Monday, February 19, 2018

এক বোন তার দাম্পত্য জীবনের প্রথম রজনী নিয়ে লিখছেন।


এক বোন তার দাম্পত্য জীবনের প্রথম রজনী নিয়ে লিখছেন।
... ... ...
উনি লিখছেন যখন উনার বহুল প্রতিক্ষীত স্বামীর সাথে প্রথম
সাক্ষাত হলো। তখন অনেক সাচ্ছন্দে, আনন্দ-উল্লাসে কথা বার্তা হলো। বহু প্রশ্ন-উত্তর ও হলো।
... ... ...
তবে তিনি নাকি তার পরম প্রিয় স্বামীর একটি প্রশ্নের জন্য অপেক্ষমান ছিলেন যে, যখনই আমার স্বামী আমাকে ঐ প্রশ্নটা করবেন আমি বুক ফুলিয়ে গর্বের সাথে তার উত্তর দিব।
... ... ...
কিন্তু আফসোস ! তিনি আমাকে ঐ প্রশ্নটি করেন নি। অবশেষে আমি নিজেই আমার স্বামীকে প্রশ্ন করে বসলাম যে আপনি আমাকে অনেক প্রশ্ন করলেন উত্তর ও দিলাম । কিন্তু আপনি আমাকে এ ব্যাপারে কেন জানতে চাননি ?
স্বামীঃ কী প্রশ্ন তোমার ?
স্ত্রীঃ আমার জীবনে কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল কিনা বা কোন ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকতাম কিনা কিংবা আমার জীবনে কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল কিনা ?
'
স্বামী স্ত্রীর প্রশ্ন শুনে হেসে দিলেন।
স্ত্রীঃ আপনি হাসছেন!?
স্বামীঃ হুম !
স্ত্রীঃ কেন ?
স্বামী এবার বুক ফুলিয়ে উত্তর দিলেন। আমি তোমাকে এমন অযথা অনর্থক প্রশ্ন করতে যাব কেন? আমিতো মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের সেই আয়াতে বিশ্বাসী যেই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
... ... ...
ﺍﻟﺨﺒﻴﺜﺎﺕ ﻟﻠﺨﺒﻴﺜﻴﻦ ﻭﺍﻟﺨﺒﻴﺜﻮﻥ ﻟﻠﺨﺒﻴﺜﺎﺕ .
ﻭﺍﻟﻄﻲّﺑﺎﺕ
ﻟﻠﻄﻴّﺒﻴﻦ ﻭﺍﻟﻄﻴّﺒﻮﻥ ﻟﻠﻄﻴّﺒﺎﺕ .
... ... ...
অর্থঃ প্রত্যেক দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং প্রত্যেক দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীদের জন্য। প্রত্যেক সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং প্রত্যেক সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য।
(সূরা নূর আয়াত ২৬ )
'
এবার স্ত্রী চুপ হয়ে গেলেন এবং উভয়ের রহস্য উদঘাটন হয়ে গেলো। এখন চিন্তা করি! আমি কী তাদের মত সচ্চরিত্রবান হতে পেরেছি? যদি হয়ে থাকি তাহলে তো ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻠﻪ , না হয়ে থাকলে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ এখন থেকেই চেষ্টা করবো। আল্লাহ পাক আমাদের তৌফিক দান করুন।

মহিলা ও ‍পুরুষের সালাত কি কোন পার্থক্য আছে?


মহিলা ও ‍পুরুষের সালাত কি কোন পার্থক্য আছে?
মহিলা ও ‍পুরুষের সালাত কি কোন পার্থক্য আছে?
রাসূল (ছাঃ) এর সালাত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছিল একথা ভাববার কোন অবকাশ নেই। পুরুষ ও মহিলা সালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পর্থক্য নেই। সতর বা পর্দার যে বিষয়টি মেয়েদের সালাতের বিষয়ে বিভিন্ন নামায শিক্ষা বইতে এসেছে তা মেয়েদের পূর্ণাঙ্গ পর্দার মধ্যে সালাত আদায়ের নির্দেশই যথেষ্ট। এতে নতুন করে যুক্তি পেশ করার প্রয়োজন নেই। আমাদের মধ্যে যঈফ ও জাল হাদীসের অনুকরণে সালাত চালু থাকার কারণে এবং বিভিন্ন মাযহাব পন্থীর গোড়ামীর কারণে বিভিন্ন নিয়ম চালু হয়ে গিয়েছে। এজন্য আমাদের সমাজের মহিলারা কিংবা পুরুষেরা মনে করে, তাদের সালাত আলাদা। কিন্তু বাস্তবে পুরুষ মহিলাদের সালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নেই এবং এ ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীসও বর্ণিত হয়নি
সালাত আদায় করার জন্য নারী পুরুষ কারোর জন্য স্বতন্ত্র নিয়ম করা হয়নি। জিবরাঈল (আঃ) মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ক্রমে দুই দফায় রাসূল (সাঃ)-কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নিয়ম পদ্ধতি ইমামতি করে বাস্তবভাবে শিখিয়ে গেছেন। এ সময় জিবরাঈল (আঃ) নারীদের সালাতের জন্য আলাদা কোন নিয়ম পদ্ধতির বর্ণনা দেন নাই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষের জন্য এ নমুনা শিখানো হয়েছে। আল্লাহর নিয়ম পদ্ধতিতে কখনও কোন পার্থক্য দেখা যাবে না। এ মর্মে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর আপনি আল্লাহর নিয়ম-রীতিতে কখনও কোন পরিবর্তন পাবেন না।” [সূরা-আহযাব : আয়াত-৬২]
(নারী-পুরুষ উভয় জাতির) উম্মতকে সম্বোধন করে রাসূল(ছাঃ) বলেছেন,“তোমরা সেইরুপ সালাত আদায় কর, যেইরুপ আমাকে করতে দেখেছ”। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮৯)। উল্লেখ্য হাদীসটি উম্মে দারদা(রাঃ)থেকে বর্ণিত আছে।তিনি একজন ফকীহাও ছিলেন।
আলাদাভাবে বলা হয়নি। সুতরাং যে আদেশ শরীয়ত পুরুষদেরকে করেছে, সে আদেশ নারীদেরকেও করেছে। এবং যে সাধারণ আদেশ মহিলাদের তাও পুরুষদের ক্ষেত্রে পালনীয়- যদি বিশেষ হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার দলীল না থাকে। যেমন, “যারা সতী মহিলাদের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর চারজন স্বাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদের জন্য শাস্তি হল ৮০ কোড়া- ---। (কুরআন-২৪/৪)।
পরন্ত যদি কেউ কোন সৎ পুরুষকে অনুরুপ অপবাদ দেয়, তবে তার জন্য একই শাস্তি প্রযোজ্য। সুতরাং মহিলারাও তাদের সালাতে পুরুষদের মতই হাত তুলবে। পিঠ লম্বা করে রুকু করবে, তাশাহুদেও সেইরুপ বসবে, যেরুপ পুরুষরা বসে।

