ আইনী তুহফা-১/১৩১ পৃঃ) অতএব প্রতিটি মুসলিমের প্রতি আমার অনুরোধ আল্লাহকে ভয় করুন, গোড়ামী ও মিথ্যার আশ্রয় বাদ দিয়ে সহীহ হাদীসের উপর আমল করুন। কারণ ইমাম আবু হানীফা (রহ.) বলেছেন, ‘সহীহ হাদীস পেলে সেটাই আমার মাযহাব বলে গণ্য করবে।’

http://www.hadithbd.com/shareqa.php?qa=3193

অহংকার একটি খারাপ গুণ।


অহংকার এমন একটি গুণ যা শুধু আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য



অহংকার এমন একটি গুণ যা শুধু আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। যে ব্যক্তি এ গুণ নিয়ে আল্লাহর সাথে টানাটানি করে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন, তার প্রতাপ নস্যাৎ করে দেন ও তার জীবনকে সংকুচিত করে দেন।

আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“আল্লাহ তাআলা বলেছেন: সম্মান হচ্ছে- আল্লাহর পরনের কাপড়; আর অহংকার হচ্ছে- আল্লাহর চাদর। যে ব্যক্তি এটা নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করে আমি তাকে শাস্তি দেই।” [সহিহ মুসলিম (২৬২০)]

নববী বলেন:

সহিহ মুসলিমের সব কপিতে এভাবে আছে। ازاره ও رداؤه শব্দদ্বয়ের ه জমির (সর্বনাম) দ্বারা আল্লাহকে বুঝানো হচ্ছে। এখানে বাক্যের কিছু অংশ উহ্য রয়েছে সেটা হচ্ছে-قال الله تعالى : ومن ينازعني ذلك أعذبه (অর্থ- আল্লাহ বলেন: যে ব্যক্তি সেটা নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করবে আমি তাকে শাস্তি দিব)।

আমার সাথে ‘টানাটানি’ করবে এর অর্থ- এ গুণ লালন করবে; ফলে সে অংশীদার এর পর্যায়ে পড়বে। এটি অহংকারের কঠিন শাস্তি ও অহংকার হারাম হওয়ার স্পষ্ট ঘোষণা।[শারহু মুসলিম (১৬/১৭৩)]

যে ব্যক্তি অহংকার করতে চায় ও বড়ত্ব দেখাতে চায় আল্লাহ তাকে নীচে ছুড়ে ফেলে দেন ও বেইজ্জত করেন। যেহেতু সে তার মূলপরিচয়ের বিপরীতে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা করেছে তাই আল্লাহ তাকে তার ইচ্ছার বিপরীতে শাস্তি দিয়ে দেন। বলা হয়: শাস্তি আমলের সম জাতীয় হয়ে থাকে।

যে ব্যক্তি মানুষের উপর অহংকার করে কিয়ামতের দিন তাকে মানুষের পায়ের নীচে মাড়ানো হবে। এভাবে আল্লাহ তাআলা অহংকারের কারণে তাকে লাঞ্ছিত করবেন। আমর ইবনে শুয়াইব তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন:
“কিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে ছোট ছোট পিপীলিকার ন্যায় মানুষের আকৃতিতে হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে। অপমান ও লাঞ্ছনা তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলবে। তাদেরকে জাহান্নামের একটি জেলখানায় একত্রিত করা হবে, যার নাম হবে “বুলাস। আগুন তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঢেকে ফেলবে। জাহান্নামীদের শরীরের ঘাম তাদেরকে পান করতে বাধ্য করা হবে।”। [সুনানে তিরমিজি (২৪৯২), আলবানী সহিহ তিরমিজি গ্রন্থ (২০১৫) এ হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ



"আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ"-এর আমীর
প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, 
এক নির্ভীক, নির্লোভ, নিরহংকার সমাজ সংস্কারকের নাম। যিনি ইসলামের জন্য উৎসর্গ করেছেন নিজের জীবন এবং গোটা পরিবারকে। যিনি ইচ্ছা করলে অনেক বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে পারতেন, যেহেতু প্রত্যেক মাসে তার লেখা লক্ষ লক্ষ টাকার বই বিক্রি হয়। কিন্তু তিনিই একমাত্র লেখক, যিনি তার পারিশ্রমিকের কোন মূল্য নেন না।
একবার সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর দু'টি পুস্তিকা ছাপানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করে টেলিফোনে তাঁর কাছে জানতে চান যে তাঁকে কত ওনারিয়াম (সম্মানী) দিতে হবে। তিনি দ্যর্থহীন কন্ঠে উত্তর দেন- আপনাদের বই ছাপানোর প্রয়োজন, ছাপিয়ে বিতরণ করুন। ওনারিয়াম আমার আল্লাহ্ আমাকে দেবেন, কোন মানুষ না। 
এমন আখেরাতমুখী নেতার সাথে দুনিয়া পূজারী ব্যক্তিরা যে টিকে থাকতে পারবেন না, তা আলাদা করে বলার কোন অবকাশ রাখে না।
আর, হ্যাঁ.......
পিচ টিভি বাংলা চালুর পেছনে যার অসামান্য অবদান তিনি আর কেউ নন, প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। সৌদি বাদশাহ-র মেহমান হিসেবে হজ্ব পালন করেছেন অনেক আগেই। ২০১২ সালে রমযান মাসে ওমরার সফরে বাংলা ভাষার নির্ভরযোগ্য আলেম শায়েখ মতিউর রহমান মাদানী কিংবা ড. জাকির নায়েকের মত পৃথিবীখ্যাত দ্বাঈ যার সাথে সাক্ষাৎ ও ইফতার করার জন্য মসজিদুল হারামে এসেছিলেন তিনি ড. গালিব। আজ বাংলাদেশের যেসকল ছহীহ আক্বীদার আলেমদের আমরা পিচ টিভির সুবাদে চিনি বা জানি তাদের নামের তালিকা পাঠিয়েছিলেন ড. গালিব। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজ তাদেরই একটা বড় অংশ তাঁর বিরোধিতায় লেগে আছে। নিশ্চয় আল্লাহ্ প্রত্যেককে নিজ নিজ কাজের প্রতিফল দিবেন এতে কোন সন্দেহ নাই।
আমীরে জামা'আত গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ। আমরা আল্লাহর নিকট তার সুস্থতার জন্য প্রাণখুলে দুআ করছি।
হে আল্লাহ! তুমি তোমার দ্বীনের এই খাদেমকে সুস্থতা দান কর এবং তাঁকে হায়াতে তাইয়্যিবা দান কর।
আমীন।

Monday, December 11, 2017

পিছ টিভি চালু করা হয়েছে




১)পিছ টিভি চালু করা হয়েছে দেওবন্দিদের গায়ে আগুন লেগেছে।

২)পিছ টিভি খুলেছে চরমনাইদের গায়ে ফোস্কা পরতেছে।

৩)পিছ টিভি খুলেছে হাটাজারীদের গায়ে চুল্কানি বেরেছে।

৪)মাইজ ভান্ডারিদের গায়ে পোকা পরেছে।

৫)পিছ টিভি খুলেছে হানাফিদের ভাত উঠে গিয়েছে।।।।।।

সম্মানিত ফেসবুক বন্দুরা সুসংবাদ     গ্রহন করুন,আমাদের প্রিয় পিছ টিভি খুলে দিয়েছে,আপনারা অতি সত্বর ক্যেবল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করুন।।যার অবধানে পিছ টিভি খোলা হয়েছে তিনিই হলেন আমাদের আমিরে জা'মায়াত
~ড:আসাদুল্লাহ আল গালিব।।।

