Wednesday, January 24, 2018


আচ্ছা বল্টু তুমি মাজহাব কেন মান?
বল্টু- মাজহাব মানা ফরয।
-কে ফরয করল?
বল্টু- এত কিছু জানিনা, আলেমরা বলছে ফরয।
তুমি কোন মাজহাব মানো?
বল্টু- হানাফি মাজহাব
চার মাজহাব তো চার ফরয, একটা ফরয মানলা বাকি ৩ টা কই গেল?
বল্টু- অ্যাঁ ! না মানে... আলেমরা বলছেন বাকি ৩ টি বিশ্বাস করতে হবে.
-আসরের নামাজ ৪ রাকাত ফরজ তাহলে ১ রাকাত নামাজ পড় আর বাকি ৩ রাকাত বিশ্বাস করো, তাহলেই চলবে কি বলো?
বল্টু- অ্যাঁ !
-আচ্ছা তুমি সরাসরি কোরআন হাদিস মানতে পারো না?
বল্টু- দেখেন ভাই, কোরআন হাদিস সরাসরি মানা যায়না, সাধারণ মানুষ যেমন রিকশাচালক, কৃষক কোরআন হাদিস বুঝবে না। তাই তারা যে কোন এক ইমামের তাকলিদ (অন্ধ অনুসরণ) করবে।
-সাধারণ মানুষ কোরআন হাদিস বুঝে না আর আরবি কিতাবে লেখা ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর ফতোয়াটা খুব বুঝে তাই না?
বল্টুঃ অ্যাঁ ! না মানে... না বুঝলে আলেমদের জিজ্ঞাসা করবে...
-আমিও তো তাই বলি কোরআন হাদিস না বুঝলে আলেমদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, কোরআন হাদিস থেকে ফয়সালা খুঁজবে, না পেলে সাহাবা কেরামের আমল দেখবে, তাও না পেলে সম্মানিত ইমামগণ (রহঃ) কি ফতোয়া দিয়েছেন সেটা দেখা যেতে পারে। কোরআন হাদিস বাদ দিয়ে আগে ফতোয়া খুঁজবে কেন?
আর কতকাল নিজেকে বোকা সাজিয়ে রাখবে? চারদিকে কোরআন আর হাদিস মানার জোয়ার এসেছে, আবারও মানুষ তার মূলে ফিরে যাচ্ছে, শামিল হওন কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক জীবন গড়ার পথে।
* মাজহাব মানে তরীকা, পথ, মত।
* ইসলাম জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র তরীকা, পথ, মত।
*******
মনে রাখা ভালো প্রসিদ্ধ ৪ ইমামের কেউ কোন মাজহাব চালু করে যান নাই, ৪০০ বছর পর এর আবিস্কার ... দেহবন্দ গুরু শাহ ওয়ালীঊল্লাহ দেহলভী(রহ) তার হুজ্জাতুল বালিগায় বলে গেছেন।
আল্লাহ বলেছেন, সাহাবীদের মতো ঈমান আনলে আমরা হেদায়েত পাবো।(বাকারা ১৩৭)
সাহাবীগণ (রা) কোনো দলে ভাগ হননি এবং নিজেদের উপর মাজহাব ওয়াজিব/ফরজ করেননি। তারা একনিষ্ঠভাবে রসূল (স) এর অনুসরণ করতেন।।
এরপরেও না বুঝলে কিছু করার নেই

Tuesday, January 23, 2018

তওবা কিভাবে করতে হবে, তওবার সঠিক নিয়ম।




তওবা কিভাবে করতে হবে, তওবার সঠিক নিয়ম। কারো তওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বোঝার উপায়
===========================
১. পাপ কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবো – এ রকম হলে তওবা হবে না।
২. অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে তাঁর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩. অন্তরে ঐকাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
৪. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহ খাতার জন্য “ইস্তিগফার” করতে হবে (মাফ চাইতে হবে) + “তওবা” করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)।
৫. কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক্ক ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেইভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, তওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না করলে তিনি মাফ করবেন না।
৬. অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম – অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তওবা কবুল করবেন।
৭. তওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
৮. যে পাপ কাজ থেকে তওবা করা হলো (সমস্ত পাপ কাজ থেকেই তওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে সাথে সাথে আবার তওবা করে সেটা থেকে ফিরে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সাথে সাথেই তওবা করতে হবে, মৃত্যু পর্যন্ত।
৯. কারো তওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বুঝবেন ?
অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেনঃ কারো যদি তওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয় অর্থাত পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে – তার তওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। কিন্তু কারো যদি এমন না হয় অর্থাত, তওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার তওবাতে ত্রুটি আছে। তার উচিত হতাশনা হয়ে – বার বার আন্তরিকতার সাথে খালেস নিয়তে তওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আন্তরিক তওবা করার তওফিক দান করুন।

 ১- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্‌র শপথ, নিশ্চয় আমি দৈনিক সত্তর -এর অধিকবার আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি।” ( বুখারী, ফাতহুল বারীসহ, ১১/১০১, নং ৬৩০৭।)
২- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা কর, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্‌র কাছে দৈনিক একশত বার তাওবা করি।”( মুসলিম, ৪/২০৭৬, নং ২৭০২।)
তওবার দোয়া-
তওবার সুন্নাতি দোয়া বা কি বলে তওবা করবেন, ১-
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيهِ
(আস্তাগফিরুল্লা-হা ‘ওয়া আতূবু ইলাইহি)।
‘আমি মহামহিম আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা চাই, আর আমি তাঁরই নিকট তওবা করছি।’( বুখারী, ফাতহুল বারীসহ, ১১/১০১, নং ৬৩০৭।)
২- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি বলবে,
«أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ القَيّوُمُ وَأَتُوبُ إِلَيهِ».
(আস্তাগফিরুল্লা-হাল ‘আযীমল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কায়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি)।
‘আমি মহামহিম আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি চিরস্থায়ী, সর্বসত্তার ধারক। আর আমি তাঁরই নিকট তওবা করছি।’ আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।” ( সহীহুত তিরমিযী ৩/১৮২)

৩- সাইয়িদুল ইস্তিগফার (সাইয়েদুল ইস্তেগফার) বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।
اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রববী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।
বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।

Saturday, January 20, 2018

ফরয ছালাত বাদে সম্মিলিত দো‘আ



গ্রন্থঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)
অধ্যায়ঃ ছালাতের বিবরণ (صفة الصلاة)


ফরয ছালাত বাদে সম্মিলিত দো‘আ

ফরয ছালাত বাদে সম্মিলিত দো‘আ (الدعاء الجماعي بعد الصلاة المكةوبة) :

ফরয ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর পরে ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে ইমামের সরবে দো‘আ পাঠ ও মুক্তাদীদের সশব্দে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলার প্রচলিত প্রথাটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম হ’তে এর পক্ষে ছহীহ বা যঈফ সনদে কোন দলীল নেই। বলা আবশ্যক যে, আজও মক্কা-মদ্বীনার দুই হারাম-এর মসজিদে উক্ত প্রথার কোন অস্তিত্ব নেই।

প্রচলিত সম্মিলিত দো‘আর ক্ষতিকর দিক সমূহ :
(১) এটি সুন্নাত বিরোধী আমল। অতএব তা যত মিষ্ট ও সুন্দর মনে হৌক না কেন সূরায়ে কাহ্ফ-এর ১০৩-৪ নং আয়াতের মর্ম অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
(২) এর ফলে মুছল্লী স্বীয় ছালাতের চাইতে ছালাতের বাইরের বিষয় অর্থাৎ প্রচলিত ‘মুনাজাত’কেই বেশী গুরুত্ব দেয়। আর এজন্যেই বর্তমানে মানুষ ফরয ছালাতের চাইতে মুনাজাতকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ‘আখেরী মুনাজাত’ নামক বিদ‘আতী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেশী আগ্রহ বোধ করছে ও দলে দলে সেখানে ভিড় জমাচ্ছে।
(৩) এর মন্দ পরিণতিতে একজন মুছল্লী সারা জীবন ছালাত আদায় করেও কোন কিছুর অর্থ শিখে না। বরং ছালাত শেষে ইমামের মুনাজাতের মুখাপেক্ষী থাকে।
(৪) ইমাম আরবী মুনাজাতে কী বললেন সে কিছুই বুঝতে পারে না। ওদিকে নিজেও কিছু বলতে পারে না। এর পূর্বে ছালাতের মধ্যে সে যে দো‘আগুলো পড়েছে, অর্থ না জানার কারণে সেখানেও সে অন্তর ঢেলে দিতে পারেনি। ফলে জীবনভর ঐ মুছল্লীর অবস্থা থাকে ‘না ঘরকা না ঘাটকা’।
(৫) মুছল্লীর মনের কথা ইমাম ছাহেবের অজানা থাকার ফলে মুছল্লীর কেবল ‘আমীন’ বলাই সার হয়। (৬) ইমাম ছাহেবের দীর্ঘক্ষণ ধরে আরবী-উর্দূ-বাংলায় বা অন্য ভাষায় করুণ সুরের মুনাজাতের মাধ্যমে শ্রোতা ও মুছল্লীদের মন জয় করা অন্যতম উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ফলে ‘রিয়া’ ও ‘শ্রুতি’-র কবীরা গোনাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ‘রিয়া’-কে হাদীছে الشرك الأصغر বা ‘ছোট শিরক’ বলা হয়েছে। [204] যার ফলে ইমাম ছাহেবের সমস্ত নেকী বরবাদ হয়ে যাওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা সৃষ্টি হ’তে পারে।

ছালাতে হাত তুলে সম্মিলিত দো‘আ :

(১) ‘ইস্তিসক্বা’ অর্থাৎ বৃষ্টি প্রার্থনার ছালাতে ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু’হাত তুলে দো‘আ করবে। এতদ্ব্যতীত
(২) ‘কুনূতে নাযেলাহ’ ও ‘কুনূতে বিতরে’ও করবে।

একাকী দু’হাত তুলে দো‘আ :

ছালাতের বাইরে যে কোন সময়ে বান্দা তার প্রভুর নিকটে যে কোন ভাষায় দো‘আ করবে। তবে হাদীছের দো‘আই উত্তম। বান্দা হাত তুলে একাকী নিরিবিলি কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তার হাত খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন।[205] খোলা দু’হস্ততালু একত্রিত করে চেহারা বরাবর সামনে রেখে দো‘আ করবে।[206] দো‘আ শেষে মুখ মাসাহ করার হাদীছ যঈফ। [207] বরং উঠানো অবস্থায় দো‘আ শেষে হাত ছেড়ে দিবে।

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতের জন্য আল্লাহর নিকট হাত উঠিয়ে একাকী কেঁদে কেঁদে দো‘আ করেছেন।[208]
(২) বদরের যুদ্ধের দিন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকটে একাকী হাত তুলে কাতর কণ্ঠে দো‘আ করেছিলেন। [209]
(৩) বনু জাযীমা গোত্রের কিছু লোক ভুলক্রমে নিহত হওয়ায় মর্মাহত হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একাকী দু’বার হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চেয়েছিলেন।[210]
(৪) আওত্বাস যুদ্ধে আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর নিহত ভাতিজা দলনেতা আবু ‘আমের আশ‘আরী (রাঃ)-এর জন্য ওযূ করে দু’হাত তুলে একাকী দো‘আ করেছিলেন।[211]
(৫) তিনি দাওস কওমের হেদায়াতের জন্য ক্বিবলামুখী হয়ে একাকী দু’হাত তুলে দো‘আ করেছেন।[212]

এতদ্ব্যতীত
(৬) হজ্জ ও ওমরাহ কালে সাঈ করার সময় ‘ছাফা’ পাহাড়ে উঠে কা‘বার দিকে মুখ ফিরিয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ করা।[213]
(৭) আরাফার ময়দানে একাকী দু’হাত তুলে দো‘আ করা।[214]
(৮) ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর একটু দূরে সরে গিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ করা। [215]
(৯) মুসাফির অবস্থায় হাত তুলে দো‘আ করা।[216]

তাছাড়া জুম‘আ ও ঈদায়েনের খুৎবায় বা অন্যান্য সভা ও সম্মেলনে একজন দো‘আ করলে অন্যেরা (দু’হাত তোলা ছাড়াই) কেবল ‘আমীন’ বলবেন। [217] এমনকি একজন দো‘আ করলে অন্যজন সেই সাথে ‘আমীন’ বলতে পারেন।

উল্লেখ্য যে, দো‘আর জন্য সর্বদা ওযূ করা, ক্বিবলামুখী হওয়া এবং দু’হাত তোলা শর্ত নয়। বরং বান্দা যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করবে। যেমন খানাপিনা, পেশাব-পায়খানা, বাড়ীতে ও সফরে সর্বদা বিভিন্ন দো‘আ করা হয়ে থাকে। আর আল্লাহ যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় তাঁকে আহবান করার জন্য বান্দার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।[218]