Wednesday, January 24, 2018


আচ্ছা বল্টু তুমি মাজহাব কেন মান?
বল্টু- মাজহাব মানা ফরয।
-কে ফরয করল?
বল্টু- এত কিছু জানিনা, আলেমরা বলছে ফরয।
তুমি কোন মাজহাব মানো?
বল্টু- হানাফি মাজহাব
চার মাজহাব তো চার ফরয, একটা ফরয মানলা বাকি ৩ টা কই গেল?
বল্টু- অ্যাঁ ! না মানে... আলেমরা বলছেন বাকি ৩ টি বিশ্বাস করতে হবে.
-আসরের নামাজ ৪ রাকাত ফরজ তাহলে ১ রাকাত নামাজ পড় আর বাকি ৩ রাকাত বিশ্বাস করো, তাহলেই চলবে কি বলো?
বল্টু- অ্যাঁ !
-আচ্ছা তুমি সরাসরি কোরআন হাদিস মানতে পারো না?
বল্টু- দেখেন ভাই, কোরআন হাদিস সরাসরি মানা যায়না, সাধারণ মানুষ যেমন রিকশাচালক, কৃষক কোরআন হাদিস বুঝবে না। তাই তারা যে কোন এক ইমামের তাকলিদ (অন্ধ অনুসরণ) করবে।
-সাধারণ মানুষ কোরআন হাদিস বুঝে না আর আরবি কিতাবে লেখা ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর ফতোয়াটা খুব বুঝে তাই না?
বল্টুঃ অ্যাঁ ! না মানে... না বুঝলে আলেমদের জিজ্ঞাসা করবে...
-আমিও তো তাই বলি কোরআন হাদিস না বুঝলে আলেমদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, কোরআন হাদিস থেকে ফয়সালা খুঁজবে, না পেলে সাহাবা কেরামের আমল দেখবে, তাও না পেলে সম্মানিত ইমামগণ (রহঃ) কি ফতোয়া দিয়েছেন সেটা দেখা যেতে পারে। কোরআন হাদিস বাদ দিয়ে আগে ফতোয়া খুঁজবে কেন?
আর কতকাল নিজেকে বোকা সাজিয়ে রাখবে? চারদিকে কোরআন আর হাদিস মানার জোয়ার এসেছে, আবারও মানুষ তার মূলে ফিরে যাচ্ছে, শামিল হওন কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক জীবন গড়ার পথে।
* মাজহাব মানে তরীকা, পথ, মত।
* ইসলাম জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র তরীকা, পথ, মত।
*******
মনে রাখা ভালো প্রসিদ্ধ ৪ ইমামের কেউ কোন মাজহাব চালু করে যান নাই, ৪০০ বছর পর এর আবিস্কার ... দেহবন্দ গুরু শাহ ওয়ালীঊল্লাহ দেহলভী(রহ) তার হুজ্জাতুল বালিগায় বলে গেছেন।
আল্লাহ বলেছেন, সাহাবীদের মতো ঈমান আনলে আমরা হেদায়েত পাবো।(বাকারা ১৩৭)
সাহাবীগণ (রা) কোনো দলে ভাগ হননি এবং নিজেদের উপর মাজহাব ওয়াজিব/ফরজ করেননি। তারা একনিষ্ঠভাবে রসূল (স) এর অনুসরণ করতেন।।
এরপরেও না বুঝলে কিছু করার নেই

Tuesday, January 23, 2018

তওবা কিভাবে করতে হবে, তওবার সঠিক নিয়ম।




তওবা কিভাবে করতে হবে, তওবার সঠিক নিয়ম। কারো তওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বোঝার উপায়
===========================
১. পাপ কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবো – এ রকম হলে তওবা হবে না।
২. অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে তাঁর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩. অন্তরে ঐকাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
৪. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহ খাতার জন্য “ইস্তিগফার” করতে হবে (মাফ চাইতে হবে) + “তওবা” করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)।
৫. কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক্ক ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেইভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, তওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না করলে তিনি মাফ করবেন না।
৬. অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম – অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তওবা কবুল করবেন।
৭. তওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
৮. যে পাপ কাজ থেকে তওবা করা হলো (সমস্ত পাপ কাজ থেকেই তওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে সাথে সাথে আবার তওবা করে সেটা থেকে ফিরে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সাথে সাথেই তওবা করতে হবে, মৃত্যু পর্যন্ত।
৯. কারো তওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বুঝবেন ?
অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেনঃ কারো যদি তওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয় অর্থাত পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে – তার তওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। কিন্তু কারো যদি এমন না হয় অর্থাত, তওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার তওবাতে ত্রুটি আছে। তার উচিত হতাশনা হয়ে – বার বার আন্তরিকতার সাথে খালেস নিয়তে তওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আন্তরিক তওবা করার তওফিক দান করুন।