Sunday, December 10, 2017

*পিতা-মাতার জন্য সবচেয়ে উত্তম দুআ এবং দুআ করার পদ্ধতি



*পিতা-মাতার জন্য সবচেয়ে উত্তম দুআ এবং দুআ করার পদ্ধতি*

প্রশ্ন:  পিতামাতার নেক হায়াত, দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণের জন্য কিভাবে দোয়া করলে ভালো হয়? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর:
দুআর বিষয়টি উন্মুক্ত। অর্থাৎ আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ প্রর্থনা করে নিজেদের মনমত যত খুশি দুআ করতে পারি। বাবা মা দুনিয়াবী সম্পর্কের দিকে দিয়ে সবচেয়ে কাছে। তাই সন্তানদের উচিৎ, তাদের জন্য অধিক পরিমানে দুআ করা। জীবিত অবস্থায় তাদের সুস্থাস্থ, ঈমানী মজবুতী, আমলে সালেহ, গুনাহ মোচন, শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে হেফাজত এবং সাবির্ক কল্যাণময় জীবনের জন্য দুআ করব।
আর তারা মারা গেলেও তাদের জন্য দুআ করব। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সৎ সন্তানগণ যদি মৃত বাবা-মার জন্য দুআ করে তাহলে কবরে থেকেও তারা সওয়াব অর্জন করতে থাকেন।
তাই মারা যাওয়ার পর, তাদের জন্য রহমত, মাগফিরাত, কবরের প্রশস্ততা, কবরকে আলোকময় করা, তাদের হিসাব-নিকাশ সহজ করা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের জন্য যত বেশি সম্ভব দুআ করা কতর্ব্য।

*বাবা-মার জন্য কুরআনের দুআ:*
 কুরআনে বর্নিত দুআগুলো সবচেয়ে উত্তম-এতে কোন সন্দেহ নাই। তাই আমরা কুরআনের নিম্নোক্ত দুয়াগুলো বেশি বেশি করার চেষ্টা করব।

জিবীত বা মৃত পিতামাতার জন্য  দুয়া;
=============================

♥১-দুয়া:

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

অর্থ :হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন

রর্ব্বি হাম্হুমা-কামা-রব্বাইয়া-নী ছগীরা।
(সূরা আল-ইসরা - ১৭:২৪)

♥২- দুয়া:

رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ

অর্থ : হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।

রব্বানাগফিরলী অলি ওয়ালিদাইয়্যা অলিলমুমিনীনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসা-ব্।
(সূরা ইবরাহিম - ১৪:-৪১)

*পিতামাতার জন্য দুআ এবং আমাদের সমাজের বিদআতী প্রচলন*

আমাদের সমাজের অত্যন্ত বহুল প্রচলন হল, সন্তানরা পিতামাতার জন্য তেমন দুআ করে না! বরং তারা হাফেয ও মাওলানাদেরকে দাওয়াত দিয়ে টাকা-পয়সার বিনিময়ে দুআ করিয়ে নেয়। এটাকে ভাড়ায় দুআ করানো বলা যায়।
আর এই সুযোগে পেটপুজারী অর্থলোভী একশ্রেণীর মানুষ মিলাদ, চল্লিশা, খুরআনখানী, শবিনা খতম ইত্যাদি অসংখ্য বিদআতী কার্যক্রমের মাধ্যমে কলাকৌশলে কিছু অর্থ-কড়ি কামিয়ে নেয়। অথচ ইসলামে এই সব জঘন্যতম বিদআত।

 অথচ এ সকল বিদআতের আয়োজন করা, এগুলোতে অংশ গ্রহণ করা, বিদআতীদেরকে ভাড়া করে পয়সা দেয়া.. সবই ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহ ও নিষিদ্ধ কাজ।

তাই আমাদের কতর্ব্য, ভাড়া করা আলেম-হাফেযদের দ্বারা দুআ না করে নিজেরা নিজেদের পিতা-মাতার জন্য পরম আন্তরিকতা সহকারে কান্নাকাটি করে দুআ করব। এতে তারা কবরে থেকেও সওয়াব অর্জন করবেন বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। 

আবু হুরয়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ﺇﺫﺍ ﻣﺎﺕ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﺍﻧﻘﻄﻊ ﻋﻨﻪ ﻋﻤﻠﻪ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺛﻼﺛﺔ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺻﺪﻗﺔ ﺟﺎﺭﻳﺔ ﺃﻭ ﻋﻠﻢ ﻳﻨﺘﻔﻊ ﺑﻪ ﺃﻭ ﻭﻟﺪ ﺻﺎﻟﺢ ﻳﺪﻋﻮ ﻟﻪ
“যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমল তার বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি ( আমল চলতে থাকে)। যথা:
-সাদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম (জ্ঞান), সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৩১।)

আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

~উত্তর দিয়েছেন শাইখ আব্দুল্লাহীল হাদী