কুরআনী দো‘আ :

রুকূ ও সিজদাতে কুরআনী দো‘আ পড়া নিষেধ আছে।[219] তবে মর্ম ঠিক রেখে সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনে পড়া যাবে। যেমন রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া ... (বাক্বারাহ ২/২০১)-এর স্থলে আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা অথবা আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া ...বলা।[220] অবশ্য শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পরে সালাম ফিরানোর পূর্বে কুরআনী দো‘আ সহ ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সকল প্রকারের দো‘আ পাঠ করা যাবে।

[204] . আহমাদ, মিশকাত হা/৫৩৩৪ ‘হৃদয় গলানো’ অধ্যায়-২৬, ‘লোক দেখানো ও শুনানো’ অনুচ্ছেদ-৫। [205] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২২৪৪, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯। [206] . আবুদাঊদ হা/১৪৮৬-৮৭, ৮৯; ঐ, মিশকাত হা/২২৫৬। [207] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২২৪৩, ৪৫, ২২৫৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯; আলবানী বলেন, দো‘আর পরে দু’হাত মুখে মোছা সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। মিশকাত, হাশিয়া ২/৬৯৬ পৃঃ; ইরওয়া হা/৪৩৩-৩৪, ২/১৭৮-৮২ পৃঃ। [208] . মুসলিম হা/৪৯৯, ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘উম্মতের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দো‘আ করা’ অনুচ্ছেদ-৮৭। [209] . মুসলিম হা/৪৫৮৮ ‘জিহাদ’ অধ্যায়-৩২, অনুচ্ছেদ-১৮, ‘বদরের যুদ্ধে ফেরেশতাগণের দ্বারা সাহায্য প্রদান’। [210] . বুখারী, মিশকাত হা/৩৯৭৬ ‘জিহাদ’ অধ্যায়-১৯, অনুচ্ছেদ-৫; বুখারী হা/৪৩৩৯ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৮০, ‘দো‘আয় হাত উঁচু করা’ অনুচ্ছেদ-২৩। [211] . এটি ছিল ৮ম হিজরীতে সংঘটিত ‘হোনায়েন’ যুদ্ধের পরপরই। বুখারী হা/৪৩২৩, ‘যুদ্ধ-বিগ্রহ সমূহ’ অধ্যায়-৬৪, ‘আওত্বাস যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ-৫৬। [212] . বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬১১; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৯৯৬। [213] . আবুদাঊদ হা/১৮৭২; মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫। [214] . নাসাঈ হা/৩০১১। [215] . বুখারী হা/১৭৫১-৫৩, ‘হজ্জ’ অধ্যায়-২৫, ‘জামরায় কংকর নিক্ষেপ ও হাত উঁচু করে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৩৯-৪২। [216] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০। [217] . ছহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৬১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৮/২৩০-৩১; ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম পৃঃ ৩৯২। [218] . বাক্বারাহ ২/১৮৬, মুমিন/গাফের ৪০/৬০; বুখারী ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৮০, অনুচ্ছেদ-২৪, ২৫ ও অন্যান্য অনুচ্ছেদ সমূহ। [219] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮৭৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩ ; নায়ল ৩/১০৯ পৃঃ। [220] . বুখারী হা/৪৫২২; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৮৭, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সারগর্ভ দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৯। 

Wednesday, January 10, 2018

সকাল-সন্ধায় পঠিতব্য দুয়া ও যিকির সমূহ



সকাল-সন্ধায় পঠিতব্য দুয়া ও যিকির সমূহ (উচ্চারণ ও বাংলা অনুবাদ সহ)

১) আয়াতুল কুরসী [সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত]। (এক বার)

২) নিম্নোক্ত সূরা সমূহ পড়া:

কুল্ হুওয়াল্লাহু আহাদ। (৩ বার)ক্বুল আউ-যু বিরাব্বিল ফালাক্ব। (৩বার)ক্বুল আউযু বিরাব্বিন্নাস। (৩বার)

৩) لا إله إلا الله وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ  উচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু  ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।

অর্থঃ “আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং যাবতীয় প্রশংসার অধিকারীও তিনি, তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।” (১০ বার বা ১০০ বার)

৪)  سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ  উচ্চারণঃ সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহি।

অর্থঃ প্রশংসার সহকারে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। (১০০ বার)

৫) بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِيْ الأَرْضِ وَلاَ فِيْ السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمِ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু মাআসমিহী শাইউন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্ সামায়ি ওয়াহুওয়াস্ সামী-উল আলী-ম।

অর্থঃ শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে আসমান এবং যমীনের কোন বস্তুই কোন ক্ষতি করতে পারবে না, তিনি মহাশ্রোতা মহাজ্ঞানী। (৩ বার)

৬) ( أعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ ما خَلَقَ )

উচ্চারণঃ আউ-যু বিকালিমা-তিল্লাহিত্ তা-ম্মা-তি মিন শররি মা- খালাক্ব।

অর্থঃ আশ্রয় প্রার্থনা করছি আল্লাহ্র পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে -তাঁর সৃষ্টির সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে। (৩ বার)

৭) رَضِيْتُ بِاللهِ ربًّا وبالإسلاَمِ دِيْناً وبِمُحمدٍ نبيّاً ورسولاً

উচ্চারণঃ রাযিতু বিল্লা-হি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলা-মি দী-না, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যাও ওয়া রাসুলা।

অর্থঃ আমি সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করেছি আল্লাহকে প্রভূ হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) নবী ও রাসূল হিসেবে।  (৩ বার)

৮) (حَسْبِيَ اللهُ لا إله إلا هو عَليه تَوَكّلْتُ وهو رَبُّ الْعَرشِ العَظِيْمِ   উচ্চারণঃ হাসবিয়্যাল্লা-হু লা-ইলাহা ইল্লা-হুওয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়াহুওয়া রাব্বুল আরশিল আযীম।

অর্থঃ আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই, তাঁর প্রতি ভরসা করেছি, তিনি মহান আরশের অধিপতি।  (৭ বার)

৯)  (أصْبَحْناَ على فِطْرَةِ الإسلامِ وَ على كَلِمَةِ الإِخْلاصِ وعلى دِيْنِ نَبِيِّناَ محمد وعلى مِلَّةِ أبِيْناَ إبراهيمَ حَنِيْفاَ مُسْلِماً وماَ كاَنَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ)

উচ্চারণঃ আসবাহনা আলা ফিৎরাতিল ইসলা-মি, ওয়া আলা কালিমাতিল ইখলা-সি, ওয়া আলা দী-নে নাবিয়্যেনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা মিল্লাতি আবী-না ইবরাহীমা হানী-ফাম্ মুসলিমা, ওয়ামা কা-না মিনাল মুশরিকীন।

 অর্থঃ সকাল করেছি ইসলামের ফিৎরাতের উপর, একনিষ্ঠ বাণীর উপর, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর  দ্বীনের উপর এবং আমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ)এর মিল্লাতের উপর তিনি একনিষ্ঠ মুসলিম এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।

সন্ধার সময় বলবেঃ আমসায়না আলা—শেষ পর্যন্ত।

১০)    (أصْبَحْناَ واصْبَحَ المُلْكُ للهِ والحمدُ للهِ لا إله إلا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ له المُلْكُ وله الحمد وهو على كل شيء قدير، رَبِّ أسْألُكَ خَيْرَ ما في هذا الْيَوْمِ وخَيْرَ ماَ بَعْدَهُ، وأعوذُ بِكَ منْ شَرِّ ما فِيْ هذا اليومِ وَشَرِّ ما بعده ، ربِّ أعوذُ بِكَ من الكَسَلِ وسُوْءِ الكِبَرِ، ربِّ أعوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِيْ النَّارِ ، وعَذَابٍ في القَبْرِ .)

উচ্চারণঃ আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লা-হি। ওয়াল হামদু লিল্লা-হি।

লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু  ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কাদীর।

রাব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফি হাযাল্ ইয়াওমি ওয়া খাইরা মা বা’দাহু।

ওয়া আউযু বিকা মিন শাররী মা ফি হাযাল্ ইয়াওমি ওয়া মিন শাররি মা বা’দাহু।

রাব্বি আউযু বিকা মিনাল্ কাসালি ওয়া সূ-ইল কিবারি।

রাব্বি আউযু বিকা মিন আযাবিন্ ফিন্না-রি ওয়া আযাবিন্ ফিল ক্বাবরি।

অর্থঃ আমরা সকাল করেছি এমন অবস্থায় যে, রাজত্ব এককভাবে আল্লাহর জন্য, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব একমাত্র তাঁরই অধিকারে এবং সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য, তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে প্রভূ আজকের দিন এবং পরবর্তী দিনের মঙ্গল তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার কাছে আজকের দিন এবং পরবর্তী দিনের অমঙ্গল থেকে। হে প্রভূ আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার কাছে অলসতা থেকে এবং অধিক বয়সের অনিষ্টতা থেকে। হে প্রভূ আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার কাছে দোযখের শাস্তি এবং ক্ববরের আযাব থকে।

সন্ধার সময় বলবেঃ আমসায়না ওয়া আমসাল মুলকু….রাব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফি হাযিহিল্ লায়লাতি ….শেষ পর্যন্ত।

১১)

( (اللهُمَّ بِكَ أصْبَحْناَ وبِكَ أمسَيْناَ وبِكَ نَحْياَ وَبِكَ نَمُوْتُ وَإلَيْكَ النُّشُوْرُ)

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিকা আস্বাহ্না ওয়া বিকা আমসায়না ওয়া বিকা নাহ্ইয়া ওয়া বিকা নামূতু ওয়া ইলাইকান্ নুশূর।

অর্থঃ হে আল্লাহ্  তোমার অনুগ্রহে সকাল করেছি এবং তোমার অনুগ্রহে সন্ধা করেছি, তোমার করুণায় জীবন লাভ করি এবং তোমার ইচ্ছায় আমরা মৃত্যু বরণ করব, আর কিয়ামত দিবসে তোমার কাছেই পূণরুত্থিত হতে হবে।

সন্ধার সময় বলবে: আল্লাহুম্মা বিকা আমসায়না ওয়া বিকা আমসাইনা ওয়া বিকা নাহ্ইয়া ওয়া বিকা নামূতু ওয়া ইলাইকাল্  মাসীর।

১২)     (اللهم إنِّيْ أصْبَحْتُ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلاَئِكَتَكَ وَجَمِيْعَ خَلْقِكَ بِأنَّكَ أنْتَ اللهُ لا إله إلا أنتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ وَأنَّ محمداً عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আসবাহ্তু, উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা আরশিকা, ওয়া মালা-ইকাতাকা ওয়া জামীআ’ খালক্বিকা, বিআন্নাকা আন্তাল্লা-হু লাইলা-হা ইল্লা আন্তা অহ্দাকা লা- শারীকা লাকা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান্ আবদুকা ওয়া রাসূলুকা।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্ তোমার নামে আমি সকাল করেছি। তোমাকে সাক্ষী রাখছি , তোমার আরশ বহন কারী ফেরেস্তা, সকল ফেরেস্তাকুল এবং তোমার সমস্ত সৃষ্টি জগতকে সাক্ষী রেখে বলছি -নিশ্চয় তুমি আল্লাহ্, তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই, তুমি এক, তোমার কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার বান্দা ও রাসূল।  (এক বা দুই বা তিন বা চার বার বলবে।)

আর সন্ধার সময় বলবেঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আমসায়তু …(বাকী অংশ পুরোটা)।

১৩)

 (اللهمَّ ماّ أصْبَحَ بِيْ مِنْ نِعْمَةٍ أوْ بِأحَدٍ مِّنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা মা আসবাহা বী মিন্ নি’মাতিন্ আও বি আহাদিম্ মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহ্দাকা লা-শারীকা লাকা ফালাকাল্ হামদু ওয়া লাকাশ্ শুকরু।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমার সাথে যে নে’য়ামত সকালে উপনিত হয়েছে বা তোমার সৃষ্টি জগতের কারো সাথে, তা সবই একক ভাবে তোমার পক্ষ থেকে তোমার কোন শরীক নেই। সুতরাং কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা মাত্রই তোমার জন্য।

সন্ধার সময় বলবেঃ আল্লাহুম্মা মা আমসা বী… (বাকী অংশ পুরাটা)।

১৪)     (ياَ حَيُّ ياَ قَيُّومُ بِكَ أسْتَغِيْثُ فَأصْلِحْ لِيْ شَأنِيْ وَلاَ تَكِلْنِيْ إلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ )

উচ্চারণঃ ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিকা আসতাগীছ, ফা আসলিহ লী শা’নী ওয়ালা তাকেলনী ইলা নাফসী ত্বরফাতা আ’ইনিন্।