 ১- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্‌র শপথ, নিশ্চয় আমি দৈনিক সত্তর -এর অধিকবার আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি।” ( বুখারী, ফাতহুল বারীসহ, ১১/১০১, নং ৬৩০৭।)
২- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা কর, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্‌র কাছে দৈনিক একশত বার তাওবা করি।”( মুসলিম, ৪/২০৭৬, নং ২৭০২।)
তওবার দোয়া-
তওবার সুন্নাতি দোয়া বা কি বলে তওবা করবেন, ১-
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيهِ
(আস্তাগফিরুল্লা-হা ‘ওয়া আতূবু ইলাইহি)।
‘আমি মহামহিম আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা চাই, আর আমি তাঁরই নিকট তওবা করছি।’( বুখারী, ফাতহুল বারীসহ, ১১/১০১, নং ৬৩০৭।)
২- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি বলবে,
«أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ القَيّوُمُ وَأَتُوبُ إِلَيهِ».
(আস্তাগফিরুল্লা-হাল ‘আযীমল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কায়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি)।
‘আমি মহামহিম আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি চিরস্থায়ী, সর্বসত্তার ধারক। আর আমি তাঁরই নিকট তওবা করছি।’ আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।” ( সহীহুত তিরমিযী ৩/১৮২)

৩- সাইয়িদুল ইস্তিগফার (সাইয়েদুল ইস্তেগফার) বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।
اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রববী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।
বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।

Saturday, January 20, 2018

ফরয ছালাত বাদে সম্মিলিত দো‘আ



গ্রন্থঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)
অধ্যায়ঃ ছালাতের বিবরণ (صفة الصلاة)


ফরয ছালাত বাদে সম্মিলিত দো‘আ

ফরয ছালাত বাদে সম্মিলিত দো‘আ (الدعاء الجماعي بعد الصلاة المكةوبة) :

ফরয ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর পরে ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে ইমামের সরবে দো‘আ পাঠ ও মুক্তাদীদের সশব্দে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলার প্রচলিত প্রথাটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম হ’তে এর পক্ষে ছহীহ বা যঈফ সনদে কোন দলীল নেই। বলা আবশ্যক যে, আজও মক্কা-মদ্বীনার দুই হারাম-এর মসজিদে উক্ত প্রথার কোন অস্তিত্ব নেই।

প্রচলিত সম্মিলিত দো‘আর ক্ষতিকর দিক সমূহ :
(১) এটি সুন্নাত বিরোধী আমল। অতএব তা যত মিষ্ট ও সুন্দর মনে হৌক না কেন সূরায়ে কাহ্ফ-এর ১০৩-৪ নং আয়াতের মর্ম অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
(২) এর ফলে মুছল্লী স্বীয় ছালাতের চাইতে ছালাতের বাইরের বিষয় অর্থাৎ প্রচলিত ‘মুনাজাত’কেই বেশী গুরুত্ব দেয়। আর এজন্যেই বর্তমানে মানুষ ফরয ছালাতের চাইতে মুনাজাতকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ‘আখেরী মুনাজাত’ নামক বিদ‘আতী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেশী আগ্রহ বোধ করছে ও দলে দলে সেখানে ভিড় জমাচ্ছে।
(৩) এর মন্দ পরিণতিতে একজন মুছল্লী সারা জীবন ছালাত আদায় করেও কোন কিছুর অর্থ শিখে না। বরং ছালাত শেষে ইমামের মুনাজাতের মুখাপেক্ষী থাকে।
(৪) ইমাম আরবী মুনাজাতে কী বললেন সে কিছুই বুঝতে পারে না। ওদিকে নিজেও কিছু বলতে পারে না। এর পূর্বে ছালাতের মধ্যে সে যে দো‘আগুলো পড়েছে, অর্থ না জানার কারণে সেখানেও সে অন্তর ঢেলে দিতে পারেনি। ফলে জীবনভর ঐ মুছল্লীর অবস্থা থাকে ‘না ঘরকা না ঘাটকা’।
(৫) মুছল্লীর মনের কথা ইমাম ছাহেবের অজানা থাকার ফলে মুছল্লীর কেবল ‘আমীন’ বলাই সার হয়। (৬) ইমাম ছাহেবের দীর্ঘক্ষণ ধরে আরবী-উর্দূ-বাংলায় বা অন্য ভাষায় করুণ সুরের মুনাজাতের মাধ্যমে শ্রোতা ও মুছল্লীদের মন জয় করা অন্যতম উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ফলে ‘রিয়া’ ও ‘শ্রুতি’-র কবীরা গোনাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ‘রিয়া’-কে হাদীছে الشرك الأصغر বা ‘ছোট শিরক’ বলা হয়েছে। [204] যার ফলে ইমাম ছাহেবের সমস্ত নেকী বরবাদ হয়ে যাওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা সৃষ্টি হ’তে পারে।

ছালাতে হাত তুলে সম্মিলিত দো‘আ :

(১) ‘ইস্তিসক্বা’ অর্থাৎ বৃষ্টি প্রার্থনার ছালাতে ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু’হাত তুলে দো‘আ করবে। এতদ্ব্যতীত
(২) ‘কুনূতে নাযেলাহ’ ও ‘কুনূতে বিতরে’ও করবে।

একাকী দু’হাত তুলে দো‘আ :

ছালাতের বাইরে যে কোন সময়ে বান্দা তার প্রভুর নিকটে যে কোন ভাষায় দো‘আ করবে। তবে হাদীছের দো‘আই উত্তম। বান্দা হাত তুলে একাকী নিরিবিলি কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তার হাত খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন।[205] খোলা দু’হস্ততালু একত্রিত করে চেহারা বরাবর সামনে রেখে দো‘আ করবে।[206] দো‘আ শেষে মুখ মাসাহ করার হাদীছ যঈফ। [207] বরং উঠানো অবস্থায় দো‘আ শেষে হাত ছেড়ে দিবে।

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতের জন্য আল্লাহর নিকট হাত উঠিয়ে একাকী কেঁদে কেঁদে দো‘আ করেছেন।[208]
(২) বদরের যুদ্ধের দিন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকটে একাকী হাত তুলে কাতর কণ্ঠে দো‘আ করেছিলেন। [209]
(৩) বনু জাযীমা গোত্রের কিছু লোক ভুলক্রমে নিহত হওয়ায় মর্মাহত হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একাকী দু’বার হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চেয়েছিলেন।[210]
(৪) আওত্বাস যুদ্ধে আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর নিহত ভাতিজা দলনেতা আবু ‘আমের আশ‘আরী (রাঃ)-এর জন্য ওযূ করে দু’হাত তুলে একাকী দো‘আ করেছিলেন।[211]
(৫) তিনি দাওস কওমের হেদায়াতের জন্য ক্বিবলামুখী হয়ে একাকী দু’হাত তুলে দো‘আ করেছেন।[212]

এতদ্ব্যতীত
(৬) হজ্জ ও ওমরাহ কালে সাঈ করার সময় ‘ছাফা’ পাহাড়ে উঠে কা‘বার দিকে মুখ ফিরিয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ করা।[213]
(৭) আরাফার ময়দানে একাকী দু’হাত তুলে দো‘আ করা।[214]
(৮) ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর একটু দূরে সরে গিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ করা। [215]
(৯) মুসাফির অবস্থায় হাত তুলে দো‘আ করা।[216]

তাছাড়া জুম‘আ ও ঈদায়েনের খুৎবায় বা অন্যান্য সভা ও সম্মেলনে একজন দো‘আ করলে অন্যেরা (দু’হাত তোলা ছাড়াই) কেবল ‘আমীন’ বলবেন। [217] এমনকি একজন দো‘আ করলে অন্যজন সেই সাথে ‘আমীন’ বলতে পারেন।

উল্লেখ্য যে, দো‘আর জন্য সর্বদা ওযূ করা, ক্বিবলামুখী হওয়া এবং দু’হাত তোলা শর্ত নয়। বরং বান্দা যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করবে। যেমন খানাপিনা, পেশাব-পায়খানা, বাড়ীতে ও সফরে সর্বদা বিভিন্ন দো‘আ করা হয়ে থাকে। আর আল্লাহ যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় তাঁকে আহবান করার জন্য বান্দার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।[218]

কুরআনী দো‘আ :

রুকূ ও সিজদাতে কুরআনী দো‘আ পড়া নিষেধ আছে।[219] তবে মর্ম ঠিক রেখে সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনে পড়া যাবে। যেমন রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া ... (বাক্বারাহ ২/২০১)-এর স্থলে আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা অথবা আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া ...বলা।[220] অবশ্য শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পরে সালাম ফিরানোর পূর্বে কুরআনী দো‘আ সহ ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সকল প্রকারের দো‘আ পাঠ করা যাবে।

[204] . আহমাদ, মিশকাত হা/৫৩৩৪ ‘হৃদয় গলানো’ অধ্যায়-২৬, ‘লোক দেখানো ও শুনানো’ অনুচ্ছেদ-৫। [205] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২২৪৪, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯। [206] . আবুদাঊদ হা/১৪৮৬-৮৭, ৮৯; ঐ, মিশকাত হা/২২৫৬। [207] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২২৪৩, ৪৫, ২২৫৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯; আলবানী বলেন, দো‘আর পরে দু’হাত মুখে মোছা সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। মিশকাত, হাশিয়া ২/৬৯৬ পৃঃ; ইরওয়া হা/৪৩৩-৩৪, ২/১৭৮-৮২ পৃঃ। [208] . মুসলিম হা/৪৯৯, ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘উম্মতের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দো‘আ করা’ অনুচ্ছেদ-৮৭। [209] . মুসলিম হা/৪৫৮৮ ‘জিহাদ’ অধ্যায়-৩২, অনুচ্ছেদ-১৮, ‘বদরের যুদ্ধে ফেরেশতাগণের দ্বারা সাহায্য প্রদান’। [210] . বুখারী, মিশকাত হা/৩৯৭৬ ‘জিহাদ’ অধ্যায়-১৯, অনুচ্ছেদ-৫; বুখারী হা/৪৩৩৯ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৮০, ‘দো‘আয় হাত উঁচু করা’ অনুচ্ছেদ-২৩। [211] . এটি ছিল ৮ম হিজরীতে সংঘটিত ‘হোনায়েন’ যুদ্ধের পরপরই। বুখারী হা/৪৩২৩, ‘যুদ্ধ-বিগ্রহ সমূহ’ অধ্যায়-৬৪, ‘আওত্বাস যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ-৫৬। [212] . বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬১১; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৯৯৬। [213] . আবুদাঊদ হা/১৮৭২; মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫। [214] . নাসাঈ হা/৩০১১। [215] . বুখারী হা/১৭৫১-৫৩, ‘হজ্জ’ অধ্যায়-২৫, ‘জামরায় কংকর নিক্ষেপ ও হাত উঁচু করে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৩৯-৪২। [216] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০। [217] . ছহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৬১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৮/২৩০-৩১; ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম পৃঃ ৩৯২। [218] . বাক্বারাহ ২/১৮৬, মুমিন/গাফের ৪০/৬০; বুখারী ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৮০, অনুচ্ছেদ-২৪, ২৫ ও অন্যান্য অনুচ্ছেদ সমূহ। [219] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮৭৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩ ; নায়ল ৩/১০৯ পৃঃ। [220] . বুখারী হা/৪৫২২; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৮৭, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সারগর্ভ দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৯। 

Wednesday, January 10, 2018

সকাল-সন্ধায় পঠিতব্য দুয়া ও যিকির সমূহ



সকাল-সন্ধায় পঠিতব্য দুয়া ও যিকির সমূহ (উচ্চারণ ও বাংলা অনুবাদ সহ)

১) আয়াতুল কুরসী [সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত]। (এক বার)

২) নিম্নোক্ত সূরা সমূহ পড়া:

কুল্ হুওয়াল্লাহু আহাদ। (৩ বার)ক্বুল আউ-যু বিরাব্বিল ফালাক্ব। (৩বার)ক্বুল আউযু বিরাব্বিন্নাস। (৩বার)

৩) لا إله إلا الله وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ  উচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু  ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।

অর্থঃ “আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং যাবতীয় প্রশংসার অধিকারীও তিনি, তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।” (১০ বার বা ১০০ বার)