অর্থঃ হে চিরঞ্জিব, চিরস্থায়ী, তোমার কাছে আমি সাহায্য প্রর্থনা করছি, সুতরাং আমার সকল অবস্থা সংশোধন করে দাও এবং এক পলকের জন্য হলেও আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিও না।

১৫(     (اللهمَّ عاَفِنِيْ فِيْ بَدَنِيْ، اللهمَّ عاَفِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ، اللهمَّ عاَفِنِيْ فِيْ بَصَرِيْ لا إله إلا أنْتَ )

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আ’ফেনী ফী বাদানী, আল্লাহুম্মা আ’ফেনী ফী সাম্য়ী, আল্লাহুম্মা আ’ফেনী ফী বাছারী, লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্! তুমি আমার দেহের নিরাপত্তা দান কর, শ্রবন শক্তি ও দৃষ্টি শক্তিকে নিরাপদ রাখ। তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন ইলাহ্ নেই। (৩ বার(

১৬( (اللهمَّ إنِّيْ أعُوذُ بِكَ مِنَ الكُفْرِ والْفَقْرِ وأعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لا إله إلا أنتَ) উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল কুফরী ওয়াল ফাক্বরি ওয়া আঊযুবিকা মিন আযাবিল কবরী, লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা।

অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কুফুরী ও দারিদ্র্য থেকে এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি ক্ববরের আযাব থেকে। তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন ইলাহ্ নেই। (৩বার)

১৭(

 (اللهمَّ إنِّيْ أسأَلُكَ العاَفِيةَ فِيْ الدُّنْياَ والآخِرَةِ، اللهمَّ إنِّيْ أسأَلُكَ العَفْوَ والعاَفِيَةَ فِيْ دِيْنِيْ ودُنْيَايَ وَأهْلِيْ وماَلِيْ اللهمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِيْ وآمِنْ رَوْعاَتِيْ ، اللهمَّ احْفَظْنِيْ مِنْ بَيْنَ يَدَيَّ وَمِنْ خَلْفِيْ ، وَعَنْ يَمِيْنِيْ ، وعَنْ شِماَلِيْ ، وَمِنْ فَوْقِيْ ، وَأعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أنْ اُغْتاَلَ مِنْ تَحْتِيْ )

উচ্চারণঃ

আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল্ আ’ফিয়াতা ফিদ্ দুন্ইয়া ওয়াল আ-খিরাহ্,

 আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল্  আফ্ওয়া ওয়াল্ আ’ফিয়াতা ফী দীনী ওয়া দুন্ইয়া ইয়া ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী।

 আল্লাহুম্মাস্ তুর আ’ওরা-তী ওয়া  আ-মেন রাওআ’তী।

আল্লাহুম্মাহ্ ফাযনী মিম্ বায়নে ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফী, ওয়া আ’ন ইয়ামীনী, ওয়া আ’ন শিমালী, ওয়া মিন ফাওক্বী।

ওয়া আঊযু বিআ’যামাতিকা আন উগতালা মিন তাহ্তী।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা কামনা করছি, হে আল্লাহ্ আমি প্রার্থনা করছি তোমার কাছে ক্ষমার এবং আমার দ্বীন , দুনিয়া, পরিবার-পরিজন এবং সম্পদের নিরাপত্তা। হে আল্লাহ্ আমার গোপন বিষয় সমূহ (দোষ-ত্রুটি) ঢেকে রাখ এবং আমাকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ রাখ। হে আল্লাহ্ তুমি আমাকে হেফাযত কর আমার সম্মুখ থেকে, পিছন থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে এবং উপর দিক থেকে। আর তোমার মহত্বের উসিলা দিয়ে তোমার কাছে আশ্রয়  প্রার্থনা করছি নিচের দিক থেকে মাটি ধ্বসে আমার আকষ্মিক মৃত্যু থেকে।

১৮)

(اللهم فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأرْضِ، عاَلِمَ الغَيْبِ وَالشَّهاَدَةِ، ربَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ، اَشْهَدُ أنْ لاإله إلا أنْتَ، أعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ، وَشَرِّ الشَّيْطاَنِ وَشِرْكِهِ، وأنْ أقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِيْ سُوْءً، أوْ أجُرُّهُ إلَى مُسْلِمٍ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ফা-তিরাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরযি,

আ’লিমাল গাইবি ওয়াশ্ শাহাদাহ্,

 রাব্বা কুল্লি শাইয়িন্ ওয়া মালিকাহু।

আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।

আঊযু বিকা মিন শাররি নাফসী, ওয়া শাররিশ শায়তানে ওয়া শিরকিহি।

 ওয়া আন আক্বতারিফা আ’লা নাফসী সূআন্,

আও আজুররাহু ইলা মুসলিম।

অর্থঃ হে আল্লাহ্ তুমি আসমান-যমীনের সৃষ্টি কর্তা, তুমি গোপন-প্রকাশ্য সবকিছুই জান। তুমি সকল বস্তুর প্রভূ  এবং সব কিছুর মালিক, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই। আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে এবং শয়তান ও তার শিরকের অনিষ্ট থেকে এবং আশ্রয় কামনা করছি নিজের উপর অন্যায় করা থেকে বা সে অন্যায় কোন মুসলিমের উপর চাপিয়ে দেয়া থেকে।

১৯(     (اللهمَّ إنَّيْ أسْأَلُكَ عِلْماً ناَفِعاً، وَرِزْقاً طَيِّباً، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً)

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ই’লমান্ নাফিআ’ন্,

 ওয়া রিযক্বান্ ত্বইয়িবান্,

 ওয়া আ’মালান্ মুতাক্বাব্বালা।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি উপকারী বিদ্যা, পবিত্র জীবিকা এবং মাক্ববূল (গ্রহণীয়) আমলের।

২০)    (اللهمَّ أنْتَ رَبِّيْ لا إله إلا أنتَ، خَلَقْتَنِيْ وَأناَ عَبْدُكَ، وأناَ على عَهْدِكَ، وَوَعْدِكَ ماَ اسْتَطَعْتُ، أعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مِلْئَ صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوْءُ بِذَنْبِيْ، فاَغْفِرْ لِيْ فَإنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إلاَّ أنْتَ)

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বী লা-ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, খালাক্বতানী

ওয়া আনা আ’বদুকা, ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা, ওয়া ওয়া’দিকা মাসতত্ব’তু,

 আঊযুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু,

আবূউ লাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা,

 ওয়া আবূউ বিযাম্বী,

 ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্তা।

অর্থঃ হে আল্লাহ্ তুমি আমার প্রভু প্রতিপালক, তুমি ছাড়া ইবাদত যোগ্য কোন ইলাহ্ নেই, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো এবং আমি তোমার বান্দা। আমি সাধ্যানুযায়ী তোমার সাথে কৃত ওয়াদা-অঙ্গীকার রক্ষা করছি। আমার কৃত কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় কামনা করছি, আমার প্রতি তোমার নেয়া’মত স্বীকার করছি এবং তোমার দরবারে আমার পাপকর্মেরও স্বীকারোক্তি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমায় ক্ষমা কর, কেননা তুমি ছাড়া পাপরাশী কেহই ক্ষমা করতে পারে না।

২১)( (اللهمَّ صَلِّ عَلى محمدٍ وَعَلَى آلِ مُحمدٍ كَماَ صَلَّيْتَ على إبْراَهِيْمَ وَ على آلِ إبراهيمَ إنَّكَ حَميدٌ مجيدٌ)

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আ’লা মুহাম্মাদিঁওয়া আ’লা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সল্লায়তা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্  তুমি রহমত নাযিল কর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবার বর্গের উপর, যেমন তুমি রহমত নাযিল করেছো ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবার বর্গের উপর, নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। (দশ বার)

Sunday, January 7, 2018

যাদু সম্পর্কে প্রচারিত এই হাদিসটা জয়ীফ


যাদু সম্পর্কে প্রচারিত এই হাদিসটা জয়ীফ
==============================
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না- সর্বদা মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং জাদু-টোনায় আস্থাভাজনকারী। (আহমাদ)[1]

[1] য‘ঈফ : আহমাদ ১৯৭৯৮, য‘ঈফ আল জামি‘ ২৫৯৮, য‘ঈফ আত্ তারগীব ২১৫৭। কারণ এর সনদে আবূ হুরায়য ‘আবদুল্লাহ বিন আল হুসায়ন একজন দুর্বল রাবী। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
========================
যাদু শিরক এটা সঠিক তবে উপরের দেওয়া হাদিসটা সহিহ নয়, সহিহ জেনেই প্রচার করা হয়েছিল গ্রপে কিন্ত সত্য এই যে হাদিসটা সহিহ নয়, আল্লাহ তা'লা আমাদের ক্ষমা করুন আর নির্ভুল প্রচারের তাওফিক দিন আর ভুল হয়ে গেলে সেটা শুধু মেনে নেওয়া নয় বরং সেটাও সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার তাওফিক দিন, আমীন আর যাদু সম্পর্কে এই সহিহ হাদিস গুলোই প্রচারের জন্য যথেষ্ট আলহামদুলিল্লাহ
=============================
যাদু-
যাদু শিক্ষা দেয়া বা শিক্ষা নেয়া শুধু কবীরা গুনাহ্ই নয়। বরং তা শির্ক এবং কুফর ও বটে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَاْنُ وَلَكِنَّ الشَّيَاْطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاْسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزَلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَاْبِلَ هَاْرُوْتَ وَمَاْرُوْتَ وَمَا يُعَلِّمَاْنِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُوْلَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ»

‘‘সুলাইমান (আঃ) কুফরি করেননি, তবে শয়তানরাই কুফরি করেছে, তারা লোকদেরকে যাদু শেখাতো বাবেল শহরে বিশেষ করে হারূত-মারূত ব্যক্তিদ্বয়কে। (জিব্রীল ও মীকাঈল) ফিরিশ্তাদ্বয়ের উপর কোন যাদু অবতীর্ণ করা হয়নি (যা ইহুদিরা ধারণা করতো)। তবে উক্ত ব্যক্তিদ্বয় কাউকে যাদু শিক্ষা দিতো না যতক্ষণ না তারা বলতো, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ মাত্র, অতএব তোমরা (যাদু শিখে) কুফরী করো না।

 (সূরাহ বাকারাহ : ১০২)

যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে, কারো ব্যাপারে তা সত্যিকারভাবে প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে শাস্তিস্বরূপ হত্যা করা। এ ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য রয়েছে।

জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

حَدُّ السَّاْحِرِ ضَرْبَةٌ بِالسَّيْفِ.

‘‘যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তলোয়ারের কোপ তথা শিরশ্ছেদ’’।

(তিরমিযী ১৪৬০)

জুনদুব (রাঃ) শুধু এ কথা বলেই ক্ষান্ত হননি। বরং তিনি তা বাস্তবে কার্যকরী করেও দেখিয়েছেন।

আবূ ’উসমান নাহ্দী (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ عِنْدَ الْوَلِيْدِ رَجُلٌ يَلْعَبُ، فَذَبَحَ إِنْسَانًا وَأَبَانَ رَأْسَهُ، فَعَجِبْنَا فَأَعَادَ رَأْسَهُ، فَجَاءَ جُنْدُبٌ الْأَزْدِيْ فَقَتَلَهُ.

‘‘ইরাকে ওয়ালীদ্ বিন্ ’উক্ববার সম্মুখে জনৈক ব্যক্তি খেলা দেখাচ্ছিলো। সে জনৈক ব্যক্তির মাথা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। এতে আমরা খুব বিস্মিত হলে লোকটি কর্তিত মাথা খানি যথাস্থানে ফিরিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে জুনদুব (রাঃ) এসে তাকে হত্যা করেন’’। (বুখারী/আত্তা’রীখুল্ কাবীর : ২/২২২ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬)

তেমনিভাবে উম্মুল্ মু’মিনীন ’হাফ্সা (রাঃ) ও নিজ ক্রীতদাসীকে জাদুকরী প্রমাণিত হওয়ার পর হত্যা করেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

سَحَرَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ـ جَارِيَةٌ لَهَا، فَأَقَرَّتْ بِالسِّحْرِ وَأَخْرَجَتْهُ، فَقَتَلَتْهَا، فَبَلَغَ ذَلِكَ عُثْمَانُ  فَغَضِبَ، فَأَتَاهُ اِبْنُ عُمَرَ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ـ فَقَالَ: جَارِيَتُهَا سَحَرَتْهَا، أَقَرَّتْ بِالسِّحْرِ وَأَخْرَجَتْهُ، قَالَ: فَكَفَّ عُثْمَانُ  قَالَ الرَّاوِيْ: وَكَأَنَّهُ إِنَّمَا كَانَ غَضَبُهُ لِقَتْلِهَا إِيَّاهَا بِغَيْرِ أَمْرِهِ.