৪)  سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ  উচ্চারণঃ সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহি।

অর্থঃ প্রশংসার সহকারে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। (১০০ বার)

৫) بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِيْ الأَرْضِ وَلاَ فِيْ السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمِ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু মাআসমিহী শাইউন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্ সামায়ি ওয়াহুওয়াস্ সামী-উল আলী-ম।

অর্থঃ শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে আসমান এবং যমীনের কোন বস্তুই কোন ক্ষতি করতে পারবে না, তিনি মহাশ্রোতা মহাজ্ঞানী। (৩ বার)

৬) ( أعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ ما خَلَقَ )

উচ্চারণঃ আউ-যু বিকালিমা-তিল্লাহিত্ তা-ম্মা-তি মিন শররি মা- খালাক্ব।

অর্থঃ আশ্রয় প্রার্থনা করছি আল্লাহ্র পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে -তাঁর সৃষ্টির সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে। (৩ বার)

৭) رَضِيْتُ بِاللهِ ربًّا وبالإسلاَمِ دِيْناً وبِمُحمدٍ نبيّاً ورسولاً

উচ্চারণঃ রাযিতু বিল্লা-হি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলা-মি দী-না, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যাও ওয়া রাসুলা।

অর্থঃ আমি সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করেছি আল্লাহকে প্রভূ হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) নবী ও রাসূল হিসেবে।  (৩ বার)

৮) (حَسْبِيَ اللهُ لا إله إلا هو عَليه تَوَكّلْتُ وهو رَبُّ الْعَرشِ العَظِيْمِ   উচ্চারণঃ হাসবিয়্যাল্লা-হু লা-ইলাহা ইল্লা-হুওয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়াহুওয়া রাব্বুল আরশিল আযীম।

অর্থঃ আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই, তাঁর প্রতি ভরসা করেছি, তিনি মহান আরশের অধিপতি।  (৭ বার)

৯)  (أصْبَحْناَ على فِطْرَةِ الإسلامِ وَ على كَلِمَةِ الإِخْلاصِ وعلى دِيْنِ نَبِيِّناَ محمد وعلى مِلَّةِ أبِيْناَ إبراهيمَ حَنِيْفاَ مُسْلِماً وماَ كاَنَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ)

উচ্চারণঃ আসবাহনা আলা ফিৎরাতিল ইসলা-মি, ওয়া আলা কালিমাতিল ইখলা-সি, ওয়া আলা দী-নে নাবিয়্যেনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা মিল্লাতি আবী-না ইবরাহীমা হানী-ফাম্ মুসলিমা, ওয়ামা কা-না মিনাল মুশরিকীন।

 অর্থঃ সকাল করেছি ইসলামের ফিৎরাতের উপর, একনিষ্ঠ বাণীর উপর, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর  দ্বীনের উপর এবং আমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ)এর মিল্লাতের উপর তিনি একনিষ্ঠ মুসলিম এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।

সন্ধার সময় বলবেঃ আমসায়না আলা—শেষ পর্যন্ত।

১০)    (أصْبَحْناَ واصْبَحَ المُلْكُ للهِ والحمدُ للهِ لا إله إلا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ له المُلْكُ وله الحمد وهو على كل شيء قدير، رَبِّ أسْألُكَ خَيْرَ ما في هذا الْيَوْمِ وخَيْرَ ماَ بَعْدَهُ، وأعوذُ بِكَ منْ شَرِّ ما فِيْ هذا اليومِ وَشَرِّ ما بعده ، ربِّ أعوذُ بِكَ من الكَسَلِ وسُوْءِ الكِبَرِ، ربِّ أعوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِيْ النَّارِ ، وعَذَابٍ في القَبْرِ .)

উচ্চারণঃ আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লা-হি। ওয়াল হামদু লিল্লা-হি।

লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু  ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কাদীর।

রাব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফি হাযাল্ ইয়াওমি ওয়া খাইরা মা বা’দাহু।

ওয়া আউযু বিকা মিন শাররী মা ফি হাযাল্ ইয়াওমি ওয়া মিন শাররি মা বা’দাহু।

রাব্বি আউযু বিকা মিনাল্ কাসালি ওয়া সূ-ইল কিবারি।

রাব্বি আউযু বিকা মিন আযাবিন্ ফিন্না-রি ওয়া আযাবিন্ ফিল ক্বাবরি।

অর্থঃ আমরা সকাল করেছি এমন অবস্থায় যে, রাজত্ব এককভাবে আল্লাহর জন্য, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব একমাত্র তাঁরই অধিকারে এবং সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য, তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে প্রভূ আজকের দিন এবং পরবর্তী দিনের মঙ্গল তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার কাছে আজকের দিন এবং পরবর্তী দিনের অমঙ্গল থেকে। হে প্রভূ আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার কাছে অলসতা থেকে এবং অধিক বয়সের অনিষ্টতা থেকে। হে প্রভূ আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার কাছে দোযখের শাস্তি এবং ক্ববরের আযাব থকে।

সন্ধার সময় বলবেঃ আমসায়না ওয়া আমসাল মুলকু….রাব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফি হাযিহিল্ লায়লাতি ….শেষ পর্যন্ত।

১১)

( (اللهُمَّ بِكَ أصْبَحْناَ وبِكَ أمسَيْناَ وبِكَ نَحْياَ وَبِكَ نَمُوْتُ وَإلَيْكَ النُّشُوْرُ)

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিকা আস্বাহ্না ওয়া বিকা আমসায়না ওয়া বিকা নাহ্ইয়া ওয়া বিকা নামূতু ওয়া ইলাইকান্ নুশূর।

অর্থঃ হে আল্লাহ্  তোমার অনুগ্রহে সকাল করেছি এবং তোমার অনুগ্রহে সন্ধা করেছি, তোমার করুণায় জীবন লাভ করি এবং তোমার ইচ্ছায় আমরা মৃত্যু বরণ করব, আর কিয়ামত দিবসে তোমার কাছেই পূণরুত্থিত হতে হবে।

সন্ধার সময় বলবে: আল্লাহুম্মা বিকা আমসায়না ওয়া বিকা আমসাইনা ওয়া বিকা নাহ্ইয়া ওয়া বিকা নামূতু ওয়া ইলাইকাল্  মাসীর।

১২)     (اللهم إنِّيْ أصْبَحْتُ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلاَئِكَتَكَ وَجَمِيْعَ خَلْقِكَ بِأنَّكَ أنْتَ اللهُ لا إله إلا أنتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ وَأنَّ محمداً عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আসবাহ্তু, উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা আরশিকা, ওয়া মালা-ইকাতাকা ওয়া জামীআ’ খালক্বিকা, বিআন্নাকা আন্তাল্লা-হু লাইলা-হা ইল্লা আন্তা অহ্দাকা লা- শারীকা লাকা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান্ আবদুকা ওয়া রাসূলুকা।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্ তোমার নামে আমি সকাল করেছি। তোমাকে সাক্ষী রাখছি , তোমার আরশ বহন কারী ফেরেস্তা, সকল ফেরেস্তাকুল এবং তোমার সমস্ত সৃষ্টি জগতকে সাক্ষী রেখে বলছি -নিশ্চয় তুমি আল্লাহ্, তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই, তুমি এক, তোমার কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার বান্দা ও রাসূল।  (এক বা দুই বা তিন বা চার বার বলবে।)

আর সন্ধার সময় বলবেঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আমসায়তু …(বাকী অংশ পুরোটা)।

১৩)

 (اللهمَّ ماّ أصْبَحَ بِيْ مِنْ نِعْمَةٍ أوْ بِأحَدٍ مِّنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা মা আসবাহা বী মিন্ নি’মাতিন্ আও বি আহাদিম্ মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহ্দাকা লা-শারীকা লাকা ফালাকাল্ হামদু ওয়া লাকাশ্ শুকরু।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমার সাথে যে নে’য়ামত সকালে উপনিত হয়েছে বা তোমার সৃষ্টি জগতের কারো সাথে, তা সবই একক ভাবে তোমার পক্ষ থেকে তোমার কোন শরীক নেই। সুতরাং কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা মাত্রই তোমার জন্য।

সন্ধার সময় বলবেঃ আল্লাহুম্মা মা আমসা বী… (বাকী অংশ পুরাটা)।

১৪)     (ياَ حَيُّ ياَ قَيُّومُ بِكَ أسْتَغِيْثُ فَأصْلِحْ لِيْ شَأنِيْ وَلاَ تَكِلْنِيْ إلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ )

উচ্চারণঃ ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিকা আসতাগীছ, ফা আসলিহ লী শা’নী ওয়ালা তাকেলনী ইলা নাফসী ত্বরফাতা আ’ইনিন্।

অর্থঃ হে চিরঞ্জিব, চিরস্থায়ী, তোমার কাছে আমি সাহায্য প্রর্থনা করছি, সুতরাং আমার সকল অবস্থা সংশোধন করে দাও এবং এক পলকের জন্য হলেও আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিও না।

১৫(     (اللهمَّ عاَفِنِيْ فِيْ بَدَنِيْ، اللهمَّ عاَفِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ، اللهمَّ عاَفِنِيْ فِيْ بَصَرِيْ لا إله إلا أنْتَ )

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আ’ফেনী ফী বাদানী, আল্লাহুম্মা আ’ফেনী ফী সাম্য়ী, আল্লাহুম্মা আ’ফেনী ফী বাছারী, লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্! তুমি আমার দেহের নিরাপত্তা দান কর, শ্রবন শক্তি ও দৃষ্টি শক্তিকে নিরাপদ রাখ। তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন ইলাহ্ নেই। (৩ বার(

১৬( (اللهمَّ إنِّيْ أعُوذُ بِكَ مِنَ الكُفْرِ والْفَقْرِ وأعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لا إله إلا أنتَ) উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল কুফরী ওয়াল ফাক্বরি ওয়া আঊযুবিকা মিন আযাবিল কবরী, লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা।

অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কুফুরী ও দারিদ্র্য থেকে এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি ক্ববরের আযাব থেকে। তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন ইলাহ্ নেই। (৩বার)

১৭(

 (اللهمَّ إنِّيْ أسأَلُكَ العاَفِيةَ فِيْ الدُّنْياَ والآخِرَةِ، اللهمَّ إنِّيْ أسأَلُكَ العَفْوَ والعاَفِيَةَ فِيْ دِيْنِيْ ودُنْيَايَ وَأهْلِيْ وماَلِيْ اللهمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِيْ وآمِنْ رَوْعاَتِيْ ، اللهمَّ احْفَظْنِيْ مِنْ بَيْنَ يَدَيَّ وَمِنْ خَلْفِيْ ، وَعَنْ يَمِيْنِيْ ، وعَنْ شِماَلِيْ ، وَمِنْ فَوْقِيْ ، وَأعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أنْ اُغْتاَلَ مِنْ تَحْتِيْ )

উচ্চারণঃ

আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল্ আ’ফিয়াতা ফিদ্ দুন্ইয়া ওয়াল আ-খিরাহ্,

 আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল্  আফ্ওয়া ওয়াল্ আ’ফিয়াতা ফী দীনী ওয়া দুন্ইয়া ইয়া ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী।

 আল্লাহুম্মাস্ তুর আ’ওরা-তী ওয়া  আ-মেন রাওআ’তী।

আল্লাহুম্মাহ্ ফাযনী মিম্ বায়নে ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফী, ওয়া আ’ন ইয়ামীনী, ওয়া আ’ন শিমালী, ওয়া মিন ফাওক্বী।