‘‘হাফ্সা বিন্ত ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) কে তাঁর এক ক্রীতদাসী যাদু করে। এমনকি সে ব্যাপারটির স্বীকারোক্তিও করে এবং যাদুর বস্ত্তটি উঠিয়ে ফেলে দেয়। এতদ্ কারণে ’হাফ্সা (রাঃ) ক্রীতদাসীটিকে হত্যা করেন। সংবাদটি ’উস্মান (রাঃ) এর নিকট পৌঁছুলে তিনি খুব রাগান্বিত হন। অতঃপর ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) তাঁকে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললে তিনি এ ব্যাপারে চুপ হয়ে যান তথা তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। বর্ণনাকারী বলেন: ’উসমান (রাঃ) এর অনুমতি না নিয়ে ক্রীতদাসীটিকে হত্যা করার কারণেই তিনি এতো রাগান্বিত হন’’।

                                   (‘আব্দুর রায্যাক, হাদীস ১৮৭৪৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬)

অনুরূপভাবে ’উমর (রাঃ) ও তাঁর খিলাফতকালে সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করার আদেশ জারি করেন।

বাজালা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَتَبَ عُمَرُ بْنُ الْـخَطَّابِ  أَنِ اقْتُلُوْا كُلَّ سَاحِرٍ وَسَاحِرَةٍ، قَالَ الرَّاوِيْ: فَقَتَلْنَا ثَلَاثَ سَوَاحِرَ.

’উমর (রাঃ) নিজ খিলাফতকালে এ আদেশ জারি করে চিঠি পাঠান যে, তোমরা সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করো। বর্ণনাকারী বলেন: অতঃপর আমরা তিনজন মহিলা যাদুকরকে হত্যা করি’’।

(আবূ দাউদ ৩০৪৩ বায়হাকী : ৮/১৩৬ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৮৯৮২, ৩২৬৫২ আব্দুর রায্যাক, হাদীস ৯৯৭২; আহমাদ ১৬৫৭; আবূ ইয়া’লা ৮৬০, ৮৬১)

’উমর (রাঃ) এর খিলাফতকালে উক্ত আদেশের ব্যাপারে কেউ কোন বিরোধিতা দেখাননি বিধায় উক্ত ব্যাপারে সবার ঐকমত্য রয়েছে বলে প্রমাণিত হলো।

গ্রন্থঃ হারাম ও কবিরা গুনাহ
লেখক/সংকলকঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী

Saturday, January 6, 2018

স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দাম্পত্য ও অধিকার


   স্বামী-স্ত্রী  উভয়ের দাম্পত্য ও অধিকার
----------------------------------------------------------

নারী পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী, সমাজের সচল জোড়া চাকার অন্যতম। পরিবারের ভিত্তি ও শিক্ষার প্রথম স্কুল এই নারী। প্রত্যেক মহান পুরুষের পশ্চাতে কোন না কোন নারী লুক্কায়িত থাকে অথবা পুরুষের মহত্বের পিছনে এই নারীর হাত অবশ্যই থাকে।

দাম্পত্য জীবনে  স্বামী-স্ত্রী উভয়েই উভয়ের মুখাপেক্ষী। প্রত্যেকের সম অধিকার রয়েছে একে অপরের উপর। ইসলামে এই হল ভারসাম্যমূলক পারস্পরিক সহায়তাভিত্তিক প্রেম-প্রীতির সুন্দরতম জীবন ব্যবস্থা।

মানুষ হিসাবে সমান অধিকার সকলের। কিন্তু তাহলেও সমাজে সুশৃঙ্খলার জন্য নেতা ও মান্যব্যক্তির বিশেষ প্রয়োজন। নচেৎ স্বাই ‘মোড়ল’ হলে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে না। নারী-পুরুষের ভূমিকা সমান হলেও নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব রয়েছে। নারী জাতিকে অপেক্ষাকৃত দুর্বলরূপে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ঘোষণাঃ-

هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ

অর্থাৎ, ‘‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।’’[1]

﴿وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ﴾

‘‘নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের কিছু মর্যাদা আছে।’’[2]

﴿الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ﴾

‘‘পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ শ্রেষ্ঠত্ব এজন্য যে, পুরুষ (তাদের জন্য) ধন ব্যয় করে থাকে।’’[3]

সুতরাং নারী পুরুষদের নেত্রী হতে পারে না। নেতার অর্ধাঙ্গিনী, রানী বা রাজমাতা হয়েই তো নারীর বিরাট গর্ব।

ইবাদতেও  স্বামী স্ত্রীর ইমাম।  স্বামী অশিক্ষিত এবং স্ত্রী পাকা হাফেয-কারী হলেও ইমামতি  স্বামীই করবে।[4]
পরন্তু স্ত্রী  স্বামীর পশ্চাতে দাঁড়িয়ে (জামাআত করে) নামাজ পড়বে।[5]

//// স্বামীর উপর স্ত্রীর অনস্বীকার্য অধিকারঃ-----

 স্বামীর উপর স্ত্রীর বহু অধিকার আছে, যা পালন করা  স্বামীর পক্ষে ওয়াজেব। সেই সমস্ত  অধিকার নিম্নরূপঃ-

★★১- আর্থিক অধিকারঃ-

♦ক))-  স্বামী বিবাহ-বন্ধনের সময় বা পূর্বে যে মোহর স্ত্রীকে প্রদান করবে বলে অঙ্গীকার করেছে তা পূর্ণভাবে আদায় করা এবং তা হতে স্ত্রীকে বঞ্চিত করার জন্য কোন প্রকার টাল-বাহানা না করা। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً﴾

‘‘সুতরাং তাদেরকে তাদের ফরয মোহর অর্পণ কর।’’[6]

♦খ))- আর্থিক অবস্থানুযায়ী স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করা। নিজে যা খাবে তাকে খাওয়াবে এবং যা পরিধান করবে ঠিক সেই সমমানের লেবাস তাকেও পরিধান করাবে।[7]

#অবশ্য নেকীর নিয়তে এই ব্যয়িত অর্থ  স্বামীর জন্য সদকার সমতুল্য হবে।[8]
অন্যান্য সকল ব্যয়ের চেয়ে স্ত্রীর পশ্চাতে ব্যয়ের নেকীই অধিক।[9]
এমন কি তাকে এক গ্লাস পানি পান করালেও তাতে নেকী লাভ হয়  স্বামীর।[10]

★★২- ব্যবহারিক অধিকারঃ-

♦ক)) - স্ত্রীর সাথে সদ্ভাবে বাস করা ওয়াজেব। দুই-একটি গুণ অপছন্দ হলেও সদাচার ও সদ্ব্যবহার বন্ধ করা মোটেই উচিৎ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئاً وَيَجْعَلَ اللهُ فِيهِ خَيْراً كَثِيراً﴾

‘‘আর তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। তোমরা যদি তাদেরকে ঘৃণা কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা যা ঘৃণা করছ, আল্লাহ তার মধ্যেই প্রভূত কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।’’[11]

সুতরাং সদ্ভাব ফুটিয়ে তুলতে  স্বামী সর্বদা নিজের প্রেমকে স্ত্রীর মনের সিংহাসনে আসীন করে রাখবে। তাকে সুন্দর প্রেমময় নামে ডাকবে, সে যা চায় তাই তাকে সাধ্যমত প্রদান করবে।  হৃদয়ের বিনিময়ে হৃদয় এবং শক্তি নয় বরং ভক্তি দ্বারাই সাথীর মন জয় করা কর্তব্য।

স্ত্রীর মন পেতে হলে আগে প্রেম দিতে হবে। ‘একটি পাখীকে ধরতে হলে তাকে ভয় দেখানো চলে না। তাকে আদর ক’রে, ভালোবাসা দিয়ে কাছে আনতে হয়। অতঃপর একদিন সে আপনিই পোষ মেনে নেয়। কারণ, স্নেহ ও ভালোবাসা বড়ই পবিত্র জিনিস।’

স্ত্রীর নিকট তার মাতৃলয়ের প্রশংসা করবে। সময় মত তাকে সেখানে নিয়ে যাবে বা যেতে-আসতে দেবে। আমাদের সমাজে অনেক পুরুষরা আছে যারা স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে যেতে দিতে চায় না। এটা অমানোবিক।

কোন কারণে স্ত্রী রেগে গেলে ধৈর্য ধরবে। মুর্খামি করলে সহ্য করে নেবে। যেহেতু পুরুষ অপেক্ষা নারীর আবেগ ও প্রতিক্রিয়া-প্রবণতা অধিক এবং পুরুষের চেয়ে নারীর ধৈর্য বহুলাংশে কম। সুতরাং দয়া করেই হোক অথবা ভালোবাসার খাতিরেই হোক তার ভুল ক্ষমা করবে। ‘যত ভুল হবে ফুল ভালোবাসাতে।’ তার ছোটখাট ত্রুটির প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবে না। অনিচ্ছাকৃত ভুলের উপর তাকে চোখ রাঙাবে না। অন্যায় করলে অবশ্য শাসন করার অধিকার তার আছে। তবে-

‘শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে,
ত্রুটির উপর প্রীতির সাথে সহন ধরে সে।’

তাছাড়া ভুল হওয়া মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব। ভুল-ত্রুটি দিয়ে সকলেরই জীবন গড়া। কিন্তু সেই ভুলকে প্রাধান্য দিয়ে বাকী জীবনে অশান্তি ডেকে আনার কোন যুক্তি নেই।

  প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ.

‘‘তোমরা নারীদের জন্য হিতাকাঙক্ষী হও। কারণ, নারী জাতি বাঁকা পাজরের হার হতে সৃষ্ট। আর তার উপরের অংশ বেশী বাকা (সুতরাং তাদের প্রকৃতিই বাকা ও টেরা।) অতএব তুমি সোজা করতে গেলে হয়তো তা ভেঙ্গেই ফেলবে। আর নিজের অবস্থায় উপেক্ষা করলে বাঁকা থেকেই যাবে। অতএব তাদের জন্য মঙ্গলকামী হও।’’[12]

সুতরাং স্ত্রীর নিকট থেকে যত বড় আদর্শের ব্যবহারই আশা করা যাক না কেন, তার মধ্যে কিছু না কিছু টেরামি থাকবেই। সম্পূর্ণভাবে  স্বামীর মনে অঙ্কিত সরল পথে সে চলতে চাইবে না। সোজা করে চালাতে গেলে হাড় ভাঙ্গার মত ভেঙ্গে যাবে; অর্থাৎ মন ভেঙ্গে দাম্পত্য ভেঙে (তালাক হয়ে) যাবে।[13]

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِىَ مِنْهَا آخَرَ.

‘‘কোন মু’মিন পুরুষ যেন কোন মু’মিন স্ত্রীকে ঘৃণা না করে। কারণ সে তার একটা গুণ অপছন্দ করলেও অপর আর একটা গুণে মুগ্ধ হবে।’’[14]

সুতরাং পূর্ণিমার সুদর্শন চন্দ্রিমারও কলঙ্ক আছে। সুদর্শন সৌরভময় গোলাপের সাথেও কাটা আছে। গুণবতীর মধ্যেও কিছু ত্রুটি থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

#কথিত আছে যে, একদা এক ব্যক্তি তার ঠোঁটকাটা স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে হযরত উমারের নিকট উপস্থিত হয়ে বাড়ির দরজায় তাঁকে ডাক দিয়ে অপেক্ষা করতেই শুনতে পেল হযরত ওমরের স্ত্রীও তাঁর সাথে কথা-কাটাকাটি করছেন এবং তিনি নীরব থেকে যাচ্ছেন। লোকটি আর কোন কথা না বলে প্রস্থান করতে করতে মনে মনে বলতে লাগল, ‘আমীরুল মু’মিনীনের যদি এই অবস্থা হয় অথচ তিনি খলীফা, কত কড়া মানুষ, তাহলে আমার আর কি হতে পারে?’ হযরত উমার দরজায় এসে লোকটিকে যেতে দেখে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার প্রয়োজন না বলেই তুমি চলে যাচ্ছ কেন?’ লোকটি বলল, ‘যার জন্য এসেছিলাম তার জবাব আমি পেয়ে গেছি হুজুর! আমার স্ত্রী আমার সাথে লম্বা জিভে কথা বলে। তারই অভিযোগ নিয়ে আপনার কাছে এসেছিলাম। কিন্তু দেখছি আপনারও আমার মতই অবস্থা?’ উমার বললেন, ‘আমি সহ্য করে নিই ভাই! কারণ, আমার উপর তার অনেক অধিকার আছে; সে আমার খানা পাক করে, রুটি তৈরী করে, কাপড় ধুয়ে দেয়, আমার সন্তানকে স্তনদুগ্ধ পান করিয়ে লালন-পালন করে, আমার যৌন চাহিদা পূরন করে,আমার হৃদয়ে শান্তি আনে, ইত্যাদি। তাই একটু সহ্য করে নিই।’ লোকটি বলল, ‘আমীরুল মু’মিনীন! আমার স্ত্রীও তো অনুরূপ।’ উমার বললেন, ‘তবে সহ্য করে নাও গো ভাই! সে তো সামান্যক্ষণই রাগান্বিতা থাকে।’