ওয়া আঊযু বিআ’যামাতিকা আন উগতালা মিন তাহ্তী।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা কামনা করছি, হে আল্লাহ্ আমি প্রার্থনা করছি তোমার কাছে ক্ষমার এবং আমার দ্বীন , দুনিয়া, পরিবার-পরিজন এবং সম্পদের নিরাপত্তা। হে আল্লাহ্ আমার গোপন বিষয় সমূহ (দোষ-ত্রুটি) ঢেকে রাখ এবং আমাকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ রাখ। হে আল্লাহ্ তুমি আমাকে হেফাযত কর আমার সম্মুখ থেকে, পিছন থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে এবং উপর দিক থেকে। আর তোমার মহত্বের উসিলা দিয়ে তোমার কাছে আশ্রয়  প্রার্থনা করছি নিচের দিক থেকে মাটি ধ্বসে আমার আকষ্মিক মৃত্যু থেকে।

১৮)

(اللهم فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأرْضِ، عاَلِمَ الغَيْبِ وَالشَّهاَدَةِ، ربَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ، اَشْهَدُ أنْ لاإله إلا أنْتَ، أعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ، وَشَرِّ الشَّيْطاَنِ وَشِرْكِهِ، وأنْ أقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِيْ سُوْءً، أوْ أجُرُّهُ إلَى مُسْلِمٍ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ফা-তিরাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরযি,

আ’লিমাল গাইবি ওয়াশ্ শাহাদাহ্,

 রাব্বা কুল্লি শাইয়িন্ ওয়া মালিকাহু।

আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।

আঊযু বিকা মিন শাররি নাফসী, ওয়া শাররিশ শায়তানে ওয়া শিরকিহি।

 ওয়া আন আক্বতারিফা আ’লা নাফসী সূআন্,

আও আজুররাহু ইলা মুসলিম।

অর্থঃ হে আল্লাহ্ তুমি আসমান-যমীনের সৃষ্টি কর্তা, তুমি গোপন-প্রকাশ্য সবকিছুই জান। তুমি সকল বস্তুর প্রভূ  এবং সব কিছুর মালিক, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই। আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে এবং শয়তান ও তার শিরকের অনিষ্ট থেকে এবং আশ্রয় কামনা করছি নিজের উপর অন্যায় করা থেকে বা সে অন্যায় কোন মুসলিমের উপর চাপিয়ে দেয়া থেকে।

১৯(     (اللهمَّ إنَّيْ أسْأَلُكَ عِلْماً ناَفِعاً، وَرِزْقاً طَيِّباً، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً)

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ই’লমান্ নাফিআ’ন্,

 ওয়া রিযক্বান্ ত্বইয়িবান্,

 ওয়া আ’মালান্ মুতাক্বাব্বালা।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি উপকারী বিদ্যা, পবিত্র জীবিকা এবং মাক্ববূল (গ্রহণীয়) আমলের।

২০)    (اللهمَّ أنْتَ رَبِّيْ لا إله إلا أنتَ، خَلَقْتَنِيْ وَأناَ عَبْدُكَ، وأناَ على عَهْدِكَ، وَوَعْدِكَ ماَ اسْتَطَعْتُ، أعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مِلْئَ صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوْءُ بِذَنْبِيْ، فاَغْفِرْ لِيْ فَإنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إلاَّ أنْتَ)

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বী লা-ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, খালাক্বতানী

ওয়া আনা আ’বদুকা, ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা, ওয়া ওয়া’দিকা মাসতত্ব’তু,

 আঊযুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু,

আবূউ লাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা,

 ওয়া আবূউ বিযাম্বী,

 ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্তা।

অর্থঃ হে আল্লাহ্ তুমি আমার প্রভু প্রতিপালক, তুমি ছাড়া ইবাদত যোগ্য কোন ইলাহ্ নেই, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো এবং আমি তোমার বান্দা। আমি সাধ্যানুযায়ী তোমার সাথে কৃত ওয়াদা-অঙ্গীকার রক্ষা করছি। আমার কৃত কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় কামনা করছি, আমার প্রতি তোমার নেয়া’মত স্বীকার করছি এবং তোমার দরবারে আমার পাপকর্মেরও স্বীকারোক্তি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমায় ক্ষমা কর, কেননা তুমি ছাড়া পাপরাশী কেহই ক্ষমা করতে পারে না।

২১)( (اللهمَّ صَلِّ عَلى محمدٍ وَعَلَى آلِ مُحمدٍ كَماَ صَلَّيْتَ على إبْراَهِيْمَ وَ على آلِ إبراهيمَ إنَّكَ حَميدٌ مجيدٌ)

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আ’লা মুহাম্মাদিঁওয়া আ’লা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সল্লায়তা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।

 অর্থঃ হে আল্লাহ্  তুমি রহমত নাযিল কর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবার বর্গের উপর, যেমন তুমি রহমত নাযিল করেছো ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবার বর্গের উপর, নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। (দশ বার)

Sunday, January 7, 2018

যাদু সম্পর্কে প্রচারিত এই হাদিসটা জয়ীফ


যাদু সম্পর্কে প্রচারিত এই হাদিসটা জয়ীফ
==============================
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না- সর্বদা মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং জাদু-টোনায় আস্থাভাজনকারী। (আহমাদ)[1]

[1] য‘ঈফ : আহমাদ ১৯৭৯৮, য‘ঈফ আল জামি‘ ২৫৯৮, য‘ঈফ আত্ তারগীব ২১৫৭। কারণ এর সনদে আবূ হুরায়য ‘আবদুল্লাহ বিন আল হুসায়ন একজন দুর্বল রাবী। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
========================
যাদু শিরক এটা সঠিক তবে উপরের দেওয়া হাদিসটা সহিহ নয়, সহিহ জেনেই প্রচার করা হয়েছিল গ্রপে কিন্ত সত্য এই যে হাদিসটা সহিহ নয়, আল্লাহ তা'লা আমাদের ক্ষমা করুন আর নির্ভুল প্রচারের তাওফিক দিন আর ভুল হয়ে গেলে সেটা শুধু মেনে নেওয়া নয় বরং সেটাও সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার তাওফিক দিন, আমীন আর যাদু সম্পর্কে এই সহিহ হাদিস গুলোই প্রচারের জন্য যথেষ্ট আলহামদুলিল্লাহ
=============================
যাদু-
যাদু শিক্ষা দেয়া বা শিক্ষা নেয়া শুধু কবীরা গুনাহ্ই নয়। বরং তা শির্ক এবং কুফর ও বটে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَاْنُ وَلَكِنَّ الشَّيَاْطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاْسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزَلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَاْبِلَ هَاْرُوْتَ وَمَاْرُوْتَ وَمَا يُعَلِّمَاْنِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُوْلَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ»