সুতরাং সুন্দর সৌরভময় গোলাপ তুলে তার সুঘ্রাণ নিতে হলে দু-একটা কাঁটা হাতে-গায়ে ফুঁড়বে বৈ কি? কাঁটার জন্য কেউ কি প্রস্ফুটিত গোলাপকে ঘৃণা করে? নারী গোলাপের মত সুন্দর ও কোমল বলেই কাঁটার ন্যায় কথা দ্বারা নিজেকে রক্ষা করতে চায়।[15]

পক্ষান্তরে রাগের মাথায় একজন পুরুষকে ক্ষান্ত করতে হলে তার বিবেক-বুদ্ধির খেই ধরে, একজন নারীকে ক্ষান্ত করতে হলে তার হৃদয় ও আবেগের খেই ধরে  এবং সমাজকে ক্ষান্ত করতে হলে তার প্রকৃতিকে জাগ্রত করে সফল হওয়া যায়। তাছাড়া ‘স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে কোন লাভও নেই; আঘাত করলেও কষ্ট, আর আঘাত পেলেও কষ্ট।’

স্ত্রী কোন ভাল কথা বললে উপেক্ষার কানে না শুনে খেয়ালের সাথে শোনা, কোন উত্তম রায়-পরামর্শ দিলে তা সাদরে গ্রহণ করাও সদ্ভাবে বাস করার শামিল।

যেমন, তার সাথে হাসি-তামাসা করা, সব সময় পৌরুষ মেজাজ না রেখে কোন কোন সময় তার সাথে বৈধ খেলা করা, শরীরচর্চা বা ব্যায়ামাদি করা ইত্যাদিও  স্বামীর কর্তব্য। প্রিয় নবী (সাঃ) স্ত্রী আয়েশার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করে একবার হেরেছিলেন ও পরে আর একবারে তিনি জিতেছিলেন।[16]

তদানুরূপ স্ত্রীকে কোন বৈধ খেলা দেখতে সুযোগ দেওয়াও দূষণীয় নয়।[17] তবে এসব কিছু হবে একান্ত নির্জনে, পর্দা-সীমার ভিতরে।

স্ত্রী ভালো খাবার তৈরী করলে, সাজগোজ করলে বা কোন ভালো কাজ করলে তার প্রশংসা করবে  স্বামী। এমনকি স্ত্রীর হৃদয়কে লুটে নেওয়ার জন্য ইসলাম মিথ্যা বলাকেও বৈধ করেছে।[18] তবে যে মিথ্যা তার অধিকার হরণ করে ও তাকে ধোঁকা দেয়, সে মিথ্যা নয়।

সদ্ভাবে বাস করতে চাইলে  স্বামী স্ত্রীর গৃহস্থালি কর্মেও সহায়তা করবে। এতে স্ত্রীর মন  স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রেমে আরো পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রিয় নবী (সাঃ); যিনি দুজাহানের বাদশাহ তিনিও সংসারের কাজ করতেন। স্ত্রীদের সহায়তা করতেন, অতঃপর নামাযের সময় হলেই মসজিদের দিকে রওনা হতেন।[19]

তিনি অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ ছিলেন; সবহস্তে কাপড় পরিষ্কার করতেন, দুধ দোয়াতেন এবং নিজের খিদমত নিজেই করতেন।[20]

 স্বামী যেমন স্ত্রীকে সুন্দরী দেখতে পছন্দ করে তেমনি স্ত্রীও  স্বামীকে সুন্দর ও সুসজ্জিত দেখতে ভালোবাসে। এটাই হল মানুষের প্রকৃতি। সুতরাং  স্বামীরও উচিৎ, স্ত্রীকে খোশ করার জন্য সাজগোজ করা। যাতে তারও নজর অন্য পুরুষের ( স্বামীর কোন পরিচ্ছন্ন আত্মীয়ের) প্রতি আকৃষ্ট না হয়। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য সাজসজ্জা করি, যেমন সে আমার জন্য সাজসজ্জা করে।’ আর আল্লাহ তাআ’লা বলেন,

﴿وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ﴾

‘‘নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন তাদের উপর আছে পুরুষদের--।’’[21]

বলাই বাহুল্য যে, এই অবহেলার ফলেই বহু আধুনিকা  স্বামী ত্যাগ করে অথবা অন্যাসক্তা হয়ে পড়ে।

খলীফা উমার <-এর নিকট একটি লোক উষ্কখুষ্ক ও লেলাখেপা বেশে উপস্থিত হল। সঙ্গে ছিল তার স্ত্রী।  স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তার নিকট থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রার্থনা করল। দূরদর্শী খলীফা সব কিছু বুঝতে পারলেন। তিনি তার  স্বামীকে পরিচ্ছন্নতা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর সে তার চুল, নখ ইত্যাদি কেটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ফিরে এলে তিনি তাকে তার স্ত্রীর নিকট যেতে আদেশ করলেন। স্ত্রী পরপুরুষ ভেবে তাকে দেখে সরে যাচ্ছিল। পরক্ষণে তাকে চিনতে পেরে তালাকের আবেদন প্রত্যাহার করে নিল!

এ ঘটনার পর খলীফা উমার < বললেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীর জন্য সাজসজ্জা কর। আল্লাহর কসম! তোমরা যেমন তোমাদের স্ত্রীগণের সাজসজ্জা পছন্দ কর; অনুরূপ তারাও তোমাদের সাজসজ্জা পছন্দ করে।[22]

স্ত্রীর এঁটো খাওয়া অনেক  স্বামীর নিকট অপছন্দনীয়। কিন্তু শরীয়তে তা স্বীকৃত। রসূল (সাঃ) পান-পাত্রের ঠিক সেই স্থানে মুখ রেখে পানি পান করতেন, যে স্থানে হযরত আয়েশা (রাঃ) মুখ লাগিয়ে পূর্বে পান করতেন। যে হাড় থেকে হযরত আয়েশা গোশ্ত ছাড়িয়ে খেতেন, সেই হাড় নিয়েই ঠিক সেই জায়গাতেই মুখ রেখে আল্লাহর নবী (সাঃ) গোশ্ত ছাড়িয়ে খেতেন।[23]

#তাছাড়া স্ত্রীর রসনা ও ওষ্ঠাধর (ঠোঁট) চোষণের ইঙ্গিতও শরীয়তে বর্তমান।[24]

এমন প্রেমের প্রতিমার এঁটো এবং চুম্বন তারাই খেতে চায়না, যারা একান্ত প্রেমহীন নীরস পুরুষ অথবা যাদের স্ত্রী অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা থাকে তারা অথবা যাদের নিকট কেবল লিঙ্গ যৌনসম্ভোগই মূল তৃপ্তি।

স্ত্রীকে বিভিন্ন উপলক্ষে (যেমন ঈদ, কুরবানী প্রভৃতিতে) ছোটখাট উপহার দেওয়াও সদ্ভাবে বাস করার পর্যায়ভুক্ত। এতেও স্ত্রীর হৃদয় চিরবন্দী হয়  স্বামীর হৃদয় জালে।

মোট কথা স্ত্রীর সাথে বাস তো প্রেমিকার সাথে বাস। সর্বতোভাবে তাকে খোশ রাখা মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব। প্রেমিককে কষ্ট দেওয়া কোন মুসলিম, কোন মানুষের, বরং কোন পশুরও কাজ নয়।

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِى.

‘‘তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সেই, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। আর আমি নিজ স্ত্রীর নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি।’’[25]

أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُهُمْ خِيَارُهُمْ لِنِسَائِهِمْ.

  ‘‘সবার চেয়ে পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর এবং ওদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ব্যক্তি সেই, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।’’(আহমদ)

وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٍ عِنْدَكُمْ.

  ‘‘সাবধান! তোমরা নারী (স্ত্রী)দের জন্য মঙ্গলকামী হও। যেহেতু তারা তো তোমাদের হাতে বন্দিনী।’’[26]

اتَّقُوا اللَّهَ فِى النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانَةِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ.

‘‘তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। যেহেতু তাদেরকে তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে বরণ করেছ এবং আল্লাহর বাণীর মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান হালাল করে নিয়েছ।’’[27]

অবশ্যই স্ত্রীর যথার্থ মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করার নাম ‘আঁচল ধরা’ বা ‘বউ পাগলামি’ নয়।

♦খ))-  স্বামীর উপর স্ত্রীর অন্যতম অধিকার এই যে, বিপদ আপদ থেকে  স্বামী তাকে রক্ষা করবে। স্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে যদি  স্বামী শত্রুর হাতে মারা পরে, তবে সে শহীদের মর্যাদা পায়।[28]

অনুরূপ স্ত্রীকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করাও তার এক বড় দায়িত্ব। তাকে দ্বীন, আকীদা, পবিত্রতা, ইবাদত, হারাম, হালাল, অধিকার ও ব্যবহার প্রভৃতি শিক্ষা দিয়ে সৎকাজ করতে আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দিয়ে আল্লাহর আযাব থেকে রেহাই দেবে।

মহান আল্লাহ বলেন,

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَاراً وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ﴾

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজ পরিবারকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও; যার ইন্ধন মানুষ ও পাথর --।’’[29]


♦গ)) - স্ত্রীর ধর্ম, দেহ, যৌবন ও মর্যাদায় ঈর্ষাবান হওয়া এবং এ সবে কোন প্রকার কলঙ্ক লাগতে না দেওয়া  স্বামীর উপর তার এক অধিকার। সুতরাং স্ত্রী এক উত্তম সংরক্ষণীয় ও হিফাজতের জিনিস। লোকের মুখে-মুখে, পরপুরুষদের চোখে-চোখে ও যুবকদের মনে-মনে বিচরণ করতে না দেওয়া; যাকে দেখা দেওয়া তার স্ত্রীর পক্ষে হারাম তাকে সাধারণ অনুমতি দিয়ে বাড়ি আসতে-যেতে না দেওয়া সুপুরুষের কর্ম।

আর এর নাম রক্ষণশীলতা বা গোঁড়ামী নয়। বরং এটা হল সুপুরুষের রুচিশীলতা ও পবিত্রতা। নারী-স্বাধীনতার নামে যারা এই বল্গাহীনতা ও নগ্নতাকে ‘প্রগতি’ মনে ক’রে আল্লাহ-ভক্তদের ‘গোঁড়া’ বলে থাকে, শরীয়ত তাদেরকেই ‘ভেঁড়া’ বলে আখ্যায়ন করে। আর ‘ভেঁড়া’ বা স্ত্রী-কন্যার ব্যাপারে ঈর্ষাহীন পুরুষ জান্নাতে যাবে না।[30]

নিজের ইচ্ছামত এ ঘর-ও ঘর, এ পাড়া-ও পাড়া, এ মার্কেট সে মার্কেট যেতে  স্বামী তার স্ত্রীকে বাধা দেবে। কোন প্রকার নোংরামী, অশ্লীলতা, গান-বাজনা, সিনেমা-থিয়েটারে নিজে যাবে না, স্ত্রীকেও যেতে দেবে না। নোংরা টেলিভিশন ও ভিডিও বাড়িতে রাখবে না। রেডিওতে গান-বাজনা শুনতে দেবে না। পর্যাপ্ত কারণ বিনা এবং আপোসের চুক্তি ও সম্মতি ছাড়া চার মাসের অধিক স্ত্রী ছেড়ে বাইরে থাকবে না। যেহেতু পুরুষের যৌনপ্রবৃত্তি যেমন, ঠিক তেমনি নারীরও। পুরুষের যেমন নারীদেহ সঙ্গলাভে পরমতৃপ্তি, অনুরূপ নারীও পুরুষের  সঙ্গলাভ পেয়ে চরম তৃপ্তি উপভোগ করে থাকে। অতএব প্রেমে অনাবিলতা বজায় রাখতে নারীকে হিফাযত করা পুরুষের জন্য ফরয এবং তা এক সুরুচিপূর্ণ কর্ম। পানি বা শরবতে সামান্য একটা পোকা বা মাছি পড়লে তা পান করতে কারো রুচি হয় না; আর নিজ স্ত্রীর সৌন্দর্য ও প্রেমে অপরের কাম বা কুদৃষ্টি, মন্তব্যের মুখ ও কামনার মন পড়লে তাতে কি করে রুচি হয় সুপুরুষের? সুতরাং যে পুরুষের অনুরূপ সুরুচি নেই সে কাপুরুষ বৈ কি?

#হিজরী ২৮৬ সনে ‘রাই’এর কাযীর নিকট এক মহিলা মুকাদ্দামা দায়ের করল। তার অভিভাবকের সাথে মিলে  স্বামীর বিরুদ্ধে সে তার মোহরানা বাবদ ৫০০ দিরহাম আদায় না দেওয়ার অভিযোগ করল। কাযী সাক্ষী তলব করলে সাক্ষী উপস্থিত করা হল। কিন্তু স্বাক্ষীদাতারা মহিলাটিকে চেনার জন্য তার চেহারা দেখাতে অনুরোধ জানালো। এ খবর  স্বামীর কানে গেলে কাযীর সামনে বলল, ‘আমি স্বীকার করছি যে, ৫০০ দিরহাম আমার স্ত্রীর পাওনা। আমি যথাসময়ে তাকে তা আদায় করে দেব। স্বাক্ষীর দরকার নেই। ও যেন চেহারা না খোলে!’

এ খবর স্ত্রীর নিকট গেলে সেও আল্লাহ অতঃপর কাযীকে সাক্ষী রেখে বলল, ‘আমিও আমার  স্বামীর নিকট থেকে প্রাপ্য উক্ত মোহরানার দাবী প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য ওকে ক্ষমা করে দিচ্ছি!’

এ শুধু এ জন্য যে, পর্দার মান ও মূল্য আছে নারীর কাছে, আর  স্বামীর আছে যথাযথ ঈর্ষা। তাই চেহারা খুলে বেআবরু করতে সকলেই নারাজ। এটাই তো সুরুচিপূর্ণ  মুসলিম দম্পতির পরিচয়।

একটি সত্য কথা এই যে, মহিলা ঈর্ষাবান পুরুষকে অপছন্দ করে। কিন্তু যে তার ব্যপারে ঈর্ষাবান নয়, তাকে সে আরো বেশী অপছন্দ করে।

স্ত্রীকে খামাখা সন্দেহ করাও  স্বামীর উচিৎ নয়। বৈধ কর্মে, চিকিৎসার জন্য বা অন্যান্য জরুরী কাজের জন্য পর্দার সাথে যেতে না দিয়ে তাকে অর্গলবদ্ধ করে রাখাই হল অতিরঞ্জন ও গোঁড়ামী। তাছাড়া এমন অবরোধ প্রথায় ইসলামের কোন সমর্থন নেই।

পক্ষান্তরে স্ত্রীকে সন্দেহ করলে দাম্পত্য জীবন তিক্ত হয়ে উঠে। কারণ দাম্পত্য সুখের  জন্য জরুরী;  স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের আমানতদারী, হিতৈষিতা, সত্যবাদিতা, অন্তরঙ্গতা, অনাবিল প্রেম, বিশ্বস্ততা, নম্রতা, সুস্মিত ব্যবহার ও বাক্যালাপ, একে অপরের গুণ স্বীকার। আর সন্দেহ এসব কিছুকে ধবংস করে ফেলে। কারণ সন্দেহ এমন জিনিস যার সূক্ষ্মতম শিকড় একবার মনের মাটিতে সঞ্চালিত হয়ে গেলে তাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না টেনে-ছিঁড়ে ফেলা হয়, ততক্ষণ সে প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করতে থাকে এবং সম্প্রীতি ও সুখের কথা ভাবতেই দেয় না।

এই সন্দেহের ফলশ্রুতিতেই বহু হতভাগা  স্বামী তাদের স্ত্রীদেরকে ভাতের চাল পর্যন্ত তালাবদ্ধ রেখে রান্নার সময় মেপে রাঁধতে দেয়! বলাই বাহুল্য যে, কথায় কথায় এবং কাজে কাজে স্ত্রীকে সন্দেহ করলে সে  স্বামীর সংসার নিশ্চয় এক প্রকার জাহান্নাম।

পরিশেষে, মহান আল্লাহর এই বাণী প্রত্যেক  স্বামীর মনে রাখা উচিৎ; তিনি বলেন,

[يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلادِكُمْ عَدُوّاً لَكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ]

‘‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয় তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের (পার্থিব ও পারলৌকিক বিষয়ের) শত্রু। অতএব তাদের ব্যপারে তোমরা সতর্ক থেকো। অবশ্য (দ্বীনী বিষয়ে অন্যায় থেকে তওবা করলে ও পার্থিব বিষয়ক অন্যায়ে) তোমরা যদি ওদেরকে মার্জনা কর, ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং ওদেরকে ক্ষমা করে দাও তাহলে জেনে রাখ যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[31]

 #বিঃদ্রঃ- 

পুরুষদের মাঝে অনেকেই আছে – নামায রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের ব্যপারে তারা অগ্রগামী, বাইরের লোকদের সাথে খুব সাধু, মানুষের মাঝে নিজদের সুনাম ধরে রাখার জন্য, নিজের নাম ভালো রাখার জন্য সদা ততপর – কিন্তু ঘরে আসলে তাদের মুখোশ খুলে ‘আসল চেহারা’ বেরিয়ে আসে! পুরুষদের অনেকেই নিজ ঘরের মানুষদের সাথেই ভালো আচরণ করেনা, তাদের হক্ক ঠিকমতো আদায় করেনা – যদিও বাইরের মানুষেরা তাকে ভালো, সদাচরণকারী ও পরোপকারী বলেই জানে। আশচর্যের ব্যপার হচ্ছে, বাইরের মানুষের কাছে যেই লোকটি সবচেয়ে ভালো, তার নিজের স্ত্রীর কাছে সেই লোকটি সবচাইতে খারাপ। বিবাহিত ভাইদের অনেকে নিজদের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথেও ভালো আচরণ করেন না, অনেকে নিজদের স্ত্রীদেরকে মানুষই মনে করেন না, তাদের একটু ভুল-ত্রুটি দেখতে পেলেই বাঘের মতো চার্জ করে বসেন। নিঃসন্দেহে এইটা মারাত্বক রকমের ভুল ও চরিত্রের সাংঘাতিক ত্রুটি যা একজন অনেক ইবাদতকারী বান্দাকেও খুব সহজেই জাহান্নামের অতল গহবরে প্রবেশ করিয়ে দেবে – আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। 

♣ আপনি যদি আল্লাহকে ভয় করেন, জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে বাচতে চান, তাহলে জেনে রাখুনঃ 

স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করে, তাদের হক্ক নষ্ট করে, তাদের সাথে অন্যায় ও জুলুম অত্যাচার করে আপনি জাহান্নামে যাবেন। স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ ও জুলুম করার কারণে কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে খারাপ বলে মনে করে, তাহলে আপনি যতই ইবাদত করে থাকেন না কেনো, আল্লাহর কাছেও আপনি খারাপ বলে গণ্য হবেন।  রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” তিরমিযীঃ ১১৬২; হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ ছহীহাহঃ ২৮৪। 

অন্য হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “স্বামীকে খুশী রেখে যে স্ত্রীলোক মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতে যাবে।” [ইবনে মাযাহ, তিরমিযী ও হাকেম]  সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, জান্নাতী হওয়ার জন্য স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্য উভয়ের ভালো হওয়ার সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন আছে!

♣  স্ত্রীদের প্রতি দয়া ও কোমলতা প্রদর্শন করা এবং হিংস্রতা থেকে দূরে থাকাঃ----

দুনিয়ার কোন মানুষই ভুল-ত্রুটির উর্ধে নয়। আপনার স্ত্রীও একজন মানুষ, তারা কোন রোবট নয় সুতরাং আপনি যেমন ভুল করতে পারেন, আপনার স্ত্রীও ভুল করতে পারে। আপনি নিজে চিন্তা করুন, আপনি দিনে-রাতে উঠতে বসতে কত ভুল করছেন কিন্তু আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করছেন ও সুযোগ দিচ্ছেন – তাহলে আপনি কেনো অন্য আরেকজনের সূক্ষ্ম ভুলকে পাহাড় সমান বানাচ্ছেন? স্ত্রীদের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করতে শিখুন, তাদেরকে উত্তম ভাষায় উপদেশ দিন, নিজে ভালো হয়ে তার সামনে সুন্দর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরুন। এতে করে যেমন আপনি নিজে মানসিকভাবে শান্তি পাবেন, স্ত্রী আপনার কটু কথার অত্যাচার থেকে রেহাই পাবে – এবং এইরকম ভালো আচরণ ও কোমলতার অভ্যাসের বিনিময়ে আশা করা যায় আপনার স্ত্রীর কোন ভুল থাকলে সে সংশোধন করতে আগ্রহী হবে।  পক্ষান্তরে আপনি যদি কোমলতা না দেখান, সামান্য ব্যপার নিয়ে স্ত্রীর সাথে বাধাবাধি করেন তাহলে জেনে রাখুন – এতে হিতে বিপরীত হবে। বেশি সমালোচনা দুনিয়ার সবচাইতে ভালো মানুষটাকেও খারাপ বানিয়ে দেয়, এতে তার মাঝে খারাপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়, ফলে সে নিজের ভুল সংশোধন না করে উলটো বেকে বসে। এইজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদেরকে খুব বেশি নসীহত করেছেন তাঁর উম্মতদেরকে, তারা যাতে করে তাদের স্ত্রীদের জন্য কল্যানকামী হয়, তাদের সাথে ভালো আচরণ করে।  আ’মর ইবনুল আহ্ওয়াস থেকে বর্ণিত। তিনি বিদায় হাজ্জে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করেন এবং ওয়াজ-নসীহত করেন। এরপর তিনি বলেনঃ তোমরা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ শুনে নাও। কেননা তারা তোমাদের নিকট আবদ্ধ আছে। এর অধিক তাদের উপর তোমাদের কর্তৃত্ব নাই যে, তারা যদি প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়, সত্যিই যদি তারা তাই (প্রকাশ্য অশ্লীলতা) করে, তবে তোমরা তাদেরকে পৃথক বিছানায় রাখবে এবং আহত হয় না এরূপ হাল্কা মারধর করবে। অতঃপর তারা তোমাদের অনুগত হয়ে গেলে তাদের উপর আর বাড়াবাড়ি করো না। স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তোমাদের উপরও তাদের অধিকার আছে। তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার এই যে, তারা তোমাদের শয্যা তোমাদের অপছন্দনীয় লোকদের দ্বারা মাড়াবে না এবং তোমাদের অপছন্দনীয় লোকেদেরকে তোমাদের ঘরে প্রবেশানুমতি দিবে না। সাবধান! তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তাদের ভরণপোষণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সজ্জার ব্যাপারে তোমরা তাদের প্রতি শোভনীয় আচরণ করবে। সুনানু ইবনে মাজাহ্, নিকাহ বা বিবাহ অধ্যায়ঃ ১৮৫১, তিরমিযী ১১৬৩, হাদীসটি হাসান সহীহ, ইরওয়াহ ১৯৯৭-২০২০। 

♦♦♦ আপনি নিজে আল্লাহকে মানেন না, আপনার চরিত্র যদি ফেরাউনের মতো হয় তাহলে আপনি কি করে আশা করেন আপনার স্ত্রী আসিয়ার (আঃ) এর মতো উত্তম হবে? আপনি মুহা’ম্মাদ সাঃ এর আদর্শকে অনুসরণ করুন – তাহলে আপনি আশা করতে পারেন আপনার স্ত্রী খাদিজাহ (রাঃ), আয়িশাহ (রাঃ) এর মতো হবে।  আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কোনদিন নিজের স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলেনি নি, তাদেরকে গালি দেন নি – অন্যায়ভাবে কটু কথা বলে তাদেরকে কষ্ট দেন নি। বরং, তিনি কোমলতা প্রদর্শনের জন্য কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। এনিয়ে হাদীসগুলো দেখুনঃ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “আমার কাছ থেকে মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করার শিক্ষা গ্রহণ কর। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টা সর্বাপেক্ষা বাঁকা। অতএব তুমি যদি সোজা করতে যাও, তবে ভেঙ্গে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি ফেলে রাখ তবে বাঁকা হতেই থাকবে। অতএব, নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর।” [সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীনঃ ২৭৩] 

আয়েশা (রাযিঃ) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ দয়ালু, তিনি কোমলতাকে পছন্দ করেন। তিনি কোমলতার বিপরীতে দেন যা তিনি সহিংসতার বিপরীতে দেন না, কোমলতা ব্যতীত অন্য কিছুর বিপরীতে দেন না।” [সহীহ মুসলিম] 

আয়েশা (রাযি:) থেকে আরেকটি হাদিসে এসেছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ কোমলতাপূর্ণ, তিনি সকল বিষয়ে কোমলতাকে পছন্দ করেন।” বুখারি ও মুসলিম। জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযি:) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “যাকে কোমলতা থেকে বঞ্চিত করা হল তাকে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত করা হল।” [সহীহ মুসলিম] 

ইমাম আহমদ আয়েশা (রাযি:) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাকে খেতাব করে বলেছেন, হে আয়েশা! তুমি কোমলতা অবলম্বন করো; কেননা আল্লাহ তাআলা যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান তখন তাদেরকে কোমলতার পথ দেখান, অন্য এক বর্ণনা মতে- আল্লাহ যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান, তিনি তাদের মধ্যে কোমলতার প্রবেশ ঘটান।” [মুসনাদে আহমদ]  দুনিয়াবাসীর মাঝে আপনার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনই আপনার কোমলতা পাওয়ার সবচেয়ে বেশি দাবীদার। 

সর্বশেষ, আপনি যদি আপনার ঘরের নারীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন – আপনার পরকাল নষ্ট হবে, সাথে সাথে আপনি দুনিয়ার জীবনে থার্ডক্লাস নিম্নশ্রেণীর পুরুষ হিসেবেই গণ্য হবেন।  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে। আর যারা অসম্মানিত, নারীদের প্রতি তাদের আচরণও হয় অসম্মানজনক।”
[সুনানে আত-তিরমিযী]

[1] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭) [2] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৮) [3] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪) [4] (মাজাল্লাতুলবহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১/৩৮২) [5] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৪১৬) [6] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২৪) [7] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইনাঃ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৪৭পৃঃ) [8] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ১৯৩০নং) [9] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ১৯৩১নং) [10] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৭৩৬নং, ইরওয়াউল গালীল ৮৯৯ নং) [11] (সূরা আন-নিসা (৪) : ১৯) [12] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৩৮নং) [13] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৩৯নং) [14] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৪০নং) [15] (হুক্বূক্বুল মারআতিল মুসলিমাহ, কওসর আল-মীনাবী ৫২ পৃঃ) [16] (মুসনাদে আহমদ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৫০পৃঃ) [17] (বুখারী, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ২৭৫পৃঃ) [18] (বুখারী, মুসলিম, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫৪৫নং) [19] (বুখারী, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ২৯০পৃঃ) [20] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬৭০নং, আদাবুয যিফাফ ২৯১পৃঃ) [21] (সূরা আল-বাক্বারাহ (২) : ২২৮) [22] (তুহফাতুল আরূস, ১০৩-১০৪পৃঃ) [23] (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৭৭পৃঃ) [24] (বুখারী ৫০৮০নং, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬২৩নং) [25] (ত্বাহাবী , হাকেম , দাঃ, আদাবুয যিফাফ ২৬৯পৃঃ) [26] (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আদাবুয যিফাফ ২৭০পৃঃ) [27] (মুসলিম) [28] (তিরমিযী, আবু দাঊদ, নাসাঈ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫২৯নং) [29] (সূরা আত্তাহরীম (৬৬) : ৬) [30] (নাসাঈ, দাঃ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৫৫পৃঃ) [31] (সূরা তাগাবুন (৬৪) : ১৪ আয়াত
) আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য / আবদুল হামীদ ফাইযী / বিবাহ ও দাম্পত্য বিষয়াবলী।


সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ

এক গ্রামে ত্বাইয়েব ও তাহের নামে দুই বন্ধু ছিল। তাদের মধ্যে ছিল দারুণ বন্ধুত্ব। যাকে বলে গলায় গলায় ভাব। এদের মধ্যে ত্বাইয়েব এলাকায় ভাল ছেলে হিসাবে পরিচিত ছিল। লেখা-পড়া, চাল-চলন, আচার-আচরণে আর পাঁচটা ছেলের চেয়ে ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। পক্ষান্তরে তাহের ছিল দুষ্ট প্রকৃতির। দুষ্টুমিতে তার কোন জুড়ি ছিল না। গ্রামে কারো গাছের পেয়ারা, কারো পেঁপে, কারো তাল, কারো নারিকেল চুরি করে খাওয়াই ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস। কাউকে গালি দেওয়া, কাউকে অযথা চড়-থাপ্পড় মারা ছিল তার মজ্জাগত দোষ। গ্রামের প্রভাবশালী মোড়লের ছেলে বলে তার গায়ে কেউ হাত তোলার সাহস পেত না। কিন্তু গ্রামবাসী তাকে কখনো ভাল চোখে দেখত না। কোন লোক তার ছেলে বা ভাই-ভাতিজাকে তাহেরের সঙ্গে মিশতে দিত না।

একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে ত্বাইয়েব দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ত্বাইয়েবের এ বিপদ মুহূর্তে তাহের এগিয়ে আসে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, তাদের বাড়িতে খবর দেয়। এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে ত্বাইয়েব তাহেরের বাড়িতে যায়। এ থেকে দু’জন দু’জনের বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করে। ফলে তাদের মধ্যে সখ্যতা আরো বাড়ে। কালক্রমে তাহেরের দুষ্ট চরিত্রের অসৎ গুণাবলী ত্বাইয়েবের মাঝে সঞ্চারিত হয়। সেও লিপ্ত হয় নানা গর্হিত কাজে। ফলে তার লেখাপড়ায় দুর্বলতা চলে আসে। বন্ধুরা তার ধারে কাছে ঘেঁষে না, শিক্ষকরাও তাকে আর ভাল চোখে দেখেন না। গ্রামের লোকেরা পরস্পর বলাবলি করতে থাকে, দুষ্ট তাহেরের খপ্পরে পড়ে সোনার টুকরা ত্বাইয়েব ছেলেটাও দিন দিন গোল্লায় যেতে বসেছে।

একদিন ত্বাইয়েবের কানেও এসব কথা চলে আসে। তখন সে ভাবতে থাকে, তার এই অধঃপতনের মূল কারণ কি? সে চিন্তা করতে থাকে এক সময় আমি ক্লাসে প্রথম হ’তাম, এখন আমার রোল নম্বর দশের নীচে। এক সময় ক্লাসের ছেলেরা আমার পিছে পিছে ঘুরত অংক, ইংরেজী বুঝে নেওয়ার জন্য। অথচ আজ আমি সবার চোখে খারাপ হয়ে গেছি। অন্তরঙ্গ বন্ধু আব্দুল্লাহও আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেছে। লেখাপড়ায় সে ব্যাপক উন্নতি ও ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেছে। চরিত্র-মাধুর্যেও সে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। আজ সে গ্রামের ভাল ছেলে বলে পরিচিত। এর মূল কারণ খুঁজতে গিয়ে সে রহস্য উদঘাটন করে যে, স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা আব্দুর রহমান স্যারের সাথে আব্দুল্লাহর সম্পর্ক। তাঁর কথামত সে চলে। পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে। নিয়মিত পড়াশুনা করে। খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে না। পড়ালেখার ফাঁকে অবসর সময়ে ধর্মীয় বই-পুস্তক পড়ে এবং কুরআন-হাদীছ অধ্যয়ন করেই তার সময় কাটে। তাই তার এত সুনাম, লোকের মুখে মুখে তার প্রশংসা। ত্বাইয়েব মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, তাকেও আব্দুল্লাহর মত হ’তে হবে। ত্বাইয়েব তার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী মাওলানা আব্দুর রহমান ছাহেবের নিকট গিয়ে বলল, স্যার! আমি খারাপ হয়ে গেছি, শেষ হয়ে গেছে আমার ক্যারিয়ার। এ থেকে উত্তরণের উপায় কি? কিভাবে আমি ভাল হ’তে পারি স্যার? মাওলানা আব্দুর রহমান বললেন, তুমি আগে এরূপ ছিলে না। সঙ্গদোষে তোমার এ অবস্থা? তোমাকে আমি একটি হাদীছ শুনাব,

عَنْ أَبِيْ مُوْسَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَثَلُ الْجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَالسُّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيْرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُّحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَ إِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيْرِ إِمَّا أَنْ يُّحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا خَبِيْثَةً-

আবূ মূসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, মিশকে আম্বরওয়ালা ও হাপরওয়ালার ন্যায়। মিশকে আম্বরওয়ালা তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তুমি তার কাছ থেকে কিছু সুগন্ধি ক্রয় করবে অথবা তার নিকট থেকে তুমি সুগন্ধি লাভ করবে। আর হাপরওয়ালা তোমার জামা-কাপড় জ্বালিয়ে দেবে কিংবা তার নিকট থেকে তুমি দুর্গন্ধ পাবে’ (বুখারী হা/৫৫৩৪; মিশকাত হা/৫০১০)।

এ হাদীছ থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা হ’ল, চরিত্রবান, সৎ ও ভদ্র দেখে বন্ধু নির্বাচন করতে হবে। পাশাপাশি তোমাকে নিয়মিত ছালাত আদায়, অবসরে কুরআন-হাদীছ অধ্যয়ন এবং প্রতিদিন নিয়মিত ৫/৬ ঘণ্টা পড়ালেখা করতে হবে। খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ পরিহার করে চলতে হবে। আড্ডা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এসব যদি মেনে চলতে পার, তাহ’লে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তুমি সকলের প্রিয়পাত্রে পরিণত হ’তে পারবে।

অতঃপর ত্বাইয়েব তার শিক্ষকের পরামর্শমত চলতে শুরু করে। অল্পদিনের মধ্যে লেখাপড়ায় তার যথেষ্ট উন্নতি হয়। বিনা প্রয়োজনে সে বাড়ির বাইরে যায় না। খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে না। অবসরে সাহিত্যচর্চা করে, ধর্মীয় বই পড়ে। এভাবে চলতে চলতে অল্পদিনের মধ্যেই ত্বাইয়েব সবার মন জয় করতে সক্ষম হয়। সবাই তাকে দেখলে পূর্বের মত আদর করে। বাবা-মা তাকে নিয়ে গর্ব করেন। সামনে তার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা। শিক্ষক-অভিভাবক সবার প্রত্যাশা ত্বাইয়েব এবার আরো ভাল করবে।

শিক্ষা : সৎ ও উত্তম চরিত্রের অধিকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। অসৎসঙ্গ সর্বদা পরিহার করতে হবে। ছেলে-মেয়ের বন্ধু-বান্ধব সম্পর্কে অভিভাবকদেরও সতর্ক থাকতে হবে। কোনক্রমেই যাতে চরিত্রহীনদের সাথে তাদের বন্ধুত্ব না হয়, সে বিষয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিতে হবে।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

Tuesday, January 2, 2018


দাড়ি রাখা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করুনঃ-
:
আমাদের দেশে দাড়ি রাখা সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে, সেটা হল ''দাড়ি রাখা সুন্নত; অতএব দাড়ি রাখলে ভাল আর না রাখলেতেমন কোন সমস্যা নেই, একটা সুন্নত পালন করা হল না এই আর কি।'' জেনে রাখুন, এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল ধারণা।
.
দাড়ি রাখা কোন অর্থে সুন্নত আর কোন অর্থে ফরয বা ওয়াজিব আগে সেটা বুঝার চেষ্টা করুন। ইসলামে শরীয়তের বিধানের প্রধান সুত্র হচ্ছে কুরআন ও রাসুল (সাঃ) এর সহীহ সুন্নাহ অর্থাৎ সহীহ হাদিস। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌পাক যেসকল বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন ও নিষেধ করেছেন তা পালন করা আমাদের জন্য ফরয। আশা করি বিষয়টি সকলের কাছেই পরিষ্কার অর্থাৎ বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়।
.
এবার আসুন, দাড়ি রাখা কোন অর্থে সুন্নত আর কোন অর্থে ফরয বা ওয়াজিব সেটা জানার ও বুঝার চেষ্টা করি।
.
আল্লাহ্‌পাক পবিত্র কুরআনে বহু আয়াতে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মেনে চলার জন্য আমাদের বলেছেন। তাঁর মানে হল, রাসুল (সাঃ) যে সকল বিষয়ে আমাদের আদেশ ও নিষেধ করেছেন তা মেনে চলাও আমাদের জন্য ফরয/ওয়াজিব । কুরআনের আয়াতগুলো এখানে দেয়া হল -
.
রাসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরকে আহ্বানের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে। [আন-নুরঃ ৬৩]
.
আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়। [আল-ইমরানঃ ১৩২]
.
যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে [মুহাম্মদ সঃ] অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালবাসেন [আল ইমরানঃ ৩১]
.
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না। [আল-আনফালঃ ২০]
.
আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। [সূরা আল আহজাবঃ ৩৬]
.
বলুনঃ আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর, তবে সৎ পথ পাবে। রসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌছে দেয়া। [আন-নুরঃ ৫৪]
.
রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [আল-হাশরঃ ৭]
.
দাড়ি রাখার জন্য রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ -

ইবনে ওমর (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবেঃ দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে । (বুখারী শরীফ, নবম খণ্ড, হাদিস নং - ৫৪৭২ ইফা)
.
তাহলে বুঝা গেল যে, শরীয়তের বিধানের দ্বিতীয় সুত্র যেহেতু সহীহ হাদিস কাজেই সেই অর্থে দাড়ি রাখা সুন্নত। আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌পাক রাসুল (সাঃ) এর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন কাজেই সেই অর্থে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মেনে চলা আমাদের জন্য ফরয। আরও একটি বিষয় সরন রাখা প্রয়োজন যে, রাসুল (সাঃ) জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে প্রাপ্ত আল্লাহ্‌পাকের নির্দেশ ব্যতিত কোন কথা বা কাজের নির্দেশ বা নিষেধ করতেন না। আল্লাহ্‌পাক ভাল জানেন।
.
দাড়ি রাখা সম্পর্কে উলামাগনের কেউ বলেছেন যে, দাড়ি রাখা ফরজ। কারন রাসূল (সা) আল্লাহ্‌ তা'আলার নির্দেশ ব্যতিত কোন কথা বলতেন না আর তাই দাড়ি রাখার ব্যাপারে রাসূল (সা) এর নির্দেশ মানে আল্লাহ্‌ তা'আলারই নির্দেশ। আবার কেউ বলেছেন যে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব আবার কেউ বলেছেন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আল্লাহ্‌ তা'আলা ভাল জানেন।
.
আশা করি, এবার সকলের দাড়ি রাখার বিষয়ে আর কোন সন্দেহ থাকবে না। আল্লাহ্‌পাক আমাদের সকলকে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মেনে জীবন চলার তৌফিক দান করুন। আমীন।
.
কোরআন মাজিদে সরাসরি দাড়ি রাখার কথা বলা হয়নি তবে হারুন আঃ এর ঘটনায় দাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে ।পবিত্র কুরআনে দাড়ি সম্পর্কে একটি আয়াত আছে- মুসা (আঃ) তাঁর কওমের নিকট ফিরে এসে যখন দেখলেন তাঁর কওম গোমরা হয়ে গেছে, তখন তিনি হারুন (আঃ) কে প্রশ্ন করলেন এবং হারুন (আঃ) জবাবে বলেনঃ

“হে আমার মায়ের ছেলে! আমার দাড়ি ধরো না এবং আমার মাথার চুলও টেনো না” [ত্বোয়া-হা, আয়াত ৯৪]
.
এখানে বুঝা যাচ্ছে হারুন (আঃ) এর দাড়ি ছিল আর মুসা (আঃ) তার দাড়ি ধরেছিলেন।
.
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি রাখার আদেশ করেছেন। এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, দাড়ির বিধানটি শরীয়তের একটি মৌলিক ও সাধারণ বিধান। একে নিছক আরবীয় রীতি বা বিশেষ স্থান-কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করা মারাত্মক ভ্রান্তি।
.
সব কিছু আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন -

আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর। [আয-যারিয়াতঃ ৪৯]

পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। [ইয়াসিনঃ ৩৬]

আমি (আল্লাহ) তোমাদেরকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছি [আন্-নাবাঃ আয়াত ৮]

উপরের আয়াতত্রয় অনুযায়ী দাড়ির মাধ্যমে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-

যথাঃ ১) দাড়িযুক্ত মানুষ (পুরুষ) ও ২) দাড়িবিহীন মানুষ (মহিলা)।

কোন পুরুষকে যদি বলা হয় আপনি কি মহিলা হতে চান ? কোন বিবেকবান লোকই তা চাবে না । তাহলে আমরা কেন আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশের বিপরীত কাজ করি । অর্থাৎ দাড়ি ক্লিন করে মহিলাদের আকার ধারন করি!!

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন, "আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই । " [আর-রুমঃ ৩০]

এ প্রসঙ্গে শয়তানের একটা উদ্ধত ঘোষণাও আল্লাহ তাআলা বান্দাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন । আল্লাহ তা'আলা বলেন,

শয়তান বললঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। [আন-নিসাঃ ১১৮-১১৯]

''এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।'' আয়াতের এ অংশের আলোচনায় শাববীর আহমদ উসমানী রাহ. বলেছেন, ‘দাড়ি মুন্ডানোও এ আকৃতি পরিবর্তনের মধ্যে পড়ে ।’ (দেখুন : তাফসীরে উসমানী (মূল) পৃ. ১২৫; (অনুবাদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১/৪৪৬)

আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করার প্রসঙ্গে তাফসীরে বয়ানুল কুরআন বলেছেন, এটা ফাসেকী কাজকর্মের অন্তর্ভুক্ত । যেমন দাড়ি মুন্ডানো, শরীরে উল্কি আঁকা ইত্যাদি ।-তাফসীরে বয়ানুল কুরআন ১/২/১৫৭

বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রাহ. বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিল। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও মোচ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটা কী?’ সে বলল, ‘এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা মোচ কাটব ও দাড়ি লম্বা রাখব।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১৬-১১৭, হাদীস : ২৬০১৩)

পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে দু’জন দূত পাঠান। এদের দাড়ি ছিল কামানো আর গোঁফ ছিল বড় বড়। রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে তাদের এই অবয়ব এতই কুৎসিত লেগেছিল যে তিনি মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের ধ্বংস হোক, এমনটি তোমাদের কে করতে বলেছে? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু কিসরা। তিনি (সাঃ) তখন উত্তর দেন, আমার রব্ব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত আদেশ করেছেন যেন আমি দাড়ি ছেড়ে দেই এবং গোঁফ ছোট রাখি। (ইবনে জারির আত তাবারি, ইবন সা’দ ও ইবন বিশরান কর্তৃক নথিকৃত। আল আলবানি এক হাসান বলেছেন। দেখুন আল গাযালির ফিক্বহুস সিরাহ ৩৫৯ পৃষ্ঠা)
.
* দাড়ি রাখা যাই হোক না কেন প্রকৃত মুসলমান দাড়ি রাখবে, এটাই স্বাভাবিক । আমাদের দাড়িতে মানাক বা না মানাক আমরা আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) কে ভালবেসে দাড়ি রাখব ।
.
এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কাটার সুযোগ শরীয়তে রয়েছে। হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ও হযরত আবু হুরায়রা রা. এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটেছেন।
.
আবু যুরআ রাহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. তাঁর দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯২; ২৫৯৯৯)
.
কিন্তু কোনো সহীহ বর্ণনায় এক মুষ্ঠির ভিতরে দাড়ি কাটার কোনো অবকাশ পাওয়া যায় না।
.
এখন আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, আপনি কি করবেন। আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মানবেন নাকি সমাজের মানুষের কাছে লজ্জার ভয়ে কিংবা কাফির-মুশরিকদের অন্ধ অনুসরণ করবেন ?

Monday, January 1, 2018

দানশীলতা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে পুণ্য কাজে ব্যয় করার বিবরণ



গ্রন্থঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন
অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ (كتاب المقدمات)
হাদিস নম্বরঃ ৫৬২


৬০: দানশীলতা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে পুণ্য কাজে ব্যয় করার বিবরণ

১৪/৫৬২। আবূ কাবশাহ ‘আমর ইবনে সা‘দ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘আমি তিনটি জিনিসের ব্যাপারে শপথ করছি এবং তোমাদেরকে একটি হাদীস বলছি তা স্মরণ রাখোঃ
(১) কোন বান্দার মাল সাদকাহ করলে কমে যায় না।
(২) কোন বান্দার উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা হলে এবং সে তার উপর ধৈর্য-ধারণ করলে আল্লাহ নিশ্চয় তার সম্মান বাড়িয়ে দেন, আর
(৩) কোন বান্দা যাচ্ঞার দুয়ার উদ্ঘাটন করলে আল্লাহ তার জন্য দরিদ্রতার দরজা উদ্ঘাটন করে দেন।’’ অথবা এই রকম অন্য শব্দ তিনি ব্যবহার করলেন।

‘‘আর তোমাদেরকে একটি হাদীস বলছি তা স্মরণ রাখো।’’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ায় চার প্রকার লোক আছে;
(১) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন ও (ইসলামী) জ্ঞান দান করেছেন। অতঃপর সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে এবং তার মাধ্যমে নিজ আত্মীয়তা বজায় রাখে। আর তাতে যে আল্লাহর হক রয়েছে তা সে জানে। অতএব সে (আল্লাহর কাছে) সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্তরে অবস্থান করবে।

(২) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ (ইসলামী) জ্ঞান দান করেছেন; কিন্তু মাল দান করেননি। সে নিয়তে সত্যনিষ্ঠ, সে বলে যদি আমার মাল থাকত, তাহলে আমি (পূর্বোক্ত) অমুকের মত কাজ করতাম। সুতরাং সে নিয়ত অনুসারে বিনিময় পাবে; এদের উভয়ের প্রতিদান সমান।

(৩) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ মাল দান করেছেন; কিন্তু (ইসলামী) জ্ঞান দান করেননি। সুতরাং সে না জেনে অবৈধরূপে নির্বিচারে মাল খরচ করে; সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে না, তার মাধ্যমে নিজ আত্মীয়তা বজায় রাখে না এবং তাতে যে আল্লাহর হক রয়েছে তাও সে জানে না। অতএব সে (আল্লাহর কাছে) সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্তরে অবস্থান করবে। আর

(৪) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন ও (ইসলামী) জ্ঞান কিছুই দান করেননি। কিন্তু সে বলে, যদি আমার নিকট মাল থাকত, তাহলে আমিও (পূর্বোক্ত) অমুকের মত কাজ করতাম। সুতরাং সে নিয়ত অনুসারে বিনিময় পাবে; এদের উভয়ের পাপ সমান।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ সূত্রে)  [1]

[1] তিরমিযী ২৩২৫, ইবনু মাজাহ ৪২২৮, আহমাদ ১৭৫৭০ হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=23527

আহলে কুরআন কারা?


প্রশ্ন (১/১২১) : আহলে কুরআন কারা? এদের উৎপত্তি কখন থেকে? এরা কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত কি?

-হাসান, তানোর, রাজশাহী।

উত্তর : যারা কুরআন মুখস্থ করে ও অর্থ অনুধাবন করে এবং তদনুযায়ী আমল করে তারাই মূলতঃ আহলে কুরআন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কতক লোক আহলে কুরআন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বলেন, কুরআন তেলাওয়াতকারীগণ আহলে কুরআন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা’ (ইবনু মাজাহ হা/২১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/২১৬৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৪৩২)। অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় মানাভী বলেন, ‘অর্থাৎ কুরআনের হাফেযগণ এবং তদনুযায়ী আমলকারী আল্লাহর ওলীগণ’ (ফায়যুল কাদীর হা/২৭৬৮, ৩/৬৭)।

কিন্তু বর্তমান যুগে হাদীছ অস্বীকারকারী ভ্রান্ত ফেরকার লোকেরা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ বলে দাবী করে। অথচ কুরআনের অসংখ্য আয়াতে হাদীছ তথা রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নির্দেশ রয়েছে। যা তারা মানেনা। বস্ত্ততঃ রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর একটি বাস্তব চিত্র হ’ল ভ্রান্ত ফেরকা আহলে কুরআন।

রাসূল (ছাঃ) উক্ত দল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ‘জেনে রাখো আমাকে কিতাব (কুরআন) এবং তার সাথে অনুরূপ একটি বস্ত্ত দেয়া হয়েছে। অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন কোন পেটপুরে খাদ্য গ্রহণকারী (প্রাচুর্যবান) ব্যক্তি তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই গ্রহণ কর, তাতে যা হালাল পাবে তা হালাল আর তাতে যা হারাম পাবে তা হারাম মনে কর’ (আবুদাঊদ হা/৪৬০৫ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৬২)। অন্য হাদীছে এসেছে, ‘আমি যেন তোমাদের মধ্যে কাউকে এমন অবস্থায় না পাই যে, সে তার সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে এবং তার নিকট যখন আমার আদিষ্ট কোন বিষয় অথবা আমার নিষেধ সম্বলিত কোন কিছু (হাদীছ) উত্থাপিত হবে তখন সে বলবে, আমি তা জানি না, আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে আমরা যা পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব’ (আবুদাঊদ হা/৪৬০৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৬৩)।

রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে বাস্তবে দেখা দেয়। এ সময় এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটে, যারা সুন্নাতকে অস্বীকার করে। ইমাম শাফেঈ এমন একজন হাদীছ অস্বীকারকারী ব্যক্তির সাথে তার মুনাযারার কথা উল্লেখ করেছেন (কিতাবুল উম্ম ৭/২৮৭-২৯২)। সেখানে তিনি তার দাবীর অসারতা প্রমাণ করেছেন। অতঃপর দীর্ঘ এগারো শত বছর হাদীছ অস্বীকারকারীদের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ মিলেনি। বিগত শতাব্দী তথা ত্রয়োদশ হিজরীতে এই ফিৎনার পুনরাবির্ভাব ঘটে মিসর, ইরাক এবং ভারতে (বিস্তারিত দ্রঃ ‘হাদীছের প্রামাণিকতা’ বই)। বর্তমানে বাংলাদেশেও এই ভ্রষ্ট আক্বীদার কিছু ব্যক্তির আবির্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

 ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেন, ‘তারা কাফের এবং ইসলাম হ’তে খারিজ। তাদের হাশর হবে ইহূদী ও নাছারা বা অন্যান্য ভ্রান্ত মতাবলম্বীদের সাথে’ (মিফতাহুল জান্নাহ পৃঃ ৫)।