‘‘সুলাইমান (আঃ) কুফরি করেননি, তবে শয়তানরাই কুফরি করেছে, তারা লোকদেরকে যাদু শেখাতো বাবেল শহরে বিশেষ করে হারূত-মারূত ব্যক্তিদ্বয়কে। (জিব্রীল ও মীকাঈল) ফিরিশ্তাদ্বয়ের উপর কোন যাদু অবতীর্ণ করা হয়নি (যা ইহুদিরা ধারণা করতো)। তবে উক্ত ব্যক্তিদ্বয় কাউকে যাদু শিক্ষা দিতো না যতক্ষণ না তারা বলতো, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ মাত্র, অতএব তোমরা (যাদু শিখে) কুফরী করো না।

 (সূরাহ বাকারাহ : ১০২)

যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে, কারো ব্যাপারে তা সত্যিকারভাবে প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে শাস্তিস্বরূপ হত্যা করা। এ ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য রয়েছে।

জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

حَدُّ السَّاْحِرِ ضَرْبَةٌ بِالسَّيْفِ.

‘‘যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তলোয়ারের কোপ তথা শিরশ্ছেদ’’।

(তিরমিযী ১৪৬০)

জুনদুব (রাঃ) শুধু এ কথা বলেই ক্ষান্ত হননি। বরং তিনি তা বাস্তবে কার্যকরী করেও দেখিয়েছেন।

আবূ ’উসমান নাহ্দী (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ عِنْدَ الْوَلِيْدِ رَجُلٌ يَلْعَبُ، فَذَبَحَ إِنْسَانًا وَأَبَانَ رَأْسَهُ، فَعَجِبْنَا فَأَعَادَ رَأْسَهُ، فَجَاءَ جُنْدُبٌ الْأَزْدِيْ فَقَتَلَهُ.

‘‘ইরাকে ওয়ালীদ্ বিন্ ’উক্ববার সম্মুখে জনৈক ব্যক্তি খেলা দেখাচ্ছিলো। সে জনৈক ব্যক্তির মাথা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। এতে আমরা খুব বিস্মিত হলে লোকটি কর্তিত মাথা খানি যথাস্থানে ফিরিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে জুনদুব (রাঃ) এসে তাকে হত্যা করেন’’। (বুখারী/আত্তা’রীখুল্ কাবীর : ২/২২২ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬)

তেমনিভাবে উম্মুল্ মু’মিনীন ’হাফ্সা (রাঃ) ও নিজ ক্রীতদাসীকে জাদুকরী প্রমাণিত হওয়ার পর হত্যা করেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

سَحَرَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ـ جَارِيَةٌ لَهَا، فَأَقَرَّتْ بِالسِّحْرِ وَأَخْرَجَتْهُ، فَقَتَلَتْهَا، فَبَلَغَ ذَلِكَ عُثْمَانُ  فَغَضِبَ، فَأَتَاهُ اِبْنُ عُمَرَ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ـ فَقَالَ: جَارِيَتُهَا سَحَرَتْهَا، أَقَرَّتْ بِالسِّحْرِ وَأَخْرَجَتْهُ، قَالَ: فَكَفَّ عُثْمَانُ  قَالَ الرَّاوِيْ: وَكَأَنَّهُ إِنَّمَا كَانَ غَضَبُهُ لِقَتْلِهَا إِيَّاهَا بِغَيْرِ أَمْرِهِ.

‘‘হাফ্সা বিন্ত ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) কে তাঁর এক ক্রীতদাসী যাদু করে। এমনকি সে ব্যাপারটির স্বীকারোক্তিও করে এবং যাদুর বস্ত্তটি উঠিয়ে ফেলে দেয়। এতদ্ কারণে ’হাফ্সা (রাঃ) ক্রীতদাসীটিকে হত্যা করেন। সংবাদটি ’উস্মান (রাঃ) এর নিকট পৌঁছুলে তিনি খুব রাগান্বিত হন। অতঃপর ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) তাঁকে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললে তিনি এ ব্যাপারে চুপ হয়ে যান তথা তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। বর্ণনাকারী বলেন: ’উসমান (রাঃ) এর অনুমতি না নিয়ে ক্রীতদাসীটিকে হত্যা করার কারণেই তিনি এতো রাগান্বিত হন’’।

                                   (‘আব্দুর রায্যাক, হাদীস ১৮৭৪৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬)

অনুরূপভাবে ’উমর (রাঃ) ও তাঁর খিলাফতকালে সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করার আদেশ জারি করেন।

বাজালা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَتَبَ عُمَرُ بْنُ الْـخَطَّابِ  أَنِ اقْتُلُوْا كُلَّ سَاحِرٍ وَسَاحِرَةٍ، قَالَ الرَّاوِيْ: فَقَتَلْنَا ثَلَاثَ سَوَاحِرَ.

’উমর (রাঃ) নিজ খিলাফতকালে এ আদেশ জারি করে চিঠি পাঠান যে, তোমরা সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করো। বর্ণনাকারী বলেন: অতঃপর আমরা তিনজন মহিলা যাদুকরকে হত্যা করি’’।

(আবূ দাউদ ৩০৪৩ বায়হাকী : ৮/১৩৬ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৮৯৮২, ৩২৬৫২ আব্দুর রায্যাক, হাদীস ৯৯৭২; আহমাদ ১৬৫৭; আবূ ইয়া’লা ৮৬০, ৮৬১)

’উমর (রাঃ) এর খিলাফতকালে উক্ত আদেশের ব্যাপারে কেউ কোন বিরোধিতা দেখাননি বিধায় উক্ত ব্যাপারে সবার ঐকমত্য রয়েছে বলে প্রমাণিত হলো।

গ্রন্থঃ হারাম ও কবিরা গুনাহ
লেখক/সংকলকঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী